রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ফাইল চিত্র।
পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে আপাতত রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ঠিক আগে রেলের নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আজ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেলমন্ত্রী। পরীক্ষার্থীরা রেলের পরীক্ষায় যে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখে ৪ মার্চের মধ্যে রেলবোর্ডকে রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্তকারী কমিটি, দেশের সমস্ত রেল নিয়োগ বোর্ড (আরআরবি)-এর চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
গত ১৫ জানুয়ারি রেলের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটিগরি (এনটিপিসি)-র পরীক্ষার প্রথম ধাপ বা সিবিটি-১ (কম্পিউটার বেসড টেস্ট) এর ফলাফল প্রকাশ করে রেল নিয়োগ বোর্ড। জানানো হয় সিবিটি-২-এর পরীক্ষা শুরু হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় তার পরেই। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালে ওই পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি যখন প্রকাশ হয়েছিল, সে সময়ে শুধু সিবিটি-১ এর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ফলপ্রকাশের পরে সিবিটি-২-এর কথা ঘোষণা করেছে রেল। যা নিয়মবিরুদ্ধ। এর পিছনে রেলের আধিকারিকদের দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে— ওই অভিযোগে সরব হয়ে পথে নামেন পরীক্ষার্থীরা। বিহার হয়ে সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভোটের মুখে বিক্ষোভ সামলাতে গতকাল কড়া পদক্ষেপ দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রেলের ও সরকারি চাকরিতে বসতে না-দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিবৃতি দেয় রেল বোর্ড। যা ছাত্রবিক্ষোভে আরও ইন্ধন জোগায়।
বিরোধীদের মতে, রেলবোর্ডের ওই প্ররোচনামূলক বিবৃতির কারণে আজ ফের বিহার ও উত্তরপ্রদেশে পথে নেমে স্টেশন ও ট্রেনে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামলাতে তাই তড়িঘড়ি আপাতত সিবিটি-২ পরীক্ষার সঙ্গেই গ্রুপ ডি পর্যায়ে নিয়োগের জন্য সিবিটি-১ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল তার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। আজ রেলমন্ত্রী বলেন, আবেদনকারীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে ৪ মার্চ ওই কমিটি রিপোর্ট পেশ করবে। তবে আজ রেলমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যারা ইতিমধ্যেই এনটিপিসি পরীক্ষার প্রথম ধাপ পাশ করে দ্বিতীয ধাপের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাঁদের নাম কোনও ভাবেই বাদ যাবে না। বিক্ষোভকারীদের সরকারি চাকরিতে বসতে না দেওয়ার যে ফরমান জারি হয়েছে, তাও ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। যদিও ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে কি না, তা নিয়ে আজ মুখে কুলুপ এঁটেছেন রেলমন্ত্রী।
চাকুরিরত প্রার্থীদের বিক্ষোভ প্রথমে বিহারে শুরু হলেও, গতকাল তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ভোটমুখী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ দেখা যায় প্রয়াগরাজে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ স্থানীয় মেস, ছাত্রাবাসগুলিতে হামলা চালিয়ে দরজা ভেঙে পরীক্ষার্থীদের লাঠি মারতে মারতে তাদের গ্রেফতার করছে। স্বভাবতই ভোটমুখী রাজ্যে ওই ভিডিয়ো সামনে আসায় রীতিমতো অস্বস্তিতে ওই এলাকার বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। ছাত্রদের হিংসার পথ না নেওয়ার আর্জি জানিয়েও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘যাঁরা ভুলে গিয়েছেন, তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে ভারতে লোকতন্ত্র ছিল ও গণতন্ত্র আছে ও থাকবে।’’ সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিংহ বলেন, ‘‘চাকরি বদলে পুলিশের লাঠি। এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগী রাজ্যে।’’
উত্তরপ্রদেশের মতো ছাত্র ও পরীক্ষার্থীদের হটাতে বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশ লাঠি চালায়। ভোটের মুখে দুই বিজেপিশাসিত রাজ্যে পরীক্ষার্থী ও যুব সম্প্রদায়ের উপরে পুলিশের লাঠি চালানো নিয়ে সরব হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও। তিনি বলেন, রেলের পরীক্ষার্থীদের উপরে পুলিশি হামলা নিন্দনীয়। সরকারের উচিত দ্রুত পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার সমাধান করা।
আজ রেল মন্ত্রক যে কমিটির গঠন করেছে তার প্রধান হলেন রেলওয়ে বোর্ডের প্রিন্সিপাল এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর দীপক পিটার। অন্য সদস্যরা হলেন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর রাজীব গান্ধী, চিফ পার্সোনাল অফিসার আদিত্য কুমার। এ ছাড়া, কমিটিতে রয়েছেন চেন্নাই ও ভোপালের রেল নিয়োগ বোর্ডের প্রধান যথাক্রমে জগদীশ আলগার ও মুকেশ গুপ্ত। প্রতিটি রেল নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন অভিযোগকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy