কংগ্রেসে থাকতে হলে একজোট হয়ে থাকতে হবে। কংগ্রেসের অনেকেই দলে থেকে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন! গুজরাতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এমনই অভিযোগ করলেন কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনে দলের ৩০-৪০ জনকে বহিষ্কারও করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের এখনও আড়াই বছর দেরি। তবে শুক্রবার থেকেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতে কংগ্রেসের সংগঠন চাঙ্গা করার চেষ্টা শুরু করেছেন রাহুল। বৈঠক করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির সঙ্গে। তার পর শনিবার অহমদাবাদে দলীয় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘যদি আমাদের গুজরাতের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হয়, তবে দু’টি কাজ করতে হবে। তা হল প্রথমেই দলের মধ্যে অনুগত এবং বিদ্রোহীদের আলাদা করা। সেই কাজ করতে গিয়ে যদি ৩০-৪০ জনকে বহিষ্কারও করতে হয়, তার জন্যও আমরা প্রস্তুত।’’
রাহুলের বার্তা, ‘‘কংগ্রেসের যাঁরা গোপনে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন, তাঁদের প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসা উচিত। গোপনে না থেকে প্রকাশ্যেই বিজেপির হয়ে কাজ করা উচিত। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে বিজেপিতে আপনাদের জায়গা নেই। ছুড়ে ফেলে দেবে তারা।’’
১৯৯৫ সাল থেকে গুজরাতে ক্ষমতায় বিজেপি। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। কিন্তু ২০২২-এ রাহুল গান্ধী গুজরাতের বিধানসভা ভোট নিয়ে কার্যত কোনও আগ্রহই দেখাননি। ২০২৭-কে পাখির চোখ করে কংগ্রেস আগামী এআইসিসি-র অধিবেশন গুজরাতে করতে চলেছে। ২০২৫-এ গোটা কংগ্রেসেরই সংগঠন চাঙ্গা করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬৪ বছর পরে গুজরাতে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসবে। ৮-৯ এপ্রিলের অধিবেশনে প্রথমে অহমদাবাদে সর্দার পটেল স্মৃতিসৌধে বর্ধিত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে।
আরও পড়ুন:
রাহুলের মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপিও। বিজেপি মুখপাত্র শেহজ়াদ পুনাওয়ালা তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন, তিনিই বিজেপির সবচেয়ে বড় সম্পদ! শেহজ়াদের দাবি, রাহুল নিজেকে এবং তাঁর দলকে সকলের সামনে হাস্যাস্পদ করে তুলছেন।
অনেকের মতে, দক্ষিণের পর এ বার গুজরাত নিয়েও ময়দানে নামছেন রাহুল। সম্প্রতি কেরল কংগ্রেসে ‘ভাঙনে’র ইঙ্গিত মিলেছিল। শশী তারুরের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘সংঘাত-বিতর্ক’ প্রকাশ্যে এসেছিল। গত মাসে তারুরের এক নিবন্ধ ঘিরে অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস শিবির। কেরলে নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান (স্টার্টআপ) বৃদ্ধির প্রশংসা করেন তারুর। তা থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। প্রশ্ন উঠতে থাকে তা হলে কি কেরলের বাম নেতৃত্বাধীন জোট এলডিএফ-এর প্রশংসা করছেন তিনি? বিতর্কের আবহে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন তারুর। কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, তিনি বামেদের জোট সরকারের প্রশংসা করেননি। কেবল রাজ্যের উন্নয়নকে তুলে ধরেছেন। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। কংগ্রেসের কেরল নেতৃত্ব ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এই বিতর্কের আবহে দিল্লিতে কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাহুল। দলীয় সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে তারুরের সামনেই কেরলের কংগ্রেস নেতাদের সাবধান করে দিয়ে বলা হয়, তাঁরা যেন দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করেন।