প্রধানমন্ত্রীর বিমান নিয়ে কটাক্ষ রাহুল গাঁধীর। —ফাইল চিত্র
উপদ্রুত এলাকায় সেনা পরিবহণে বুলেটপ্রুফ গাড়ি নেই। হামলা হলে জওয়ানদের প্রাণহানি নিশ্চিত। অথচ প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য আনা হয়েছে ৮৪০০ কোটি টাকার ভিভিআইপি বিমান। এই বিমান দেশে আসার পর থেকেই দামের প্রশ্নে সরব রয়েছেন রাহুল গাঁধী। আজও সেনাদের যাতায়াতের করুণ ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ওই বিমানের তুলনা করে দু’মিনিটের একটি ভিডিয়ো টুইট করে রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি ন্যায়?
ভিডিয়োটি কোথায় ও কবে তোলা তা স্পষ্ট নয়। আনন্দবাজার ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, একাধিক সেনা জওয়ান প্রশ্ন তুলছেন, প্রাণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের বুলেটপ্রুফ নয়, এমন গাড়িতে জোর করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? সেনা ট্রাকের মধ্যে বসে থাকা এক জওয়ানকে বলতে শোনা গিয়েছে, “বুলেটপ্রুফ গাড়িতেও যেখানে সেনা জওয়ানেরা সুরক্ষিত নন, সেখানে বুলেটপ্রুফ ট্রাকে না-নিয়ে কেন আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে?” আর এক জওয়ানকে বলতে শোনা যায়, “ট্রাকের চাদর এতটাই পলকা যে পাথর ছুড়লে তা ভেদ করে ভিতরে এসে পড়বে।”
সরকার তথা সেনা কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি বাড়িয়ে সেনার পদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে দেখা গিয়েছে ওই ভিডিয়োয়। এক জওয়ানকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। সরকারের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। ইউনিট কমান্ডারের উচিত এ নিয়ে শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা।” আর এক জওয়ানের সংযোজন, “কমান্ডার নিজে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে যাতায়াত করছেন। আর বাকি দলকে বলছেন সাধারণ ট্রাকে করে যেতে। এর ফলে আমাদের জীবনের পাশাপাশি আমাদের পরিবারের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।”
ভিডিয়োটি টুইট করে রাহুল লিখেছেন, “বুলেটপ্রুফ নয়, এমন ট্রাকে করে সেনাদের শহিদ হতে পাঠানো হচ্ছে, আর প্রধানমন্ত্রী জন্য ৮৪০০ কোটি টাকার বিমান এসেছে। এটা কি ন্যায়?”
রাহুলের এই টুইটের সূত্রে পুলওয়ামা হামলার স্মৃতি উস্কে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নেটিজ়েনদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামাতে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় চল্লিশ জনের বেশি জওয়ান মারা যান। চলতি মাসেই কাশ্মীরে অন্তত দু’টি সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। ফলে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে যে ক্ষোভ সেনাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে ওই ভিডিয়ো। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যে ভাবে জওয়ানেরা অনাস্থা প্রকাশ করেছেন, তাতে নড়েচড়ে বসেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
সিআরপিএফের ডিআইজি এম দীনকরন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তাঁরা ভিডিয়োটির সত্যাসত্য যাচাই করে দেখছেন। অভিযোগ খণ্ডনে সেই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, “বিভিন্ন কাজের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সুরক্ষাদানকারী যান বাহিনীর হতে রয়েছে।”
বিমান প্রশ্নে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১২-য় তৎকালীন ইউপিএ সরকারের আমলে ওই বিমান কেনা স্থির হয়েছিল। বর্তমান সরকার তা বাস্তবায়িত করেছে মাত্র। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধাঁচেই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির বিদেশ সফরের জন্য বোয়িং-এর দু’টি বিমান বিশেষ ভাবে তৈরি করে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি চলে এসেছে। আর একটি কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতে আসবে। ওই দু’টি বিমানের জন্য মোদী সরকারের খরচ হয়েছে ৮৪০০ কোটি টাকা।
প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ব্যবহারের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান যখন রয়েছেই, তখন কেন বাড়তি খরচ করে আরও দু’টি বিমান কেনা হল? সরকারের ব্যাখ্যা, গত দেড় দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিদেশ সফরে বিমান দু’টি ব্যবহার হয়ে আসছে। ফলে বিমান দু’টির বয়স বেড়েছে। এ ছাড়া, জ্বালানি ভান্ডারের ক্ষমতা কম হওয়ায় এই দু’টি এক যাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগর পার হতে অক্ষম। মাঝপথে কোনও বিদেশি বিমানবন্দরে থামতেই হয় জ্বালানি নিতে। নিরাপত্তার দিকে থেকে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। অহেতুক সময়ও নষ্ট হয়। নতুন বিমানগুলির মাঝপথে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। সময় ও জ্বালানির সাশ্রয় হয়। যে কোনও ধরনের হামলা প্রতিহত করতেও নতুন বিমান দু’টি সক্ষম। নিরাপত্তার প্রশ্নটি নতুন বিমান ব্যবহারের অন্যতম কারণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy