Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
INDIA Alliance

তিন প্রস্তাব গ্রহণ করল ‘ইন্ডিয়া’, এ বার রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা করে ঐক্যবদ্ধ লড়াই

শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে জোটের আনুষ্ঠানিক স্লোগানও ঘোষিত হয়েছে— ‘জুড়েগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া’। রাজ্যে রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচার কর্মসূচি শুরু হবে এই স্লোগান সামনে রেখেই।

যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা।

যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৬
Share: Save:

দেশের উন্নয়ন নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মুম্বইয়ে দু’দিনের বৈঠকের শেষে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এ কথা জানিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের এ বার আমাদের সেই পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।’’ নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা ফৌজের ‘আগ্রাসন’ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ আদানিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আর্থিক অনিয়মের রিপোর্ট নিয়েও সরব হন তিনি। বলেন, ‘‘লাদাখে আমাদের জমি দখল করেছে চিন। আমি নিজে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছি।’’

নাম না করে আদানি প্রসঙ্গে সরব হন শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরেও। মোদীর ‘পরিবারতন্ত্র’ সংক্রান্ত প্রচারকে কটাক্ষ করে প্রয়াত বালাসাহেবের পুত্রের মন্তব্য, ‘‘বন্ধুদের পরিবারতন্ত্র (এ ক্ষেত্রে মোদীর ‘বন্ধু’ আদানির পরিবার) চলবে না। আমরা ভয়মুক্ত ভারত গড়ব।’’ উদ্ধবপুত্র আদিত্য জানান, বিরোধী জোটের বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, সমন্বয়ের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু করা। দ্বিতীয়ত, ১৪ সদস্যের সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে যৌথ প্রচার, কৌশল নির্ধারণের মতো বিষয়গুলি চূড়ান্ত করা। তৃতীয়ত, ‘জুড়েগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া’ স্লোগান সামনে রেখে দ্রুত রাজ্যে রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ ভাবে জন সমাবেশ এবং প্রচার কর্মসূচি শুরু করা।

বিমান ধরার তাড়া থাকায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের আগেই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাজির ছিলেন, অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতাদের প্রায় সকলেই। মমতা বৈঠক শুরু আগে সাংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখন সময় নেই সময় নষ্ট করার!’’ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা সকলেই আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। কিন্তু আজ আমরা এক মঞ্চে এসেছি। কারণ একটাই— দেশকে বাঁচাতে হবে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, বহুত্ববাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করতে হবে।’’ যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা। বলেন, ‘‘এ বার আমাদের দ্রুত লক্ষ্যপূরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’’

আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘আমাদের ‘ইন্ডিয়া’ শুধু ২৭-১৮টা দলের জোট নয়, দেশের ১২৬ কোটি জনতার জোট। একবিংশ শতকের ভারতকে নির্মাণ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মোদী সরকার স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, সবচেয়ে অহঙ্কারী সরকার।’’ ঘটনাচক্রে, মুম্বইয়ে বিরোধী জোটের বৈঠকের আগেই মোদী ‘ঘনিষ্ঠ’ আদানিদের বিরুদ্ধে নতুন করে আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দু’টি প্রথম সারির বিদেশি সংবাদপত্র। অভিযোগ তোলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর টাকা দেশের বাইরে কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য মরিশাসে পাচার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মুম্বই পৌঁছেই আদানি-বিতর্ক নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন রাহুল। সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে কেজরী বলেন, ‘‘বিদেশি প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বেরোচ্ছে— ‘‘ভারত সরকার এখন এক জন মাত্র মানুষের (গৌতম আদানি) লাভের জন্য কাজ করছে।’’ মুম্বইয়ে দু’দিনের বৈঠকে ‘ইতিবাচক আলোচনা’ হয়েছে জানিয়ে কেজরী বলেন, ‘‘এর পর বড় বড় শক্তি আমাদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা শুরু করবে। চেষ্টা হবে অন্তর্বিরোধের কথা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করার। আমাদের সকলকে সতর্ক থাকবে হবে। বৈঠকে সকলে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। কেউ আসন সমঝোতা, কেউ প্রচার, কেউ সমন্বয়, কেউ সমাজমাধ্যমের দায়িত্বে রয়েছেন। এ বার এগিয়ে যাওয়ার পালা।’’

আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের কথায়, ‘‘দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিপদের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানছে মোদী সরকার। সেই সরকারকে সরিয়েই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলব।’’ মোদীর বিরুদ্ধে সেই লড়াইয়ে রাহুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে আলাদা ভাবে উল্লেখ করেন লালু। সেই সঙ্গে জানান, পরবর্তী পর্যায়ে লোকসভা আসন ধরে ধরে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘পরবর্তী ধাপে দেশের প্রতিটি রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো বিষয় সামনে রেখে ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব প্রচারে নামবেন।’’

সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানান, মূলত রাজ্য স্তরেই হবে আসন ভাগাভাগির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জোট বাড়ছে। আরও দু’টি দল এসেছে। আগামী দিনে রাজ্যস্তরে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের সকলের একটাই উদ্দেশ্য— ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং ভারতীয় সংবিধানের সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে রক্ষা করা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy