Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আরও হামলা চাই, অল্পে তুষ্ট না সঙ্ঘ

নাল্পে সুখমস্তি! পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে পারস্পরিক উত্তেজনার পারদ যাতে না-চড়ে, পুরোদস্তুর সেনা সংঘাত যাতে শুরু না-হয়, সে জন্য সচেষ্ট নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

নাল্পে সুখমস্তি!

পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে পারস্পরিক উত্তেজনার পারদ যাতে না-চড়ে, পুরোদস্তুর সেনা সংঘাত যাতে শুরু না-হয়, সে জন্য সচেষ্ট নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফ। কিন্তু এত অল্পে মন ভরছে না এ-পারে সঙ্ঘ পরিবারের, ও-পারে পাকিস্তানি সেনার।

উগ্র জাতীয়তাবাদই সঙ্ঘ পরিবারের মূলধন। পঠানকোট ও উরির ঘটনা তাতে ধাক্কা দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল মোদী সরকারের যোগ্যতা নিয়েও। কিন্তু সার্জিক্যাল স্টাইলের সাফল্য সেই সব ব্যর্থতা ঢেকে দিয়েছে। দেশ জুড়ে এখন জাতীয়তাবাদের জোয়ার। তাতে ভর করেই পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের ভোটে ঝাঁপাতে চাইছে সঙ্ঘ এবং বিজেপি-র একাংশ। সুতরাং তাদের লক্ষ্য, এই আবেগ যত দিন সম্ভব চাঙ্গা করে রাখা। আর সেই দিকে তাকিয়েই তারা মোদীর উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। পঠানকোট-উরিতে হানার পরেই পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার জন্য চাপে পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর এখন বলা হচ্ছে, এই সুযোগে নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোমর একেবারে ভেঙে দেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে তারা আর মাথা তুলতে না পারে। সঙ্ঘ পরিবারের ওই অংশের মতে, সাহসভরে এই কাজটা করে ফেলা গেলে আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও পঞ্জাবের ভোটেও বিলক্ষণ সুবিধা পাবে বিজেপি।

পাকিস্তানে আবার বিপুল চাপে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। আগামী নভেম্বরে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। তার আগে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গত কাল ইসলামাবাদে পাক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সমালোচিত হয়েছেন রাহিল। এই অবস্থায় ভারতীয় কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই কলঙ্ক মুছতে তিনি পাল্টা আগ্রাসী পদক্ষেপ করতেই পারেন।

পাকিস্তানে সেনাপ্রধান বরাবরই ক্ষমতার একটি অন্যতম ভরকেন্দ্র। আর একটি ভরকেন্দ্র হল সে দেশের কট্টর মোল্লাতন্ত্র। তারাও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে। জামাত-উদ-দাওয়া জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথা হাফিজ সইদ গত কালই ভারতের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। হামলা চালাতে চাইছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-ও। এবং এদের কাউকেই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পাক সরকারের কার্যত নেই বলেই ধরে নেওয়া হয়। ফলে এই ত্রিমুখী চাপের জেরে শেষ পর্যন্ত পুরোদস্তুর যুদ্ধ না-হলেও ‌ভারতের ধাঁচে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক সেনার হামলার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না নয়াদিল্লি।

এই পরিস্থিতিতে কী করবে মোদী সরকার? প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বা সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ— সকলেই মনে করেন এখন যুদ্ধে যাওয়ার কোনও অর্থ হয় না। বরং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে যে প্রয়োজনে প্রত্যাঘাতে তারা সক্ষম। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।’’ কারণ এর আগেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা হয়েছে, কিন্তু তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। মোদী ঘটা করে সে কথা প্রকাশ্যে এনে দেশবাসীকে বার্তা দিয়েছেন। যাকে স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকেও কোনও বিরূপ স্বর শোনা যায়নি। বরং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই সংযত অপারেশন অনেক দেশেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। যাকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সমালোচনার ঝড় কাটিয়ে এখন স্বস্তির স্বর্গে বিচরণ করেছে মোদী সরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল করতে চাইছে না তারা। বিজেপি-রও মতে, দেশকে নিরাপত্তা দিতে নরেন্দ্র মোদী যে সক্ষম সেই বার্তা জনগণকে দেওয়া গিয়েছে। তাঁরা যে সেটা বিশ্বাস করেছেন, তা জনমানসের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে। একে মূলধন করেই আসন্ন ভোটে ভাল ফল করা সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান কি প্রত্যাঘাত করবে? এটা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে ইসলামাবাদ এখন ব্যাকফুটে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সবটাই নির্ভর করছে সে দেশের সেনাপ্রধানের উপরে। আঞ্চলিক সুস্থিতির তুলনায় অবসরের আগে কলঙ্কমোচনকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কি না সেটাই এখন দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

RSS Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy