মা রাধিকার সঙ্গে রাজা। —ফাইল চিত্র।
দলিত পরিবারের সন্তান হওয়ার জেরেই অন্যায় ভাবে তাঁকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়, এই দুঃখেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বছর পাঁচেক আগে আত্মহত্যা করেছিলেন তাঁর ছেলে রোহিত ভেমুলা। সেই ঘটনা আলোড়ন ফেলেছিল গোটা দেশেই। এ হেন রোহিতের ভাই রাজা এখন আইনজীবী। ছোট ছেলে রাজার মাধ্যমেই সমাজকে অবদান রাখতে চান রাধিকা ভেমুলা।
টুইটারে রাধিকা জানিয়েছেন, ‘‘আমার ছোট ছেলে রাজা এখন আইনজীবী। রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে এটাই আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। আইনজীবী রাজা এখন থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে লড়াই করবে। এটাই আমার সমাজে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া। ওকে আশীর্বাদ করবেন।’’
২০১৫ সালে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র ছাত্রদের সঙ্গে গোলমালের পরে রোহিত-সহ পাঁচ পড়ুয়াকে বহিষ্কার করেছিল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সময়ে পিএইচ ডি করছিলেন রোহিত। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তদন্তে আরও চার জনের সঙ্গে রোহিতকেও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও অভিযোগ ওঠে, দলিত সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওই পাঁচ জনকে অন্যায় ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত রোহিত মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেন। এর পরেই দলিত ও নিচু জাতের পড়ুয়াদের প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাক্ষেত্র। ন্যায়বিচারের দাবিতে রোহিতের মা রাধিকা এবং তাঁর ভাই রাজা প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই বারেবারে ছুটে বেরিয়েছেন মা-ছেলে। আদালতেরও দ্বারস্থ হন।
পুদুচেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লায়েড জিয়োলজিতে স্নাতকোত্তর রাজার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হয়ে ওঠা। এ হেন প্রতিশ্রুতিমান সেই যুবকই হয়ে ওঠেন অটোরিকশা চালক। সংসারের প্রয়োজনে গুন্টুর থেকে তেনালির মধ্যে পণ্যবাহী অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন রাজা।
তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ বহু মানুষ আমাকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।’’ কিন্তু কারও কাছে মাথা নোয়াতে চাননি দাদার মতোই। এ বার আইনজীবী হওয়ার পরে ন্যায়বিচারের নিশ্চিত করতে মরিয়া তিনি। নেতৃত্ব দিতে চান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে।
রাজা জানান, দাদার মৃত্যুর পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দিতে টাকার প্রয়োজন ক্রমশ বাড়তে থাকে। আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্যেই ছেদ পড়ে বিজ্ঞানী হয়ে স্বপ্নে। পরিবর্তে হয়ে ওঠেন আইনজীবী। এ বিষয়ে রাজা বক্তব্য, আইনসভা, প্রশাসন কিংবা বিচারবিভাগের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর মধ্যে আইনসভা কিংবা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার উপর আস্থা নেই রাজার। বরং আইনবিভাগকে সম্বল করেই আশার আলো বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘জানি না, সত্যিই তেমন কিছু করে উঠতে পারব কি না, কিংবা সমাজে কোনও বদল আনতে পারব কি না। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই।’’ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই গড়ে তুলেছেন ‘রোহিত ভেমুলা সেবা সংগ্রাম’ নামে এক সংগঠন। অতিমারি পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবারও জুগিয়েছে এই সংগঠন।
রাজা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতপাতের বৈষম্য থাকা উচিত নয়। আর সেই বৈষম্য নির্মূল করতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তাঁর মা। সেই জন্য রোহিতের নামে আইন আনার লড়াইও চালাচ্ছেন মা-ছেলে। লক্ষ্যপূরণের আগে থামতে চান না ভাই। তাঁর কথায়, ‘‘আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কী ভাবে এই দেশে থাকব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy