মুম্বইয়ে রাহুলের সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: পিটিআই।
শেয়ার বাজারে কৃত্রিম ভাবে দর বাড়াতে নিজেদেরই শেয়ার বেনামে কিনেছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী। মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের আগেই ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এবং ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে এমন প্রতিবেদন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির ‘ঘনিষ্ঠতার’ প্রসঙ্গও রয়েছে সেখানে। বৃহস্পতিবার দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে পৌঁছে সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদীকে খোঁচা দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আদানি কার টাকায় নিজের শেয়ার নিজেই কিনে নিলেন?’’ মরিশাসের গোপন সংস্থার মাধ্যমে ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ওই শেয়ার কেনার পর্ব চলেছিল বলে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জানান রাহুল। জি২০ শীর্ষবৈঠকের আগে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন রিপোর্টে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ে পুরো ঘটনার তদন্তও দাবি করেছেন তিনি। কয়েক হাজার কোটি টাকার এই ঘুরপথের শেয়ার কেনার ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাসের আলি সাবান আলি এবং চিনা ব্যবসায়ী চ্যাং চুং লিংয়ের নাম উঠে এসেছে জানিয়ে রাহুলের দাবি, পুরো ঘটনা পর্বের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার মতো সংবেদনশীল বিষয়ও জড়িত।
মুম্বইয়ের ধরাভি বস্তির মতো এলাকাও যে মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোটের সরকার সম্প্রতি ‘মোদী-ঘনিষ্ঠ’ আদানির হাতে তুলে দিয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাহুল। অবশ্য তাঁর সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই বিজেপি মুখপাত্র প্রেম শুক্ল বলেন, ‘‘রাহুল মিথ্যা কথা বলছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জি২০-র আগে দেশের বদনাম করছেন।’’ প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ‘জালিয়াতি’ করে নিজেদের সংস্থার শেয়ার দর বাড়িয়েছে ‘মোদী-ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠী! সে সময় মোদী মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকের আগেই মুম্বইয়ের রাজপথে বিক্ষোভে নামে বিজেপির যুব মোর্চা। বিনায়ক দামোদর সাভারকরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মোর্চার নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করেন। মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি এবং শিন্ডেসেনা জোট সরকারের কাছে রাহুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিও তোলেন তাঁরা। এরই মধ্যে সান্তাক্রুজ এলাকার গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হতে চলেছে বিজেপি বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনা পর্ব।
মুম্বইয়ে দু’দিনের বৈঠক শুরুর আগে নতুন করে চেয়ারপার্সন এবং আহ্বায়ক পদ নিয়ে জল্পনা ‘ইন্ডিয়া’য়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রকাশিত খবরের দাবি, নতুন লোগোর পাশাপাশি বিজেপি বিরোধী জোটের ১১ সদস্যের সমন্বয় কমিটির নামও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক পদে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও আলোচনায় রয়েছে। অন্য দিকে, কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে জোটের চেয়ারম্যান হতে পারেন সূত্রের খবর।
গত ২৩ জুন পটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের আহ্বানে ১৭টি বিরোধী দলের প্রথম বৈঠক হয়। ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘ইন্ডিয়া’। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সহযোগী দলের নেতারা বৈঠকে বসছেন। সেখানে জোটের আহ্বায়কের নাম ঘোষণা এবং পতাকা প্রকাশ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। আলোচনায় আসতে পারে, ‘ইন্ডিয়া’র অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণের বিষয়টিও।
এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার বুধবার জানিয়েছেন, ২৮টি দলের ৬৩ জন নেতা হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে অংশ নেবেন। সূত্রের খবর, প্রাক্তন সাংসদ তথা নাসিক-কোলাপুরের কৃষক নেতা রাজু শেট্টির স্বাভিমানী পক্ষ বিরোধী জোটে সামিল হতে পারে। বুধবার বিকেলে মুম্বইয়ে মমতাকে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘যা আলোচনা হওয়ার সেখানে হবে। তার আগে আমি কিছু বলতে পারব না।’’
মমতার পাশাপাশি, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি প্রতিষ্ঠাতা লালু প্রসাদ এবং তাঁর ছেলে তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বুধবার মুম্বই পৌঁছেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌঁছেছেন কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে এবং দলের দুই প্রাক্তন সভাপতি সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, আম আদমি পার্টি (আপ)-র দুই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির অরবিন্দ কেজরীওয়াল ও পঞ্জাবের ভগবন্ত মান এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের মতো নেতারাও আসছেন বৈঠকে যোগ দিতে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চা চক্রের পরে বিরোধী জোটের নেতাদের সৌজন্যমূলক আলোচনা হতে পারে। এর পর রাতে শরদ এবং উদ্ধবের আমন্ত্রণে হবে নৈশভোজ বৈঠক। মূল আলোচনা হওয়ার কথা শুক্রবার সকাল থেকে। এর পর বিকেলে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করবেন ‘ইন্ডিয়ার’ নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy