ড্যানিয়েল রসের পাশাপাশি যাঁর নাম উল্লেখযোগ্য, তিনি হলেন আর্চিব্যাল্ড ব্লেয়ার। তিনিও ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক জরিপকর্মী। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নামে পোর্ট ব্লেয়ারের নামকরণ করা হয়। তার আগে এর নাম ছিল পোর্ট কর্নওয়ালিস। কিন্তু এই ভূখণ্ডের থেকেও বেশি বাসযোগ্য ছিল রস আইল্যান্ড। কারণ সেখানে পরিস্রুত জল সহজলভ্য ছিল।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ছিল নৈসর্গিক দৃশ্য ও প্রতিকূলতার সহাবস্থানের আদর্শ উদাহরণ। চরম প্রতিকূলতার জন্য এখানেই দ্বীপান্তরের জায়গা কেন্দ্র করা হবে বলে ঠিক করেন ব্রিটিশ শাসকরা। আন্দামানে ব্রিটিশদের পা পড়ার প্রায় ষাট বছর পরে সিপাহি বিদ্রোহের পরে বন্দিদের আনা হয় এখানে। ৭৭৩ জন বন্দিকে নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছন জেলর জেমস প্যাটারসন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ।
তার চারদিন পরে কলকাতা থেকে আন্দামানে পা রাখেন আরও ২০০ বন্দি। তাঁরা ছিলেন মূলত সিপাহি বিদ্রোহ এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিবাদীরা। জেলর প্যাচারসেনর নির্দেশে তাঁদের পাঠানো হল রস দ্বীপে। নির্মম অত্যাচারের মধ্যে তাঁদের লাগানো হল বন কেটে বসতি তৈরির কাজে। নিজেদের থাকার ছাউনি থেকে সাহেবদের বাংলো, তৈরি হতে লাগল অনাহারী বন্দিদের শ্রমে।
০.৩ বর্গকিমি আয়তনের এই দ্বীপ তখন ঘন বনে ঢাকা। জঙ্গল কেটে দ্বীপকে বাসযোগ্য করার পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে হয়েছিল বন্দিদের। তখন ব্রিটিশ সাহেবরা ছিলেন জাহাজে। তাঁরা ডাঙায় পা রাখেননি।শাসনের কেন্দ্রবিন্দুকে মনের মতো করে সাজিয়েছিল ব্রিটিশরা। বিলাসবহুল বাংলো, বড় গির্জা, বলরুম, বেকারি থেকে শুরু করে সমাধিস্থান। জীবনযাপনের সব প্রয়োজনকে এখানে বন্দিদের দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকরা ।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের একটি নথি থেকে জানা যায়, দ্বীপান্তরে থাকা বন্দিদের যথেচ্ছ মৃত্যু হত ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া এবং পেটের অসুখে। সে সময় তাঁদের উপর কুইনাইন ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতেন শাসকরা। সে সময় দশ হাজার বন্দিকে জোর করে কুইনাইন খাওয়ানো হয়েছিল বলে নথিতে দাবি। অভিযোগ, এর ফলে তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ অবধি এই ‘কালাপানি’ বন্দিশালা পাহারার দায়িত্বে ছিলেন ২৪ জন চিফ কমিশনার।
১৯৪১ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি পোর্টব্লেয়ার বা রস আইল্যান্ডের ব্রিটিশ উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে জাপানিরা। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ অবধি এই দ্বীপ ছিল জাপানিদের অধিকারে। সে সময় ১৯৪৩-এর ডিসেম্বরে রস আইল্যান্ডে একদিন ছিলেন নেতাজি সুভাষচতন্দ্র বসু। পোর্ট ব্লেয়ারে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনও করেন ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy