লোকসভা ভোটের আগে আবার ‘নজরে’ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস বা ওবিসি)-র জন্য সংরক্ষণের বৃদ্ধি করার প্রশ্ন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি রোহিণীর নেতৃত্বাধীন কমিশন এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। সরকারি সূত্রের খবর সেই রিপোর্টে সংরক্ষণ বাড়ানোর সুপারিশ থাকতে পারে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সমতা আনতে ওবিসি-দের মধ্যে কয়েকটি সাব ক্যাটেগরি বা উপবিভাগ তৈরি করার সুপারিশও রিপোর্টে করা হয়ে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় হাজার পাতার রিপোর্টটি দু’টি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশটি, কী ভাবে ওবিসি কোটা বরাদ্দ করা উচিত, তা নিয়ে। দ্বিতীয় অংশটি সারা দেশে ২,৬৩৩টি ওবিসি জাতির একটি আপডেট করা তালিকা। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের অক্টোবরে তৈরি রোহিণী কমিশনের ১২ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশের কথা ছিল। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ ও রিপোর্ট তৈরি সম্পূর্ণ না হওয়ায় কমিটির মেয়াদ বেড়েই চলে। বিহারে জাতগণনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলায় মধ্যেই রোহিণী কমিশনের রিপোর্ট পেশের ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ওবিসিদের জন্য এখন সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। সারা দেশে এই সংরক্ষণের আওতায় পড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার সম্প্রদায়। তবে তাদের মধ্যে মাত্র গোটা পঞ্চাশেক গোষ্ঠী সংরক্ষণের মূল সুবিধা ভোগ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিহারের জাতগণনায় যদি দেখা যায় যে জনসংখ্যায় ওবিসিদের হার এর চেয়ে অনেক বেশি, তা হলে সেই অনুপাতেই সংরক্ষণের দাবি উঠবে। তা মানতে গেলে জেনারেল ক্যাটেগরির জন্য অসংরক্ষিত যে ৫০ শতাংশের বেশি আসন থাকে, সেখানে হাত দিতে হবে। সরকারের উচ্চপদে উচ্চবর্ণের তুলনায় ওবিসিদের বেশি দেখা গেলে সামাজিক সমীকরণই বদলে যাওয়ার আশঙ্কা। তিন দশক আগে মণ্ডল কমিশনের বিরুদ্ধে যেমন ব্রাহ্মণ, উচ্চবর্ণের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ফের তেমন আন্দোলন শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুন:
এই আবহে লোকসভা ভোটের আগে আদৌ বিজেপি ওবিসি সংরক্ষণ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শামিল হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা তুলে ধরেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের প্রসঙ্গ। মণ্ডল কমিশনের আগে পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ-সহ গোটা হিন্দি বলয়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তিনি। কিন্তু অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে গিয়ে তিনি উচ্চবর্ণ, মধ্যবিত্ত মানুষের ভোট হারিয়েছিলেন। যে ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এত বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তাদের ভোটও পাননি। রোহিণী কমিশনের রিপোর্ট কি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদেরও এ বার প্রশ্নের মুখে ফেলবে?