সংসদে ঢুকছেন রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
কৃষক স্বার্থের পক্ষে সওয়াল করে কাল ‘স্যুট-বুটের সরকার’কে সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। অকাল ঝড়ে-জলে উত্তর ভারত জুড়ে কৃষিপণ্যের যখন প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তখন প্রধানমন্ত্রী কেন কৃষকদের সঙ্গে দেখা করছেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু রাহুল নিজে কি কৃষকের খেতে গিয়েছিলেন? সনিয়া গাঁধী রাজ্যওয়াড়ি সফর করে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করলেও রাহুল তো প্রায় দু’মাস ছিলেন অজ্ঞাতবাসে। এমনকী তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র অমেঠীতে, রাহুলকে নিয়ে নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত পোস্টারও পড়ে গিয়েছিল!
কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপির দিক থেকে পাল্টা এই প্রশ্ন ওঠার আগেই রাজ্য সফরে বেরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে চান রাহুল। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে অমেঠীতেও চাষের ক্ষতি হয়েছে। সম্ভবত শুক্রবারই অমেঠী যাবেন রাহুল। তার পরই পঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশে পদযাত্রা করে কৃষকদের সঙ্গে দেখা কররবেন।
রাহুলের সম্ভাব্য রাজ্য সফরের উদ্দেশ্য দু’টি। এক, গরিব-বন্ধু, কৃষক-বন্ধু হিসেবে রাজনীতির যে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। দুই, তাঁর সম্পর্কে ধারণার বদল ঘটানো। গত দশ বছরে রাহুল যে হারে রাজ্যওয়াড়ি সফর করেছেন, দলিত-কৃষক-আদিবাসীদের সঙ্গে দেখা করেছেন তা দলের কোনও কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা করেননি। এমনকী, অন্য রাজনৈতিক দলেরও ক’জন নেতা এতটা করেছেন তা নিয়ে সংশয় আছে। কিন্তু রাহুলের সম্পর্কে ধারণা হল, তিনি কথায় কথায় ছুটি নেন, কাজের সময় তাঁকে পাওয়া যায় না। সেই ধারণা পাল্টাতে চান রাহুল। সে জন্য সোম থেকে বৃহস্পতিবার সংসদে থাকার সঙ্গে সপ্তাহান্তে রাজ্য সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যাতে এই বার্তা যায় যে ২৪/৭ রাজনীতি করছেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, রাহুলের ভাবমূর্তি ঠিক করতে নতুন টিমও তৈরি হয়েছে। ১২ নম্বর তুঘলক রোডে তাঁর বাসভবনে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুলের বক্তৃতার অংশ তুলে ধরছেন।
কিন্তু তাতেই কি কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
প্রথমে রামলীলা ময়দান, তার পর গতকাল সংসদে পর পর দু’দিন ক্ষুরধার বক্তৃতা দেন রাহুল। আজও সংসদে চুপচাপ বসে থাকেননি। রেলে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে যখন প্রশ্ন করছেন রাহুল, তখন টেবিল চাপড়ে হইহই করে ওঠেন কংগ্রেস সাংসদরা। রাহুলের এই পারফরম্যান্সে কংগ্রেস যে কিছুটা জেগে উঠেছে, সন্দেহ নেই। নেতাদের কথাবার্তায় সেই আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠছে। কিন্তু দু’টি বক্তৃতাতেই রাহুল সম্পর্কে দলের সব সংশয় যে কেটে গিয়েছে, তা নয়। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখনও সন্দিহান! ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ভুলে গেলে চলবে না আড়াই বছর আগে, সহ-সভাপতি পদে অভিষেকের পর জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরেও খুব ভাল বক্তৃতা দিয়েছিলেন রাহুল। সেই বক্তৃতা শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন বহু নেতা। অথচ জয়পুরের সভা থেকে কংগ্রেসে যে সাংগঠনিক সংস্কারের রোড ম্যাপ রেখেছিলেন রাহুল, সে কাজ এখনও অসমাপ্ত। দলে স্বজনপোষণের রাজনীতিতে কিছুটা রাশ টানতে পারলেও সংগঠনে সম্পাদক পদে এমন সব তরুণ নেতাকে এনেছেন যাঁদের রাজনৈতিক বোধ শূন্য! একই স্তরে বিজেপির নেতাদের যে রাজনৈতিক ধার রয়েছে তার সামনে এঁরা কিছুই নয়। আবার সাধারণ সম্পাদক পদে মোহন প্রকাশ, মধুসূদন মিস্ত্রী বা সিপি জোশীর মতো যে নেতাদের রেখেছেন তাঁরাও একেবারেই অকর্মণ্য। সিপি জোশী পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, অথচ দেড় বছরে তিনি দু’দিন কলকাতায় গিয়েছেন! ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে কিছু অযোগ্য নেতাকেও বসিয়েছেন।
কিন্তু কংগ্রেসকে আন্দোলনমুখী করে তুলতে হলে সংগঠনকেও গতিশীল করতে হবে। না হলে বক্তৃতা বা সফরের রাজনৈতিক ফসল ঘরে তুলতে পারবে না কংগ্রেস। এক বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ভট্টা পারসৌলে গিয়ে রাহুল কৃষকদের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে ভট্টা পারসৌলে মাত্র পাঁচশো ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। ওড়িশার নিয়মগিরির আদিবাসীদের বাড়িতে গিয়ে থেকেছেন রাহুল, বুন্দেলখণ্ডের পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু রাহুলের সফরের পর তার কোনও ‘ফলো আপ’ হয়নি। কারণ, সেখানে তিনি কোনও গতিশীল নেতাকে বাছতে পারেননি, সংগঠনও তৈরি করতে পারেননি। ফলে দু’টি বক্তৃতা বা দু’দিন রাজ্যসফরে যাওয়াটাই বড় নয়। রাহুলের আসল কাজ এখনও বাকি! তা হল সংগঠন তৈরি করা! না হলে বক্তৃতার বয়ান ও রাজ্যসফরের ছবি আর্কাইভেই থেকে যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy