সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উত্তপ্ত সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশের বচসা নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপিতে। ধামাখালিতে আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ (এসএস-আইবি)-এর উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই চড়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। ওই মন্তব্যের জন্য প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে। পরে তা ঘুরে যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। বিষয়টি প্রথমে প্রকাশ্যে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের একটি পোস্ট থেকে। তার পরে সেই বিতর্কের জল ক্রমশ গড়াতে থাকে। বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরে এবং পঞ্জাবে ওই বিতর্ক পৌঁছেছে। আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল।
তৃণমূলের ওই আক্রমণের মুখে বাংলা থেকে বিজেপির একমাত্র শিখ সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালির দাবি, ওই কথা যিনিই বলে থাকুন তিনি ‘মূর্খ’! বুধবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইনকে সুরিন্দর বলেন, ‘‘এক জন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে কখনও ‘খালিস্তানি’ বলা যায় না। এটা অন্যায়! যিনিই বলে থাকুন তিনি মূর্খ! তিনি ভারতের স্বাধীনতা থেকে এখন পর্যন্ত দেশের জন্য শিখ সম্প্রদায়ের অবদান জানেন না।’’ একই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে শিখদের বিক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশে সুরিন্দর বলেন, ‘‘কোনও মূর্খের কথায় এত বিচলিত হওয়া উচিত নয়। শিখদের প্রতি বিজেপির সম্মান ছিল, আছে, থাকবে।’’
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই রাজ্য বিজেপি দফতরের সামনে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত দলের পক্ষে কেউ ক্ষমাও চাননি। বরং, বিজেপির পক্ষে এই মন্তব্যের দায় নেওয়া হয়নি। তবে সুরিন্দর বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না অগ্নিমিত্রা (পাল) বা শুভেন্দু (অধিকারী) এমন কথা বলে থাকতে পারেন। তাঁরা দু’জনেই অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং শিক্ষিত মানুষ। তাঁরা শিখদের অবদানও জানেন। মাথা গরম হয়ে গেলেও এই শব্দ ওঁদের মুখ থেকে বার হবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি।’’
তবে কে বলল ওই শব্দ? সুরিন্দর বলেন, ‘‘আমি দেখিনি কে বলেছেন। কেউই দেখেননি। তবে দলেরই কেউ যদি বলে থাকেন, তবে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। যিনি বলেছেন, তাঁর অনুশোচনা হওয়া উচিত।’’
বিজেপির পক্ষে কি শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসাবে এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হবেন তিনি? প্রশ্নের জবাবে সুরিন্দর বলেন, ‘‘আমাকে দলের তরফে এখনও পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। তবে দল বললে আমি অবশ্যই আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’’ একই সঙ্গে এই বিতর্ক তৈরি হওয়া নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও দুষেছেন অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, ‘‘যা-ই ঘটে থাক, বিষয়টা স্পর্শকাতর। সেই ভিডিয়ো রাজ্যবাসীর সামনে প্রথমে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা এক জন প্রশাসকের মতো কাজ হয়নি। আমি চাই, তদন্ত করে কে বলেছেন খুঁজে বার করা হোক। তাঁর যথাযোগ্য শাস্তি হোক। কিন্তু যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এলে রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে, সেটা সর্বসমক্ষে নিয়ে আসাটা বিবেচকের কাজ নয়।’’
সুরিন্দর জানান, মঙ্গলবার থেকেই তাঁর কাছে অনেক ফোন এবং বার্তা এসেছে। রাজ্যে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তো বটেই, অন্য রাজ্য এবং বিদেশ থেকেও অনেকে ‘সত্য’ জানার জন্য খোঁজ নিয়েছেন। এই বিজেপির সাংসদ বলেন, ‘‘আমি সবাইকেই বলতে চাই, এমন মন্তব্য যিনিই করে থাকুন তিনি মূর্খ। আর সেই মূর্খের কথা নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। মাথায় রাখতে হবে যে, শিখ সম্প্রদায়ের অবদান ও ঐতিহ্য এত ঠুনকো নয় যে, একটা মন্তব্যে তা নষ্ট হতে পারে। ভারতের সম্প্রীতিরক্ষার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা চিরকাল শিখরা নিয়েছেন, সেটা এখনও বজায় রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy