ছবি: সংগৃহীত।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ প্রশ্নে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হল স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। সপ্তাহ দেড়েক আগে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা এক ধাক্কায় আরও পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজ আরএসএসের সংশ্লিষ্ট সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ তাদের এক বৈঠক থেকে দাবি তুলল, জলের দরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি সংস্থার হাতে বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা রদ করতে হবে। তাদের মতে, মোদী সরকারের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত ‘দেশের স্বার্থ-বিরোধী’। এর পিছনে বেশ কিছু আমলা ও সরকারি-তন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ‘ষড়যন্ত্র’ আছে। কিছু শিল্প সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে দুর্নীতির চেষ্টাও রয়েছে এর মধ্যে।
মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের উদ্যোগে যখন আসিয়ান গোষ্ঠী-সহ মোট ১৬টি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার তোড়জোড় চলছিল, তখন আরএসএসের এই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চেরই তীব্র আপত্তি ছিল। তাদের চাপেই মোদীকে পিছু হটতে হয় বলে দাবি করেছিল সঙ্ঘ। বাজেটের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পদ থেকে নৃপেন্দ্র মিশ্রের ইস্তফার আগে এরাই তাঁর বিরুদ্ধে সরব ছিল। এ বারে নীতি আয়োগ অনেক আগেই ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বাছাই করে রেখেছে বিলগ্নিকরণের জন্য। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বাম-সহ একাধিক বিরোধী দল মোদী সরকারের বিলগ্নি নীতির প্রতিবাদে সরব হয়েছে। এ ভাবে সরকারি সংস্থাকে দুর্বল করা ও লাভজনক সংস্থাকে বেচে দেওয়া নিয়ে মোদীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে কংগ্রেসও। আজও বিজেপি থেকে কংগ্রেসে আসা নেতা উদিত রাজের নেতৃত্বে মোদী সরকারের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দিল্লির রামলীলায় সভা হয়েছে। রাহুল গাঁধী সেই সভাকে সমর্থন করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে আজ সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিলগ্নিকরণের বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছে সঙ্ঘের সংগঠন। হরিদ্বারের বৈঠকে প্রস্তাব গ্রহণের পরে সংগঠনের নেতা অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ শুধু হঠকারী ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়, দেশের স্বার্থের পরিপন্থীও। এটি শুধু ভারতের জনতার অধিকারকে অস্বীকার করা নয়, বরং এর ক্রেতাদের অসাধু সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার শামিল।’’ শুধু অভিযোগ করা নয়, সংস্থা ধরে ধরে কী বিকল্প পদক্ষেপ সরকারের করা উচিত, তা-ও আজ বলে দিয়েছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন: জেএনইউয়ের আন্দোলন দমন নিয়ে শাসককে হুঁশিয়ারি নির্মলার স্বামীর
স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের মতে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল) লাভ করছে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিশ্বের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এই ব্লু-চিপ সংস্থাটি। যদি সরকার এই সংস্থায় তাদের অংশিদারিত্ব কমাতে চায়, তা হলে শেয়ার বাজারে তাকে খাটানো হোক। মঞ্চের এক নেতার কথায়, ‘‘শোনা যাচ্ছে, এই সংস্থার উপরে সৌদি অ্যারামকোর নজর আছে। এটি বিপজ্জনক!’’ তাদের বক্তব্য, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রেও বিলগ্নিকরণ কোনও সমাধান নয়। সংস্থার পুনর্গঠন ও পেশাদার পরিচালনাই তাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। মঞ্চের বক্তব্য, এয়ার ইন্ডিয়ার লোকসানের বেশির ভাগটাই দেনার জন্য। অসৎ উদ্দেশ্যে এই সব দেনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ঠিক মতো পুনর্গঠন করলে সংস্থাটি লাভের মুখ দেখবে বলেও মনে করে মঞ্চ।
তালিকার পাঁচ
• বিপিসিএল
• শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া
• কন্টেনার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া
• টিহরি জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম
• নিপকো
শিপিং কর্পোরেশন, কন্টেনার কর্পোরেশনের বিলগ্নির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মঞ্চের বক্তব্য, পরিকাঠামো ও বৃদ্ধির আয় আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এই সংস্থাগুলি সহায়ক হবে। সঙ্ঘের সংগঠনের বক্তব্য, যখন কর আদায়ের লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না, তখন এ ভাবে এককালীন টাকা জোগাড় করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের অভিযোগ, এ ভাবে বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের পিছনে কিছু পরামর্শদাতার ষড়যন্ত্র ও আমলাদের উপর বড় শিল্পমহলের প্রভাব আছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিয়ে নীতি আয়োগের রিপোর্ট খারিজ করতে হবে। সব নতুন লোকদের দিয়ে নতুন রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এ যাবৎ করা বিলগ্নিকরণের ব্যাপারে শ্বেতপত্র জারি করতে হবে। দুর্নীতির সম্ভাবনা রুখতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে মঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy