রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
সাংসদপদ ফিরে পাওয়ার পর অনাস্থা প্রস্তাবের উপর কংগ্রেস নেতা রাহুল বক্তৃতায় কী বলেন সে দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল। বুধবার দ্বিপ্রহরে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৩৬ মিনিটের বক্তৃতার কিছুটা ভারত জোড়ো যাত্রার অভিজ্ঞতা, আর বাকিটা মণিপুর নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে তীক্ষ্ণ আক্রমণে সীমাবদ্ধ রাখেন রাহুল। তাঁর বক্তৃতার ধার, ওজন, পরিণত রাজনীতির ছাপ নিয়ে যখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে ঠিক তখনই প্রসঙ্গটা ঘুরে যায়। ‘দুরন্ত’ বক্তৃতার বদলে আলোচ্য হয়ে ওঠে ‘ফ্লাইং কিস’ বিতর্ক।
রাহুলের বক্তৃতার পরে বিজেপির তরফে বলতে ওঠেন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তাঁর বক্তৃতাতেই স্মৃতি অভিযোগ করেন, রাহুল নাকি মহিলা সাংসদদের উদ্দেশে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়েছেন! যদিও সেই ঘটনার কোনও ‘ফুটেজ’ রাত পর্যন্ত মেলেনি। পাঁচ বছর আগেও এমন বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রাহুল।
পাঁচ বছর আগের বিতর্ক
পাঁচ বছর আগে সংসদে বক্তৃতা শেষ করার পর মোদীকে গিয়ে আলিঙ্গন এবং তার পর আসনে এসে দলীয় সতীর্থদের উদ্দেশে চোখ-টেপার ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল রাহুলকে। তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা অস্বস্তিতেও ফেলেছিল। অবশ্য সেই চোখ-টেপার ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল নেট মাধ্যমে। যা রাহুলের রাজনৈতিক বক্ত়ৃতার গভীরতাকে লঘু করে দিয়েছিল বলে অনেকের ধারণা। এ বারও একই ঘটনা ঘটল বলে মত অনেকের। তবে, এ বারের কোনও ছবি বা ফুটেজ মেলেনি।
‘উড়ন্ত চুমু’র অভিযোগ
লোকসভায় তখন যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বক্তৃতা শেষ করার পর কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাওযার সময় রাহুলের হাত থেকে কিছু নথিপত্র মেঝেয় পড়ে যায়। নিচু হয়ে তিনি যখন সেগুলি কুড়োচ্ছেন, তখন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের একাংশ হাসতে শুরু করেন। উঠে দাঁড়িয়ে রাহুল সরকার পক্ষের দিকে তাকিয়ে ‘ফ্লাইং কিস’ ছোড়েন বলে নিজের ভাষণে অভিযোগ করেন রাহুলের পরের বক্তা মন্ত্রী স্মৃতি। লোকসভার স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান কৃষি প্রতিমন্ত্রী শোভা করণদাজে-সহ বিজেপির মহিলা সাংসদেরা।
রাহুলের বক্তৃতায় ভারত জোড়ো
নিজের বক্তৃতার শুরুতেই ভারত জোড়ো যাত্রায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন রাহুল। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘ভারত জোড়ো যাত্রা খুব বেশি ভেবেচিন্তে শুরু করিনি। ভেবেছিলাম যে দেশের জন্য আমি সব করতে পারি। ভেবেছিলাম আমি রোজ শারীরিক কসরত করি, যোগব্যায়াম করি, হাঁটা আর এমন কী ব্যাপার! কিন্তু সেই অহঙ্কার দু’দিনে ভেঙে গিয়েছিল। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠতাম হাঁটুর ব্যথা নিয়ে। ভাবতাম আজ হাঁটতে পারব তো!’’ বোঝাতে চান, মানুষের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার আত্মিক টান তুচ্ছ করেছিল তাঁর শারীরিক কষ্টকে।
মণিপুর নিয়ে মোদীকে তোপ
রাহুল বুধবার মণিপুর নিয়ে সরাসরি নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। অগ্নিগর্ভ মণিপুরে মোদীর না-যাওয়া ও হিংসাদীর্ণ রাজ্যটির বিপন্ন মানুষের কাছে তাঁর পৌঁছে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেন রাহুল। রাহুল বলেন, ‘‘মণিপুরকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অশান্ত মণিপুরে তিনি এক বারের জন্যও যাননি। অথচ তিনি দেশের অন্যত্র গিয়েছেন। সফর করেছেন। কেন মণিপুরে যাননি? কেন তাঁর মণিপুর যাওয়ার সময় হয়নি? কারণ, উনি মণিপুরকে ভারতের অংশ বলেই মনে করেন না!’’ সেইসঙ্গে মোদীকে তুলনা করেন রাবণের সঙ্গে। ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ‘‘রাম রাবণকে মারেননি। মেরেছিল রাবণের নিজেরই অহঙ্কার। প্রধানমন্ত্রীও অহঙ্কারী।’’ পাশাপাশি রাহুলের কটাক্ষ ছিল, ‘‘রাবণ শুধু মেঘনাদ আর কুম্ভকর্ণের কথা শুনতেন। প্রধানমন্ত্রী শোনেন শুধু আদানি আর অমিত শাহের কথা।’’
‘ভারতমাতার হত্যা’ এবং সংসদে হট্টগোল
মোদীর উদ্দেশে রাহুল বলেন, ‘‘আপনি দেশভক্ত নন। আপনি দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমী নন। তাই আপনি মণিপুরে যেতে পারেন না! কারণ, আপনি মণিপুরে ভারতমাতাকে হত্যা করেছেন।’’ শুনেই সরকার পক্ষ তুমুল হট্টগোল শুরু করে। রাহুলের উদ্দেশে স্পিকার বলেন, এক জন দায়িত্বশীল সাংসদ এমন কথা সংসদে বলতে পারেন না। শুনে কংগ্রেসের সাংসদ বলেন, ‘‘আমি তো আদর করেই বলছি! অশ্রদ্ধা করে তো বলছি না!’’ সামনের আসনে বসা মা সনিয়া গান্ধীকে দেখিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আমার দু’জন মা। এক মা এখানে বসে আছেন। আর এক মা ভারতমাতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy