মোদী ও ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
সঙ্ঘের অবস্থান স্পষ্ট— গোমাতাকে হতে হবে খাঁটি নিরামিষাশী। তবেই গোদুগ্ধ পবিত্র থাকবে। গোমাতা যদি নিজেই আমিষাশী হয়ে যায়, তা হলে তার দুধও আর নিরামিষ রইল না!
আমিষ-নিরামিষ দুধের এই বিবাদেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশের গরুর দুধ এ দেশে ঢোকার ছাড়পত্র পাচ্ছে না। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তির সামনেও প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে।
সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যজ্ঞে গরুর দুধ আহুতি দিতে হয়। পুজোতেও গরুর দুধ কাজে লাগে। হিন্দুদের কাছে গরুর দুধ নিরামিষ। কিন্তু ট্রাম্পের আমেরিকায় গরুকে আমিষ খাওয়ানো হয়। অন্য প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, রক্তমাংস খাইয়ে গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হয়। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের যুক্তি, গরু আমিষ খেলে তার দুধও আমিষ হয়ে যায়। আমিষ দুধ পুজো বা যজ্ঞে কাজে লাগবে না। নিরামিষভোজী হিন্দুরাও আমিষ গোদুগ্ধ মুখে তুলতে পারবেন না।
সঙ্ঘ পরিবারের এই ‘বাণী’ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মোদী সরকার আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে, এ দেশে আমিষভোজী গরুর দুধ বা অন্যান্য ডেয়ারি পণ্য পাঠানো চলবে না।
আমেরিকা অনেক দিন ধরেই চাইছে, তাদের দুধ ও ডেয়ারি পণ্যের জন্য ভারত তার বাজার খুলে দিক। কিন্তু মোদী সরকার আমিষাশী গরু নিয়ে আপত্তি তোলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মোদী সরকারের বাণিজ্য চুক্তি হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন। এ দিকে ‘ফার্স্ট লেডি’ মেলানিয়াকে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতে আসার আর মাত্র দশ দিন বাকি। এখনও আমিষ-নিরামিষ গরুর দুধের বিবাদ মেটেনি।
সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চর সাফ কথা, আমেরিকাকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে, এ দেশে যে সব গরুর দুধ পাঠানো হবে, তাদের শুধু নিরামিষ খাবারই খাওয়ানো হয়। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগে, এমন কোনও পণ্যের জন্য দেশের বাজার খুলে দেওয়ার বিরোধিতা করব আমরা।’’ ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের পাশাপাশি দেশের চাষি ও পশুপালকদের রুটিরুজির প্রশ্নও এর সঙ্গে জড়িত বলে তাঁর যুক্তি।
বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘হাউডি মোদী’-র সময়ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি হয়েছিল। তখনও ভারত শর্ত রাখে, আমেরিকার আমিষাশী গরুর দুধ বা সেই দুধ থেকে তৈরি কোনও কিছুই ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ‘হাউডি মোদী’-র সময়েও তাই বাণিজ্য চুক্তি সই হয়নি। অশ্বিনী বলেন, ‘‘আমেরিকা চাইছে ভারত এই শর্ত তুলে নিক। কিন্তু আমেরিকাকে বুঝতে হবে, ওদের এই দাবি শুধু অন্যায্য নয়। ধর্মীয় কারণে এই দাবি মেনে নেওয়া যায় না।’’
দুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। মুরগি উৎপাদনে চতুর্থ। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরেই। বিবাদ বেঁধেছে ‘মুরগির ঠ্যাং’ নিয়েও। ভারত আমেরিকা থেকে মুরগির ‘লেগ পিস’ আমদানি করে ঠিকই। কিন্তু ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে। ট্রাম্প চাইছেন, ওই শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হোক। কারণ মার্কিনরা আবার মুরগির ঠ্যাং পছন্দ করেন না। অশ্বিনীর বক্তব্য, ‘‘ওদের জন্য মুরগির ঠ্যাং আবর্জনা। কিন্তু আমাদের পোলট্রি চাষিদের রক্ষা করতেই ওই শুল্ক বসানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy