বিএসএফের বিমান দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের মাঝে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বুধবার সফদরজঙ্গ বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই।
দু’চোখে জল। তবু দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নাগালে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তরুণী। সরাসরি প্রশ্নে বিঁধলেন রাজনাথ সিংহকে, ‘‘স্যার, আর কত বার আমাদের কাঁদাবেন? কই ভিআইপি-রা তো এই ভাবে দুর্ঘটনায় মরে না! এমনটা কি তা হলে শুধু আমাদেরই নিয়তি?’’
গত কাল দিল্লির কাছে ভেঙে পড়া বিমানে সওয়ার ছিলেন তরুণীর বাবা বিএসএফের সাব-ইনস্পেক্টর রবিন্দর কুমার। বাকি ন’জনের মতো তাঁকেও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিসিজিএ। তবে ঘটনার পর থেকেই মৃতদের আত্মীয়েরা আঙুল তুলছেন বাহিনীর দিকে। কেন তাঁদের বিশ বছরের পুরনো একটি বিমানে পাঠানো হয়েছিল, বিএসএফ ডিরেক্টর ডি কে পাঠকের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইলেন তাঁরা। প্রশ্নের মুখে পড়লেন মন্ত্রীরাও।
মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ দিল্লির সফদরজঙ্গ বিমানবন্দরে এসেছিলেন রাজনাথ। কুয়াশায় মোড়া সকালে সেখানে পা রাখা মাত্রই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁর দিকে ধেয়ে আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্নবাণ। বিএসফের দুর্ঘটনাগ্রস্ত সুপারকিং বি-২০০ বিমানটিতে সহচালকের আসনে ছিলেন এসএসবি-র জওয়ান রাজেশ শিবরাইন। মন্ত্রীর সামনে আজ হতাশা চেপে রাখতে পারেননি তাঁর শ্বশুর। তাঁর কথায়, ‘‘রাজেশ মাঝে মাঝেই বলত, বিএসএফের বিমানগুলি পুরনো হয়ে গিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই নতুন বিমান আসছে। জানি না কবে আসবে। তবে ও তো আর তা দেখতে পাবে না!’’
বিএসএফ যদিও দুর্ঘটনার পিছনে এই পুরনো বিমানের অভিযোগ মানতে নারাজ। বিমানটিতে আদৌ কোনও ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেছে বাহিনীর একটি সূত্র। কিন্তু যে বিমান ১৯৯৪-’৯৫ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশ বছর পরেও তা কী ভাবে একই রকম ভাল অবস্থায় থেকে যায়, প্রশ্ন তুলছেন মৃতদের পরিবার। বিএসএফের ডিরেক্টর ডি কে পাঠকের অবশ্য দাবি, ‘‘এ রকম একটা বিমানের ক্ষেত্রে কুড়ি বছর মোটেই বেশি বয়স নয়। ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত দিব্যি ব্যবহার করা যায় এ ধরনের বিমান।’’ বিমানটির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো বলেও দাবি করেছেন তিনি। মাস ছয়েক আগেই কানাডার একটি কারখানায় বিমানটির বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বদলানো হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন বিএসএফ-প্রধান।
তবে কী কারণে এই অঘটন? যান্ত্রিক ত্রুটি? নাকি অতিরিক্ত ওজন ছিল বিমানে? দু’টি সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছেন বাহিনী-কর্তারা। এগারো আসনের এই ছোট বিমানটি চালাচ্ছিলেন বিএসএফের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট ভগবতীপ্রসাদ ভট্ট। কোলে মাস দু’য়েকের সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, বিমানে যে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে, তা উড়ান শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বুঝতে পারেন তিনি। সেই মতো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে সঙ্কেতও পাঠান। তবু তাঁকে উড়ান চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ক্ষোভের মুখে পড়ে মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-ও এর জবাবে মুখ খোলেননি। বরং স্বজনহারাদের ক্ষোভ ও প্রশ্নের মুখে নীরবে চোখ মুছতে দেখা যায় তাঁকে। পাশে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও হরিভাই পরঠিভাই চৌধুরি। রিজিজু কিন্তু তদন্তের ধার ধারেননি। তখনই বলে দেন, ‘‘চালকের পরিবার ভুল তথ্য পেয়েছেন। বিমানে ত্রুটি ছিল না। আমি নিজেই কত চড়েছি এই বিমানে।’’
স্বজনহারাদের বক্তব্য, এতে কিছুই প্রমাণ হয় না। বিএসএফ সূত্রই তো বলছে, ভগবতীপ্রসাদও এর আগে অন্তত ২০০ ঘণ্টা ওই বিমান চালিয়েছেন। সহ-চালক হিসেবেও বিমানটিতে থেকেছেন বহু বার। উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়ের সময় ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়ে টানা উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন।
তবে কেন কাল ভেঙে পড়ল বিমানটি? কেনই বা এ ভাবে ১০ জন সীমান্তরক্ষীকে হারাল দেশ! এবং তাঁদের পরিবার! দুর্ঘটনার দেড় দিন পরেও কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy