Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Election Commissioners Appointment Bill

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটি থেকে বাদ প্রধান বিচারপতি! রাজ্যসভায় বিল পাশ করাল মোদী সরকার

চলতি বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দেশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসাবে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:১১
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতি এবং কর্তব্যের শর্তাবলি বদলে ফেলতে সক্রিয় হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় পাশ করানো হল বিতর্কিত বিল। বিরোধী সাংসদদের তুমুল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সংসদের উচ্চকক্ষে পাশ হওয়া ওই বিতর্কিত বিলে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র।

‘চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনারস’ (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশনস অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্মস অফ অফিস) বিল ২০২৩’-এ প্রস্তাব রয়েছে যে, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী দ্বারা মনোনীত একজন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির বৈঠকে গৃহীত নাম যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।

ওই বিতর্কিত বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশের পরে আইনে পরিণত হলে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ প্রশ্নের মুখে পড়বে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিযোগ। বিরোধী সাংসদেরা মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সেই অভিযোগ তুলেই সরব হন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে ধ্বনীভোটেই পাশ হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিল!

কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে পরিকল্পিত ভাবে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করতে চাইছে বিজেপি। আর তা করতে গিয়ে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টকে।’’ আপ সাংসদ রাঘব চড্ডার মন্তব্য, ‘‘এই বিল বেআইনি।’’ প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দেশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে একটি কমিটি। এই কমিটির সদস্য হিসাবে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা।

সুপ্রিম কোর্টের সেই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু সেই রায় পাশ কাটিয়ে মোদী সরকার প্রস্তাবিত কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নাম ছাঁটাই করে ‘প্রধানমন্ত্রী এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী’র নাম নিয়োগ কমিটিতে ঢোকাতে সক্রিয় হল। এর ফলে বিরোধী দলনেতা আপত্তি জানালেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পছন্দসই আমলাদের নাম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারবে মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতি সেই পছন্দে সায় দিলেই সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনও আমলা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।

দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্কিত বিলটি আইনে পরিণত হলে কমিশন পুরোপুরি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হয়ে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অভিযোগ। আপাত ভাবে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও গত কয়েক বছরে তাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে বার বার। শাসকদলের বেলায় ‘নীরব’ আর বিরোধী দলগুলির ক্ষেত্রে ‘অতিসক্রিয়’, কমিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও উঠেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে বলে তাঁদের মত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE