Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Saurav Chordia

সৌরভের সৃষ্টি সঙ্গী রাফালের

গর্বে আত্মহারা সৌরভ। যাঁর নিজের জীবনের স্বপ্নও ছিল পাইলট হওয়ার। কিন্তু পারেননি চোখের সমস্যার জন্যে। আজ সেই চোখ আর কুশলী হাতের মেলবন্ধনেই রাফাল বিমানের সঙ্গে জুড়ে গেল তাঁর নাম।

সৌরভ চোরদিয়া

সৌরভ চোরদিয়া

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

পাঁচটি রাফাল জেট অম্বালার মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল অসমের চিরাং জেলার বাসুগাঁওয়ে চোরদিয়া পরিবার।

কোথায় ফ্রান্স, কোথায় অম্বালা, আর কোথায় বাসুগাঁও। কিন্তু পাঁচ পাইলটের জি-স্যুটের ব্যাজ এক সুতোয় বাঁধল তিনটি জায়গাকে। রাফালের প্রথম যুদ্ধবিমানটি ভারতে উড়িয়ে আনছেন ১৭ গোল্ডেন অ্যারোজ স্কোয়াড্রনের কমান্ডিং অফিসার ও অন্য বাছাই পাইলটরা। সেই গোল্ডেন অ্যারোজ স্কোয়াড্রনের জি-স্যুটের জন্যই সৌরভ দু’টি প্রতীক তৈরি করেছেন। অসমের ২২ বছরের যুবকের তৈরি সেই প্রতীক বুকে নিয়েই ওই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসাররা দেশের মাটি ছুঁলেন।

তাই গর্বে আত্মহারা সৌরভ। যাঁর নিজের জীবনের স্বপ্নও ছিল পাইলট হওয়ার। কিন্তু পারেননি চোখের সমস্যার জন্যে। আজ সেই চোখ আর কুশলী হাতের মেলবন্ধনেই রাফাল বিমানের সঙ্গে জুড়ে গেল তাঁর নাম।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের অবসান, প্রয়াত সোমেন মিত্র

আরও পড়ুন: চুক্তি-কাঁটা নিয়েই ভারতের মাটি ছুঁল রাফাল

ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার আর্ট আর অ্যাকশন সিনেমার ভক্ত সৌরভের মনে লোগো ও ব্যাজ ডিজাইন করার নেশা তৈরি করে দেন অবশ্য টম ক্রুজ। ক্রুজের টপ গান ছবিতে পাইলটের পোশাক দেখেই পোশাকের ব্যাজের নকশা তৈরি শুরু করেন সৌরভ।

বাসুগাঁওয়ের বাড়িতে আজ ছিল সাংবাদিকদের ভিড়। সৌরভ জানান, অনেকগুলো নকশা বানিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত দু’টো ব্যাজ ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নিয়েছে। আগেও বায়ুসেনার জন্য ডিজাইন তৈরি করেছিল সৌরভ। ‘সূর্য কিরণ’ অ্যারোব্যাটিক দল ও ‘তেজস স্কোয়াড্রন’-এর জন্যে।

অম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নামল রাফাল। বুধবার। ছবি: বায়ুসেনা

কতটা কঠিন ছিল রাফাল চালকদের জি-স্যুটের জন্য প্রতীক তথা লোগে তৈরির কাজ? সৌরভ বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল বিমানবাহিনীর নিজস্ব প্রতীকের মান অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। ওই স্কোয়াড্রনের প্রতীক রাখতে হবে। আবার রাফালকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই সপ্তাহখানেক নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করেছি।

এক নজরে রাফাল

• চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। স্থল, সমুদ্র, আকাশ— সর্বত্র আঘাত করতে পারে।
• ওমনি রোল (যুদ্ধে সব রকম কাজে ব্যবহৃত) যুদ্ধবিমান
• যে কোনও সময় যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে (গেম চেঞ্জার)।
• দু’টি ইঞ্জিন। পরমাণু অস্ত্র-সহ সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
• সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২২২ কিলোমিটার।
• ডগফাইটে (আকাশে মুখোমুখি যুদ্ধে) ৫০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় উঠতে পারে।
• রয়েছে মাল্টি-ডিরেকশনাল রেডার সিস্টেম, অ্যাডভান্স রেডার ওয়ার্নিং রিসিভার সিস্টেম। শত্রুর বিপদসঙ্কুল রেডিয়ো সিগন্যাল চিহ্নিত করতে সক্ষম।
• শত্রুর আকাশসীমায় না-ঢুকেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের ক্ষমতা।
• দৃষ্টিগোচর নয় এমন ১০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে ‘মাইকা’ এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে সক্ষম।
• আকাশ থেকে ভূমি দূরপাল্লার স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে রাখা ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। রয়েছে জাহাজ বিধ্বংসী এএম-৩৯ এক্সোসেট ক্ষেপণাস্ত্রও।
• আকাশ থেকে ভূমি ৭০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘হ্যামার’ বসানো হবে। এক সঙ্গে একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে ৩৩০ কিলোগ্রামের এই ‘হাতুড়ি’। গুঁড়িয়ে দিতে পারবে কংক্রিটের বাঙ্কারও।

সৌরভ নয়ডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক হওয়ার পরে দিল্লিতে একটি ‘থ্রিডি গেমিং’ সংস্থায় কাজ করেছেন। সেই সময় থেকেই বায়ুসেনার নজরে পড়ে তার কাজ। শুরু হয় বায়ুসেনার জন্য বিভিন্ন লোগো, প্যাচ, প্রতীকের নকশা বানানো। বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমানের অ্যাভিয়েশন আর্ট, গ্রাফিক্স, থ্রি-ডি মডেল তৈরি করেছেন তিনি।

সৌরভের তৈরি রাফাল পাইলটদের পোশাকের ব্যাজ। —নিজস্ব চিত্র

কিন্তু রাফাল পাইলটদের জি-স্যুটের ব্যাজ তৈরি করা তাঁর জীবনের সেরা সম্মান বলেই মনে করছেন সৌরভ। তাঁর কথায়, বায়ুসেনায় সরাসরি যোগ দিতে পারিনি। কিন্তু বাহিনীর ইতিহাসের শরিক তো হতে পারলাম!”

অন্য বিষয়গুলি:

Saurav Chordia Rafale Assam IAF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy