গৌহাটি হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুন্যালে বিদেশি সন্দেহে অভিযুক্তদের যত মামলা আসে, তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ ব্যক্তিই শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বলে ঘোষিত হন। গৌহাটি হাই কোর্টে একটি মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার হলফনামায় এমনটাই জানিয়েছিল। তার ভিত্তিতে হাই কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিল, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অনেক ক্ষেত্রেই প্রামাণ্য নথি ও বিশ্লেষণ ছাড়াই কাউকে ভারতীয় বা বিদেশি ঘোষণা করছে। তাই সরকার যেন মামলাগুলির পূনর্মূল্যায়ন করে।
অসমে বর্তমানে ১০০টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিধানসভায় সরকারের দাখিল করা হিসেব অনুযায়ী ১৯৮৫ সালে হওয়া অসম চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত ২,৪৪,১৪৪ জনের বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এ বছর জুলাই পর্যন্ত ১,৫৬,৬৫১ জনকে বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ও ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ৩০,০৮৯ জন বিদেশিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিধানসভার হিসেব মানলে, হলফনামার দাবি ঠিক নয়। সরকারি হিসেবে বর্তমানে অসমে থাকা সন্দেহজনক ভোটারের সংখ্যা ৯৯,৯৪২।
ফরহাদ আলি নামে এক ব্যক্তির বাবার নাম কোথাও হাবি রহমান ও কোথাও হাবিবর রহমান থাকায় বঙাইগাঁও ফরেনার্স ট্রাইবুনাল বলেছিল, দু’জন যে এক ব্যক্তি তার পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। তাই ফরহাদকে বিদেশি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ফরহাদ আলি হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাই কোর্ট মামলা ফের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে প্রশ্ন তোলে, বাবার নামের বানান দু’জায়গায় দু’রকম থাকা মানেই যে ছেলে ভারতীয় নন- তার যুক্তি কী? কোন ব্যাখ্যায় ফরহাদ বিদেশি বলে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হলেন তা রায়ে স্পষ্ট নয়। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হঠকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনার জবাবে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার দাবি করে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আসা ৮৫ শতাংশ মামলার ক্ষেত্রেই অভিযুক্তকে ভারতীয় হিসেবেই রায় দেওয়া হয়।
বিচারপতি অচিন্ত্যমল্ল বুজর বরুয়া ও বিচারপতি মিতালি ঠাকুরিয়ার বেঞ্চ সরকারকে কয়েকটি রায়ের নমুনা জমা দিতে বলেছিল। সেগুলি বিচার করার পরে বিচারপতিরা বলেন,
‘‘আমরা এমন অনেক রায় বিচার করে দেখেছি কিছু ক্ষেত্রে যুক্তপূর্ণ ভাবে রায়দান করা হয়েছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ না করে, কোনও কারণ বা যুক্তি না দর্শিয়েই কাউকে ভারতীয় বা বিদেশি বলে রায় দিয়েছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল।’’ তাই বেঞ্চ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়গুলির বিভাগীয় পূনর্মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা হোক। যে সব ক্ষেত্রে যুক্তি, প্রমাণ, বিশ্লেষণ ছাড়াই কাউকে ভারতীয় বলে রায় দেওয়া হয়েছে- সেগুলির ক্ষেত্রে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হোক। পরে তার ফলাফল জনতার সামনে তুলে ধরা হবে। কারণ অবৈধ নাগরিকের সমস্যা গোটা রাজ্যের উপরে প্রভাব ফেলে।
কিন্তু এত বছর ধরে দেওয়া লক্ষাধিক রায়ের পুনর্মূল্যায়নের মতো দুরূহ কাজ কী ভাবে সম্ভব হবে? অসমের স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিব পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা সবে আদালতের রায় হাতে পেয়েছি। এ নিয়ে সোমবার বৈঠকের পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy