রাজ্যপালের সঙ্গে শশিকলা
এক জনের পক্ষে ক্রমে দানা বাঁধছে জনমত। অন্য জনের দিকে এখনও রয়েছেন অধিকাংশ বিধায়ক। তামিলনাড়ুর টানটান রাজনৈতিক নাটকে যুযুধান দুই শিবিরই আজ দ্বারস্থ হল রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওয়ের। পনীরসেলভম সেখানে বলে এলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে তাড়িয়ে ছে়ড়েছেন শশিকলা। ‘আম্মা’ জয়ললিতার স্মৃতিসৌধে তাঁর ‘আত্মা’-র নির্দেশ নিয়ে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন পনীর। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার আগে আম্মার স্মৃতি উস্কে দিতে স্মৃতিসৌধে গেলেন শশিকলাও।
পনীরসেলভমের আকস্মিক বিদ্রোহের পর থেকে প্রতি মুহূর্তেই নয়া মোড় নিয়েছে দ্রাবিড়ভূমির চিত্রনাট্য। কিন্তু এত দিন চেন্নাইয়ে অনুপস্থিত ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, রাজ্যপাল রাও। আজ তিনি চেন্নাই পৌঁছনোর পরেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় শশিকলা ও পনীর শিবিরে। তার আগেই অবশ্য দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা জি মধুসূদন পনীর শিবিরে যোগ দেওয়ায় বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর পাল্লা কিছুটা ভারি হয়েছে।
রাজভবন সূত্রে খবর, শশিকলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-মামলার গুরুত্ব খতিয়ে দেখার জন্যই সময় নিয়েছিলেন একাধারে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল রাও। প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজি তাঁকে জানান, দুর্নীতি-মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার জন্য অন্তত সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। কারণ তার মধ্যেই ওই মামলার রায় ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সংবিধান মেনেই আরও চার দিন অপেক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সোরাবজি। তার পরেই আজ চেন্নাই এসে দুই শিবিরের কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: ইনফোসিস চালানোর ঢঙে অখুশি প্রতিষ্ঠাতারা
অন্য দিকে পরশু পনীর যা করেছিলেন, আজ সন্ধ্যায় ঠিক তাই করলেন শশিকলা। মেরিনা সৈকতে আম্মার স্মৃতিসৌধে প্রার্থনা জানাতে হাজির হলেন ‘চিন্নাম্মা’। তার পরে সোজা রাজভবন। শশিকলা শিবির সূত্রের খবর, ১৩০ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি রাজ্যপালকে দিয়েছেন তিনি। দ্রুত সরকার গড়তে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। শশিকলা বলেন, ‘‘উনি দেরি করলে দিল্লি যাব।’’
পনীরসেলভম
রাজধানীতেও এ দিন চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে শশিকলা শিবির। লোকসভার ডেপুটি স্পিকার ও শশিকলা ঘনিষ্ঠ এডিএমকে নেতা থাম্বিদুরাই এ দিন দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে। শশিকলাকে দ্রুত শপথ নেওয়ার সুযোগ দিতে তাঁদের অনুরোধ করেন তিনি।
দিল্লির বিজেপি নেতাদের মতে, ইস্তফা দেওয়ার সময়ে শশিকলা-বিরোধী হাওয়া বিশেষ বুঝতে পারেননি পনীরসেলভম। কিন্তু জয়ললিতার ভাইঝি দীপা জয়কুমার ও প্রবীণ এডিএমকে নেতা পি এইচ পান্ডিয়ান শশিকলাকে আক্রমণ করার পরে হাওয়ার গতি বদলাতে শুরু করে। শশিকলার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন অভিনেতা কমল হাসন-সহ তামিল নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশও। তার পরেই ভোল বদলেছেন পনীরও। এখন তাঁর পক্ষে ক্রমশ জনমত প্রবল হচ্ছে। কিন্তু বিধায়কদের বড় অংশ এখনও শশিকলার হাতেই রয়েছেন। ফলে লড়াইটা কার্যত বিধায়কদের সংখ্যা বনাম জনমতের সংঘর্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ বাড়াচ্ছেন পনীর, পুলিশ কমিশনার অপসারিত
দুর্নীতি-মামলা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় শশিকলার বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জাল্লিকাট্টু নিয়ে আন্দোলনের সময়ে হিংসার পিছনে ছিলেন শশিকলার স্বামী এম নটরাজনই। পনীরসেলভমকে প্যাঁচে ফেলার জন্য তিনিই মান্নারগুড়ি এলাকার মাফিয়াদের দিয়ে গোলমাল করিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো।
এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘রাজ্য এখন রাজ্যপালের দিকে তাকিয়ে। তিনি হয়তো তাকিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। তা-ই অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।’’ জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বনাম জনমতের লড়াইয়ের ফয়সালা কোন দিকে যায়, অধীর আগ্রহে সব পক্ষই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy