সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন অক্টোবরের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরোক্ষে জাতগণনার উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘‘দেশে বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা চলছে।’’ এ বার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) সরাসরি জাতগণনার বিরোধিতা করল। মঙ্গলবার সঙ্ঘের তরফে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘‘জাতগণনা দেশে সামাজিক বৈষম্য আরও গভীর করবে।’’
মহারাষ্ট্র বিধানসভা এবং বিধান পরিষদের শাসকজোটের সদস্যেরা মঙ্গলবার নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে রাজ্য আইনসভায় বিজেপি এবং শিবসেনা (শিন্ডে)-র উদ্দেশে সঙ্ঘের বিদর্ভ শাখার প্রধান তথা প্রবীণ প্রচারক শ্রীধর ঘঢ়গে জাতগণনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা এতে কোনও লাভ দেখছি না। বরং সামাজিক বৈষম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ তবে জাতগণনায় কিছু শ্রেণির সুবিধা হবে বলে যে দাবি উঠেছে, সে প্রসঙ্গে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আরএসএস প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই সভায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং বিজেপি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস হাজির ছিলেন না। ছিলেন না, আরএসএস প্রধান (সরসঙ্ঘচালক) মোহন ভাগবত এবং সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবোলে। আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার বা তাঁর নেতৃত্বাধীন এনসিপি গোষ্ঠীর বিধায়ক সঙ্ঘ-সদরে যাননি মঙ্গলবার।
আরও পড়ুন:
গত নভেম্বরে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সরকারি চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। বিহারে জেডি(ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার দ্রুত শুরু করে জাতগণনা। গত ৬ জুন নীতীশ সরকার জাতগণনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এর পর বিহার সরকারের সেই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল পটনা হাই কোর্টে।
আরও পড়ুন:
আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, নীতীশ সরকারের এই পদক্ষেপ ‘বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক’। এই পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের (সমতা এবং সাম্যের অধিকার) পরিপন্থী বলে অভিযোগ ছিল আবেদনকারীদের। তাঁদের দাবি ছিল, জাতগণনার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চাকরিতে ওবিসির জন্য আসন বাড়লে অসংরক্ষিত (জেনারেল) আসন আরও কমার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে মেধার উপর আঘাত আসবে বলে অভিযোগ জাতগণনার বিরোধী জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীদের। কিন্তু পটনা হাই কোর্ট জাতগণনায় ছাড়পত্র দেওয়ায় গত ২ অক্টোবর প্রথম রিপোর্ট পেশ করেছিল বিহার সরকার।
এর পর মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ালেও স্থগিতাদেশ আদায় করতে ব্যর্থ হয় জাতগণনার বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে মঙ্গলবার বিহার বিধানসভায় জাতসমীক্ষার দ্বিতীয় রিপোর্ট প্রকাশ করে নীতীশ সরকার। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে জাতভিত্তিক সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করার বিল পাশ করানো হয় বিহার বিধানসভায়। সাম্প্রতিক, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতারা জাতগণনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে হিন্দি বলয়ে দলের কোনও লাভ হয়নি বলেই ফল বলছে।