রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা জয়ন্ত চৌধরি ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপিকে টক্কর দিতে তৈরি হচ্ছে বিরোধী শিবির। তার মধ্যেই বিজেপিকে চাপে ফেলতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম তুলে আনলেন রাজ্যের বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা জয়ন্ত চৌধরি। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী শিবির এককাট্টা হোক এবং বিজেপির উপর চাপ বাড়াতে সকলে মিলে আমন্ত্রণ জানাক বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে।
কিন্তু কেন মমতা? বুধবার আগরায় এক সমাবেশে আরএলডি কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জয়ন্তর ব্যাখ্যা, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতায় চোখে চোখ রেখে লড়ছেন মমতা। বাংলায় যে ভাবে তিনি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছেন, তা বিজেপির রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। আর সে কারণেই ২০২২-এর বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বিরোধী-জোটের উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো।’’
বেশ কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সক্রিয় হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী কালে অবশ্য তা রূপায়িত হয়নি। কিন্তু বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে থেকে তাঁর সক্রিয় বিজেপি-বিরোধিতা এবং নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বাংলা দখলের সব চেষ্টায় জল ঢেলে রাজ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসা অন্য বিরোধী দলগুলির নজর কেড়েছে। বাংলায় বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে মমতা অন্য বিরোধী দলগুলিকে পাশে নিয়ে নিরন্তর বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে বলছেন, বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে সব বিরোধী দলকে একজোট হওয়া এবং সেই লড়াইয়ে মমতার বিজেপি-বিরোধী ভাবমূর্তিকে কাজে লাগানোর জন্য জয়ন্ত চৌধরি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেছেন। বিরোধী-জোটের অংশ হিসেবে মমতা ময়দানে নামলে বিজেপির উপরে চাপ অনেকটাই বাড়বে বলে মত তাঁদের।
আগরার ওই সভা থেকে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে জয়ন্ত বলেন, ‘‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোটা দেশ অক্সিজেন এবং হাসপাতালে শয্যার জন্য লড়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। অথচ বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন, অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি! এর চেয়ে বড় মিথ্যে আর কিছু হয় না।’’ একই সঙ্গে মোদী সরকারের জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আরএলডি-প্রধানের অভিযোগ, পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের নামে ভোট পেলেও তাঁদের পরিবারের দাবিগুলো ৩০ মাসেও মেটায়নি সরকার। এমনকি তাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করে না!
বিরোধী শিবিরের এই প্রস্তুতির মধ্যে বসে নেই যোগী সরকারও। মোদী সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গত নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলন এমনিতেই উত্তর ভারতে বিজেপিকে বড় সমস্যায় ফেলেছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের প্রধান রাকেশ টিকায়েতের নেতৃত্বে লাগাতার বিক্ষোভ সেই সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে যোগী সরকারের। আগামী বছর গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটের আগে তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের কৃষক নেতাদের দিয়ে ‘কিসান পঞ্চায়েত’ ডাকার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। রাকেশ টিকায়েত যে ভাবে সব শ্রেণির কৃষককে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে একজোট করে বিজেপিকে নিশানা করছেন, তাতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বড় অংশে বিজেপির ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতারাই। এই অবস্থায় ১৬ থেকে ২৩ অগস্ট, এই সাত দিন কৃষক নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোদী সরকার তাঁদের জন্য কী করেছে, তার ব্যাখ্যা দেবেন বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও তাতে কৃষকদের ক্ষোভ কতটা কমবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলেরই একাংশের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy