Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Satyapal Malik

‘চুপ রহো...’, পুলওয়ামা নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালকে এমনই নির্দেশ দেন মোদী

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়।

Picture of PM Narendra Modi and Satyapal Malik.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সত্যপাল মালিক। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৮
Share: Save:

‘তুম আভি চুপ রহো। ইয়ে কুছ অউর চিজ় হ্যায়।’

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামায় সিআরপি-র কনভয়ে হামলার পরে জম্মু-কাশ্মীরের তদানীন্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে নাকি এমনই ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! দাবি খোদ সত্যপাল মালিকের। বিজেপি নেতা এবং মোদী জমানায় চারটি রাজ্যে রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করা সত্যপাল সদ্য এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন, এই হামলার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘গাফিলতি’ দায়ী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধরাখতে বলেন।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়। মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব তা নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের ঢাক পিটিয়েছিলেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে সত্যপাল এ নিয়ে মুখ খুলে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলার পরেই তিনি বুঝে

গিয়েছিলেন, ব্যাপারটা পাকিস্তানের দিকে চলে যাবে। ‘‘কী ভাবে হামলা হল, তার শিকড়ে না গিয়ে একে অন্য কিছুর জন্য কাজে লাগানো হয়েছে।”

সত্যপালের এই ‘সত্যকথন’-এ স্বাভাবিক ভাবেই মোদী সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রবল অস্বস্তিতে। বিরোধীরা খোদ প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি দাবি করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা, বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রী বা বিজেপির শীর্ষ নেতা মুখ খোলেননি। একমাত্র বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অভিযোগ তুলেছেন, সত্যপাল এক-এক সময় এক-এক রকম কথা বলেন। কংগ্রেসের দাবি, সত্যপাল এখনও বিজেপি নেতা। হয় বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক, না হলে সত্যপালের বক্তব্যের জবাব দিক।

সত্যপাল পুলওয়ামার হামলার সময় তো বটেই, জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ও রাজ্যের তকমা খোয়ানোর সময়ও সেখানকার রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি হামলার সময় মোদী ছিলেন করবেট ন্যাশনাল পার্কে। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের জন্য শুটিং করছিলেন। সেখানে ফোন ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শুটিং সেরে বেরিয়ে একটি ধাবা থেকে তাঁকে ফোন করেন। সে সময়ই সত্যপাল নাকি তাঁকে বলেন, কনভয়ে নিরাপত্তার খামতি ছিল। সিআরপিএফ বিমানে করে জওয়ানদের নিয়ে যেতে চাইলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তা খারিজ করে দেয়। ৩০০ কেজি আরডিএক্স ভর্তি গাড়ি ১০-১২ দিন ধরে কাশ্মীরে ঘুরে বেড়ালেও তা ধরা পড়েনি। সেই গাড়িই সিআরপি জওয়ানদের বাসে এসে ধাক্কা মারে। কনভয় যাওয়ার সময় হাইওয়েতে ওঠার ছোট রাস্তাগুলোও বন্ধ করা হয়নি। অথচ জইশ-হামলার আশঙ্কা ছিল। এই ‘গাফিলতি’-র কথাই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ইয়ে কুছ অউর চিজ় হ্যায়।’ সত্যপালের সহপাঠী, অধুনা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন বলে তাঁর দাবি।

আজ কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, এই ‘কুছ অউর চিজ়’ বা অন্য ব্যাপারটা কী? কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে থেকে সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা এ নিয়ে সরকারের জবাব চেয়েছেন। কংগ্রেসের জনসংযোগ দফতরের তিন নেতা-নেত্রী, জয়রাম রমেশ, পবন খেরা, সুপ্রিয়া শ্রীনতে এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। পবনের বক্তব্য, “সত্যপাল কিছু বলতে গিয়ে থেমে গিয়েছেন। সেই নীরবতাও অন্য প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।” উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, সত্যপাল ‘বিস্ফোরক সত্য’ প্রকাশ্যে এনেছেন। আরজেডি-র বক্তব্য, ‘নকল ও জুমলাবাজ সঙ্ঘী জাতীয়তাবাদীদের আসল চেহারা সামনে আসছে। লোকসভা ভোটের আগে কেন পুলওয়ামার হামলা হয়েছিল, তা সবাই বুঝতে পারছেন।”

বিরোধী শিবির এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জবাব চাইলেও তিনি বা অন্য কোনও মন্ত্রী মুখ খোলেননি। জয়রাম বলেন, “চিনের জমি দখল, আদানি-কাণ্ডের মতো প্রধানমন্ত্রী এ নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটে থাকবেন। এখন গোটা বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হবে। অন্য কোনও দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এর জবাব দিতে হবে।” কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রথম থেকেই পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা নিয়ে সংশয় ছিল। তার তদন্তে কী উঠে এল, তা গত চার বছরেও জানা যায়নি।

মোদী সরকার সত্যপালকে প্রথমে বিহার, তার পরে জম্মু-কাশ্মীর, গোয়া ও মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে সত্যপাল বলেছেন, ‘‘উনি কাশ্মীর সম্পর্কে ভুল জানেন। নিজে যা জানেন, তা নিয়েই আনন্দে থাকেন।’’ বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের অভিযোগ, সত্যপালই ২০১৮-য় মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। উনি নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছেন। কংগ্রেসের প্রশ্ন, সত্যপাল তো এখনও বিজেপির সদস্য। বিজেপি তাঁকে বহিষ্কার করছে না কেন? প্রধানমন্ত্রীর চাটুকার চিত্র পরিচালক-অভিনেত্রীদের জন্য এক্স, ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ রদের সময় রাজ্যপাল ছিলেন, তিনি দিল্লিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন! তাঁর জন্য মাত্র একজন দেহরক্ষী রাখা হয়েছে! কী উদ্দেশ্য এর, প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।

অন্য বিষয়গুলি:

Satyapal Malik PM Narendra Modi Pulwama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy