পাকিস্তান থেকে প্রচারিত ভিডিয়োতে ভারতীয় রেলে হামলার নির্দেশ এবং তার পরেই দেশে রেলে একের পর এক দুর্ঘটনা— দু’টির মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে লাহোরে বসবাসকারী জঙ্গি নেতা ফরহাতুল্লা ঘোরীর নাম। গত বছর বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম কাফে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গেও জড়িত ছিল সে।
গত রবিবার অজমেঢ়ের কাছে ট্রেন লাইনে একাধিক স্থানে কংক্রিটের চাঙড় ফেলে দুর্ঘটনা ঘটানোর ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধাক্কায় চাঙড়টি ভেঙে যাওয়ায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওই দিনই কানপুরের কাছে একটি ‘নাশকতা’র চেষ্টা হয়। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, রবিবার রাতে বিলহউর স্টেশনের আগে ভিওয়ানি-প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেসের চালক লাইনের উপর একটি এলপিজি সিলিন্ডার রয়েছে বলে দূর থেকে দেখতে পান। আপৎকালীন ব্রেক চাপেন তিনি। ট্রেনটি এসে ওই সিলিন্ডারে ধাক্কা মারে। তবে ট্রেনের গতি কম থাকায় কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে ওই সিলিন্ডার ছাড়াও ৪-৫ গ্রাম বিস্ফোরক পাউডার, পেট্রল ভর্তি বোতল, পলতে, দেশলাই উদ্ধার হয়েছে। যা দেখে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ট্রেনে নাশকতা ঘটানোরই উদ্দেশ্য ছিল অপরাধীদের। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
শুধু ওই দু’টি নয়, গত এক-দেড় মাসে রেলে ‘নাশকতা’র একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে বলে রেলের দাবি। গত ২৩ অগস্ট রাজস্থানের পালি জেলায় আমদাবাদ-যোধপুর বন্দে ভারত ট্রেনের সামনে সিমেন্টের ব্লক ফেলে রাখা হয়েছিল। ওই দিনই ফারুকাবাদ এক্সপ্রেসের সামনে কাঠের গুঁড়ি ফেলে সেটিকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়। গত ১৭ অগস্ট কানপুরের কাছে রেললাইনে থাকা কোনও বস্তুতে ধাক্কা দিয়ে লাইনচ্যুত হয় সাবরমতী এক্সপ্রেসের ২০টি কামরা।
স্বরাষ্ট্র সূত্র মনে করছে, প্রত্যেকটি ঘটনাতেই প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার ছক পাওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ঘটনাগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর পিছনে নিশ্চিত ভাবে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে। তারা স্থানীয় স্তরে জেহাদি মতবাদে বিশ্বাসী যুবকদের মাধ্যমে ওই নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একাধিক বড় মাপের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাধানোর ছকও কষা হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান।
সামগ্রিক ভাবে এই ছকের পিছনে আইএসআই-এর মদতে পুষ্ট ফরহাতুল্লা ঘোরী নামে এক জঙ্গির নাম উঠে এসেছে। কিছুদিন আগে টেলিগ্রাম সমাজমাধ্যমে ওই জঙ্গি একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দিল্লি, মুম্বই-সহ ভারতের নানা স্থানে রেলে নাশকতা ঘটানোর জন্য এ দেশে তার সমর্থকদের ডাক দেয়। ফিদায়েন যুদ্ধের ডাক দিয়ে রেলের মতো দুর্বল জায়গায় আঘাত করার পরামর্শ দেয়। গোয়েন্দারা বলছেন, জুলাই মাসে ওই ভিডিয়ো সামনে আসার পর থেকেই রেলে ‘নাশকতা’ ঘটানোর চেষ্টা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, আদতে হায়দরাবাদের বাসিন্দা হলেও লাহোরে বসে নিজের জঙ্গি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে ঘোরী। এনআইএ জানিয়েছে, ঘোরী অতীতে একাধিক জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত। গত বছর রামেশ্বরম কাফে বিস্ফোরণের ঘটনাতেও সে যুক্ত ছিল। এ দেশে অনলাইনে জঙ্গি নিয়োগের দায়িত্বেও রয়েছে ওই ব্যক্তি। গোয়েন্দাদের মতে, পাকিস্তানের অধিকাংশ কুখ্যাত জঙ্গি নজরদারির আওতায় রয়েছে। তাই ঘোরীর মতো স্বল্প পরিচিতদের ব্যবহার করে ভারতে নাশকতা চালাতে চাইছে আইএসআই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)