প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
দেশের রাজনীতির লড়াই পৌঁছে গেল আমেরিকার ভারতীয়দের কাছেও।
আর কুড়ি দিন পরেই আমেরিকা সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর আজ ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সামনে ছ’দিনের আমেরিকার সফরের প্রথমেই মোদী এবং তাঁর সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কখনও ব্যঙ্গের ছলে তুলে আনলেন ঈশ্বরের উপমা। সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুললেন সরকারের বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বলেও তাঁর মন্তব্য। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা যা শুনেই বলেছেন, মোদীর সাফল্য হজম হচ্ছে না সনিয়া গান্ধীর পুত্রের। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, বিদেশের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করলেন রাহুল গান্ধী। একে সমর্থন করা যায় না।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বক্তৃতায় ‘বর্তমান ভারত’কে তুলে ধরেন রাহুল। মত বিনিময় করেন শিক্ষাবিদ, অন্য বিশিষ্টদের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি মোদীকে ব্যক্তিগত ভাবেও বিঁধতে ছাড়লেন না প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, “বিশ্ব এত বড় এবং জটিল যে, এক জন মানুষের পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়। ভারতে এমন এক ধরনের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ভাবেন তাঁরা সব জানেন। তাঁরা ভাবেন, তাঁরা ঈশ্বরের চেয়েও বেশি জানেন। তাঁরা ঈশ্বরকেও বোঝাতে পারেন যে কী ঘটছে। অবশ্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রী এমন এক জন।” এর পরেই তাঁর বক্তব্য, “মোদীজি যদি ঈশ্বরের সঙ্গে বসেন, তা হলে তাঁকে মোদীজি বুঝিয়ে দেবেন কী ভাবে বিশ্ব চলছে। ঈশ্বরই বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন ভেবে যে, এ আমি কী বানালাম! ওঁরা ভাবেন, ঐতিহাসিকদের ইতিহাস, বিজ্ঞানীকে বিজ্ঞান, সেনাকে যুদ্ধ শেখাতে পারেন। আসলে এ মধ্যমেধার ফল। ওঁরা কিছু শুনতে রাজি নন।”
রাহুলের কথায়, “আজ ভারতে মুসলিমদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা আশির দশকে উত্তরপ্রদেশে দলিতদের সঙ্গে ঘটেছিল। বিজেপি সরকারের কিছু পদক্ষেপের আঁচ মুসলিমদের উপর পড়ছে। কারণ, সরাসরি তাঁদের লক্ষ্য করেই যা করার করা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি শিখ, খ্রিস্টান, দলিত, জনজাতির অবস্থা একই রকম।” মোদী সরকারের আমলে দেশে যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ভারত জোড়ো যাত্রার অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাহুল বলেন, “যাত্রা শুরুর ৫-৬ দিন পরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ব্যাপারটা সহজ হবে না। কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটেছি। তিন সপ্তাহ পরে অনুভব করলাম যে, আমি আর ক্লান্ত নই। এই যাত্রায় শুধু কংগ্রেসই নয়, ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে গোটা ভারত।” রাহুল আরও বলেন, “কংগ্রেসের ভাল দিক হল, আমরা সবার সঙ্গে আছি। কেউ এসে কিছু বলতে চাইলে আমরা তাঁর কথা শুনি। সেটা আমাদের বিরুদ্ধে হলেও আমরা রেগে যাই না বরং নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি।” বক্তৃতা শেষে রাহুল প্রশ্নের উত্তর দেন। বিজেপি-কে কটাক্ষ করে বলেন, “বিজেপির মিটিংয়ে এমন প্রশ্নোত্তর সিরিজ হয় না!” বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করা এবং তার মাধ্যমে মানুষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। দাবি করেছেন, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে সংসদে ‘সেঙ্গোল’কে ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাহুলের এই আক্রমণের কড়া জবাব দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেছেন, “বিদেশে গেলেই রাহুল গান্ধীর মাথায় মহম্মদ আলি জিন্নার ভূত চাপে! অথবা আল কায়দা জঙ্গিদের চিন্তাভাবনা তাঁর শরীরে প্রবেশ করে। আমি তাঁকে বলব, ভারতে ফিরে আসুন এবং এক জন ভাল ওঝাকে দিয়ে ভূত তাড়ান! রাহুল গান্ধীর সমস্যা হল, সব শ্রেণিকে নিয়ে উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সামন্ততান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করেছেন, তা তিনি আজও মেনে নিতে পারেন না। গণতন্ত্রকে রাহুল গান্ধী রাজতন্ত্র বলে মনে করেন।” এখানেই থামেননি নকভি। তাঁর আরও অভিযোগ, ভারতকে বদনাম করার জন্য চুক্তি করেছেন রাহুল। কংগ্রেস দল মুসলিমদের ‘চিউয়িং গামে’র মতো ব্যবহার করে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। অর্থাৎ, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছিবড়ে করে ফেলে দেয়।
মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। তিনি বলেছেন, “ভারতকে অপমান করতে কখনও পিছপা হন না রাহুল গান্ধী। ভারতকে তিনি দেশ বলেও মনে করেন না। তাঁর মতে, ভারত কয়েকটি রাজ্যের সমষ্টি। বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটান রাহুল। আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা হজম হচ্ছে না কংগ্রেসের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy