Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সাধুদের ক্ষোভই চিন্তা
Ram Mandir

দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে যাওয়ার হুমকি সাধুদের, রামের ‘জমি’ সামলাতে অযোধ্যায় কৃষ্ণ

মন্দিরের জমি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় একই সঙ্গে মোদী সরকার, যোগী সরকার ও সঙ্ঘ অস্বস্তিতে পড়েছে।

ফাইল চিত্র

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ০৬:১৫
Share: Save:

অযোধ্যার পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার খোদ সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব মাঠে নামল। কারণ, রামমন্দিরের দানের টাকাতেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিরের মুখে আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত শ্রীরামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের দুই সদস্য। খোদ মোদী সরকার তাঁদের ট্রাস্টে মনোনীত করেছে। বিরোধীরা সরব হয়েছে। তার থেকেও দুশ্চিন্তার, সাধুসন্তরাই তদন্তের দাবি তুলেছেন। আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এমতাবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় আরএসএস-এর সহ-সরকার্যবাহ বা সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল অযোধ্যায় যান। সূত্রের খবর, অযোধ্যায় পৌঁছেই তিনি করসেবকপুরমে ট্রাস্টের সচিব চম্পত রায়, ট্রাস্টের সদস্য অনিল শর্মা ও অন্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। তাঁদের থেকে মন্দির ট্রাস্টের সমস্ত জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত রিপোর্ট, দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যাতেই অযোধ্যা ছাড়েন তিনি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বৈঠকে সঙ্ঘের তরফে কৃষ্ণ গোপাল নির্দেশ দেন, মন্দিরের জন্য জমি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে পাল্টা প্রচারে নামতে হবে। ক্ষুব্ধ সাধুসন্তদের বোঝাতে হবে।

অযোধ্যায় দুই ব্যবসায়ীর ২ কোটি টাকায় জমি কিনে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা ১৮.৫ কোটি টাকায় ট্রাস্টকে বেচে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় মন্দিরের জন্য ভক্তদের দানের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। আগামী বছরেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। এমনিতেই যোগী আদিত্যনাথের সরকারের দিকে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ। নির্বাচনের আগে অন্তত রামমন্দিরের ভিত তৈরি করে একতলার কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। তার আগে রামমন্দিরের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠায় বিরোধীরা হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে।

মন্দিরের জমি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় একই সঙ্গে মোদী সরকার, যোগী সরকার ও সঙ্ঘ অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ মোদী সরকারই অযোধ্যার ট্রাস্ট গঠন করে ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনকে মনোনীত করেছে। ট্রাস্টে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আমলারাও রয়েছেন। সর্বোপরি ট্রাস্টের সচিব চম্পত রায় ও সরকার মনোনীত অনিল মিশ্র—দু’জনেই আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, সব দিক দেখেই তড়িঘড়ি আরএসএস-এর তরফে কৃষ্ণ গোপালকে অযোধ্যায় পাঠানো হয়েছিল।

সঙ্ঘের নির্দেশ পেয়েই শুক্রবার থেকে ট্রাস্টের সচিব চম্পত রায় অযোধ্যার সাধুসমাজের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে অযোধ্যায় জেলাশাসক, পদাধিকার বলে ট্রাস্টের সদস্য অনুজ ঝা-ও ছিলেন বলে সূত্রের খবর। ট্রাস্টের আর এক সদস্য, নির্মোহী আখাড়ার মহন্ত দিনেন্দ্র দাসও সাধুদের বোঝাতে উদ্যোগী হয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, এমনিতেই ট্রাস্টে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে অযোধ্যার সাধুসন্তদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এ বার মন্দিরের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠায় নতুন করে সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রামমন্দির তৈরির জন্য ৩,২০০ কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ হয়েছে। ট্রাস্টের অধ্যক্ষ মহন্ত নৃত্যগোপাল দাসের প্রতিনিধি কমলনয়ন দাস, রামজন্মভূমির প্রধান পুরোহিত মহন্ত সত্যেন্দ্র দাস, হনুমানগঢ়ীর পুরোহিত মহন্ত রাজু দাস থেকে নির্বাণী আখাড়ার মহন্ত ধরম দাসদের যুক্তি, ভক্তরা মন্দির তৈরি, সাধুসেবার জন্য টাকা দিয়েছেন। তা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠলে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রও মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, তাঁর শুধু মন্দির তৈরির দায়িত্ব।

সাধুসন্তদের মূল ক্ষোভ ট্রাস্টের সচিব চম্পত রায় ও আর এক সদস্য অনিল মিশ্রর প্রতি। চম্পত আরএসএস-এর দীর্ঘদিনের প্রচারক, ১৯৯১ থেকে অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তা। মিশ্র অযোধ্যায় হোমিয়োপ্যাথির চিকিৎসক, আরএসএসের প্রান্ত কার্যবাহ। তিনি ও অযোধ্যার মেয়র, বিজেপি নেতা হৃষীকেশ উপাধ্যায় ২ কোটি টাকায় জমি কেনা, তার পর নয় গুণ বেশি দামে ট্রাস্টকে বেচা—দু’টি চুক্তিরই সাক্ষী। সমাজবাদী পার্টির অভিযোগ, উপাধ্যায়ের ভাইপো দীপ নারায়ণও মন্দিরের আশেপাশে জমি সস্তায় কিনে ট্রাস্টকে অনেক বেশি দামে বেচে দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহ অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

অন্য বিষয়গুলি:

RSS Ram Mandir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy