Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
independence day

Independence day: এই ছবিটার জন্য হয়তো দেশ আমার রয়ে গিয়েছে

তিনি সেই ছবি কোথায় ছড়িয়ে দিলেন জানি না। কাগজে ছাপা হল সেই ছবি। আমরা জেনেছিলাম অনেক পরে।

সেই ছবি। হায়দারের স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন। ফাইল চিত্র

সেই ছবি। হায়দারের স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন। ফাইল চিত্র

হায়দার আলি
নসকরা (অসম) শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৮:১৭
Share: Save:

একটা ছবি বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। বদলে দিয়েছে রোল নম্বর। ফিরিয়ে দিয়েছে দেশ। বদলে দিয়েছে স্বাধীনতার মানে।

গলা জলে দাঁড়ানোর সেই দিনটা। একটা পতাকা। একটা ছবি। চারটে বছর পরে এখনও লোকে মনে রেখেছে। অন্তত ১৫ অগস্ট হলে তো মনে পড়েই সবার। আমরা অবশ্য খেলার ছলেই সব করেছিলাম। অন্য সময় হলে মোটেই অত জলের মধ্যে স্যরেরা আমাদের নামতে দিতেন না। কিন্তু ওই দিন তো স্বাধীনতা দিবস। পতাকা তুলতেই হত। তাই আমি আর সম্পর্কে দাদা জিয়ারুল জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেও কেউ বাধা দেননি। গিয়েছিলাম চকলেটের আশায়। তার সঙ্গে সাঁতার কেটে তেরঙা ওড়ানোর মজাটা ছিল বাড়তি।

তাজেম স্যর, মানে তখন আমাদের হেড টিচারও নেমে পড়লেন আমাদের সঙ্গে। সঙ্গে নৃপেন স্যর। আর মিজানুর স্যর ছবি তুলছিলেন। তিনি সেই ছবি কোথায় ছড়িয়ে দিলেন জানি না। কাগজে ছাপা হল সেই ছবি। আমরা জেনেছিলাম অনেক পরে।

আমি হায়দার। মা মিড ডে মিলের রান্না করে হাজার টাকা পায়। লোকের বাড়ি কাজ করে বাকি যা আসে, তাতে আমার, দাদার, বোনের কোনও মতে দিন চলে। ২০১১ সালে কোকরাঝাড়ে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এ ভাবেই চলছে।

২০১৭ সালে পতাকা ওড়ানোর ছবি ছাপা হওয়ায় যত না বিখ্যাত হয়েছিলাম, সত্যি বলতে কী, তার চেয়েও বেশি বিখ্যাত হয়েছিলাম পরের বছর আমার নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়ায়। এনআরসি জিনিসটার গুরুত্ব তত বুঝি না। শুধু জানি, নাম বাদ পড়া ব্যাপারটা খুব ভয়ানক। আমাদের বাড়ির সবার নামই এনআরসিতে ছিল। আমি বাদে। সবাই ভয় দেখাচ্ছিল, আমায় না কী অসম থেকে বার করে দেবে, জেলে ঢুকিয়ে দেবে। মা সব কিছু নিয়ে বড়দের দরজায় দরজায় ঘুরছিল। তার উপরে ছবির আমি ‘এনআরসিছুট’ জানতে পেরে কত খবরের কাগজ, চ্যানেল থেকেও ফোন করেছিল। কপাল ভাল মিজানুর স্যরই পরে এনআরসিতে নাম তোলার দায়িত্ব পেলেন। আর আমার নামও ঢুকে গেল। আমি আবার ‘ভারতীয়’ হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস ছবিটা ছাপা হয়েছিল! দাদা জিয়ারুলের নাম ওঠা নিয়ে অবশ্য সমস্যা হয়নি। কিন্তু ছবিটা ছাপা হওয়ায় তার লেখাপড়ার ধুম বেজায় বেড়েছে। ভাবছে, আরও ভাল লেখাপড়া করলে, ফের ছবি ছাপা হতেই পারে। আগে ক্লাসে লেখাপড়ায় ভাল ছেলের মধ্যে মোটেই ছিল না জিয়ারুল। কিন্তু এখন তার রোল নম্বর ১। ভাবা যায়!

আমাদের ১১৮৫ নম্বর নসকরা নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলটা এখন বড় স্কুলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। কিন্তু করোনায় স্কুল তো বন্ধ। বেজায় সমস্যা হয়েছে পড়াশোনায়। শহরে সবাই মোবাইলে লেখাপড়া করছে। কিন্তু আমাদের সবার কাছে কোথায় স্মার্টফোন! তাই ঘরেই যা পারি পড়ছি। মাঝেমধ্যে স্কুলে গেলে স্যারেরা দেখিয়ে দেন।

আবার এসেছে স্বাধীনতা দিবস। করোনার জন্য পতাকা তোলায় বরাবরের মতো হুল্লোড় হবে না এ বার। তবে চকলেট পাবই জানি। অবশ্য এখন আমি আরও বড় হয়েছি। ক্লাস সেভেন। একটা ছবি ছাপা হওয়ায় বুঝেছি, স্বাধীনতা দিবসের মানে শুধুই চকলেট পাওয়া নয়। ওই তেরঙা ওড়ানোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আস্ত একটা দেশ। যে দেশ প্রায় আমার হাতছাড়া হতে হতেও, হয়তো ওই ছবিটার জন্যেই আমার দেশ হয়ে থেকে গিয়েছে।

অনুলিখন: রাজীবাক্ষ রক্ষিত

অন্য বিষয়গুলি:

independence day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy