নির্মলার বাজেটের পর কী বলছেন রেলমন্ত্রী? —ফাইল চিত্র।
পৃথক রেল বাজেটের রেওয়াজ অনেক দিন হল উঠে গিয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে শেষ রেল বাজেট পেশ হয়েছিল। তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরেশ প্রভু। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় বাজেটের সঙ্গেই রেল বাজেট মিলিত ভাবে পেশ করার রেওয়াজ চালু হয়েছে। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদীর সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হল মঙ্গলবার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ৮৩ মিনিটের বাজেট বক্তৃতা। কিন্তু তাতে রেলের উল্লেখ কোথায়? প্রায় দেড় ঘণ্টার বাজেট বক্তৃতায় মাত্র এক বার শোনা গেল ‘রেলওয়ে’ শব্দটি।
সোমবার পেশ করা ২০২৩-২৪ সালের আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে গত পাঁচ বছরে রেলে মূলধনী ব্যয় ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যেখানে রেলে মূলধনী ব্যয় ছিল ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগ হয়েছে নতুন রেললাইন সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে আরও অনেক পরিকাঠামোগত খাতে।
কিন্তু এ বার রেলের বিষয়ে কেন বিশেষ কিছু শোনা গেল না নির্মলার বক্তৃতায়? তা-ও আবার এমন এক সময়ে, যখন একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। নিউ জলপাইগুড়ির কাছে রাঙাপানিতে কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। তার পরেও নির্মলার দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতায় রেলের উল্লেখ মাত্র এক বার।
যদিও এনডিটিভিকে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “২০১৪ সালের আগে (ইউপিএ জমানায়) রেলের জন্য মূলধনী ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে আজ ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। রেলের জন্য মূলধনী ব্যয়ে এটা রেকর্ড।” তাঁর যুক্তি, অতীতে কোনও রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত কি না, সেটা যাচাই না করেই নতুন ট্রেন ঘোষণা করে দেওয়া হত। কিন্তু ভিত্তি সঠিক রয়েছে কি না, সেটা এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। মন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেলপথ বৈদ্যুতিকরণ করা হয়েছে। গত বছরে রেলের সুরক্ষার জন্য ৯৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এ বছর তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। অশ্বিনী বলেন, “ এই বরাদ্দে পুরনো রেললাইন বদলে নতুন রেললাইন বসানো হবে, নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থা আনা হবে, কবচের কাজে আরও গতি আসবে।”
উল্লেখ্য, মোদী সরকারের জমানায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই ট্রেন ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। রয়েছে আরও অনেক আধুনিক সুবিধা। সেই ট্রেনের টিকিটের দামও সাধারণের থেকে বেশি। এখন আবার অমৃত ভারত এক্সপ্রেস এসেছে। আগামী দিনে বন্দে ভারত স্লিপার কোচ আনারও চিন্তাভাবনা রয়েছে রেলের। তা হলে কি রেল নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের দিকে কম গুরুত্ব দিয়ে, বন্দে ভারতের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে? এনডিটিভির প্রশ্নে এই তত্ত্ব অবশ্য মানতে চাইছেন না রেলমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, দেশে যেমন একটি বড় নিম্ন আয় গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন, তেমনই অপর এক শ্রেণির মানুষ রয়েছেন যাঁরা সরকারের থেকে এগুলি আশা করছেন। তাঁদেরও উপেক্ষা করা যায় না। সুতরাং, সরকার দুই ধরনের গোষ্ঠীর উপরেই নজর দিচ্ছে। সাধারণ ভাবে কোনও ট্রেনে এক তৃতীয়াংশ কামরা থাকে বাতানুকূল এবং দুই তৃতীয়াংশ কামরা থাকে সাধারণ। সেই অনুপাতও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে দাবি রেলমন্ত্রীর। বাতানুকূল নয় যে কামরাগুলি, সেগুলির টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে বলে দাবি তাঁর। সেই কারণে আগামী তিন বছরে আড়াই হাজার নন-এসি কামরা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে জানান অশ্বিনী।
রেলমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, নির্মলার বাজেট বক্তৃতা রেলের প্রতি ‘নির্মল’ না হওয়ায় খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “প্রায়শই রেল দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনে বগি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সাধারণ যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন। কিন্তু বাজেটে রেলের ব্যাপারে কিছুই বলা হল না। কেউ কোনও দায় নিলেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy