Advertisement
E-Paper

পাঁচ বছর আগে বিপন্ন করেছিল আলিঙ্গন এবং চোখ-টেপা, এ বার উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে বিপাকে রাহুল?

পাঁচ বছর আগে, ২০১৮ সালে লোকসভায় রাহুল গান্ধীর মোদীকে আলিঙ্গন এবং তার পরে চোখ-টেপার ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। তবে এ বারের ঘটনার কোনও ছবি বা ফুটেজ মেলেনি।

Rahul Gandhi in Parilament

(বাঁ দিকে) পাঁচ বছর আগে সংসদে রাহুলের চোখ-টেপার মুহূর্ত। বুধবার সংসদে কংগ্রেস সাংসদের বক্তৃতা (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ১৬:১৮
Share
Save

পাঁচ বছর আগে, ২০১৮ সালে সংসদে নিজের বিরোধী পক্ষের আসন থেকে উঠে গিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চে বসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করেছিলেন তিনি। নিজের আসনে ফিরে এসে দলীয় সতীর্থদের উদ্দেশে চোখ টিপেছিলেন। সেই ঘটনা রাহুল গান্ধীকে রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে ফেলেছিল। জবাবি ভাষণ দেওয়ার সময় রাহুলকে একহাত নিয়েছিলেন মোদী।

পাঁচ বছর পরে, ২০২৩ সালে সেই লোকসভাতেই আরও একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন রাহুল। মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি অভিযোগ করলেন, তিনি নাকি মহিলা সাংসদদের উদ্দেশে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়েছেন! যদিও বুধবারের সেই ঘটনার কোনও ‘ফুটেজ’ বিকেল পর্যন্ত মেলেনি। পাঁচ বছর আগে রাহুলের চোখ-টেপার ছবি ধরা পড়েছিল লোকসভা টিভির ক্যামেরায়। সেই ছবি মুহূর্তে ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। রাহুলের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়েছিল দক্ষিণী অভিনেত্রী প্রিয়া প্রকাশের। এসেছিল চটুল সব মিম। যা রাহুলের বক্ত়ৃতার গভীরতাকে লঘু করে দিয়েছিল। এ বারও কি ‘চোনা’ পড়ল কংগ্রেসের সাংসদের রাজনৈতিক ভূমিকায়?

বিজেপি ইতিমধ্যেই আক্রমণ শানানো শুরু করেছে। পাঁচ বছর আগের প্রসঙ্গ টেনে টুইটে রাহুলের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়। তিনি লিখেছেন, ‘‘রাহুল গান্ধীর আচরণ লজ্জাজনক। যিনি সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক জন মহিলা সাংসদের দিকে ইঙ্গিত করে একটি ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়েছেন। তাঁর এমন জঘন্য আচরণ এই প্রথম নয়। এর আগে তাঁকে অন্য সদস্যদের দিকে চোখ টিপতেও দেখা গিয়েছিল।’’ এখন দেখার, অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই বিষয়ে কিছু বলেন কি না। বা বৃহস্পতিবার জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে ওই বিষয়ে কিছু বলেন কি না প্রধানমন্ত্রী মোদী।

প্রসঙ্গত, ওই অভিযোগের কোনও সচিত্র প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে বিজেপি যে তা জোগাড় করতে কসুর করবে না, তা বলাই বাহুল্য। তাদের জায়গায় কংগ্রেস বা অন্য কোনও বিরোধী দল থাকলে তারাও এই একই চেষ্টা করত। ইতিমধ্যেই বিজেপি রাহুলকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে প্রচার করতে শুরুও করে দিয়েছে। যত সময় যাবে, সরকার পক্ষেই এই প্রচার আরও গতি পাবে বলেই অনেকে মনে করছেন। এখন দেখার, রাহুল বা কংগ্রেসের তরফে এর কোনও জবাব দেওয়া হয় কি না। দিলেও কী জবাব দেওয়া হয়।

লোকসভায় তখন যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বক্তৃতা শেষ করার পর কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাওযার সময় রাহুলের হাত থেকে কিছু নথিপত্র মেঝেয় পড়ে যায়। নিচু হয়ে তিনি যখন সেগুলি কুড়োচ্ছেন, তখন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের একাংশ হাসতে শুরু করেন। উঠে দাঁড়িয়ে রাহুল সরকার পক্ষের দিকে তাকিয়ে উড়ন্ত চুম্বন ছোড়েন বলে নিজের ভাষণে অভিযোগ করেন রাহুলের পরের বক্তা মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। লোকসভার স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান কৃ‌ষি প্রতিমন্ত্রী শোভা করণদাজে-সহ বিজেপির মহিলা সাংসদেরা।

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পরে আদালতের শাস্তি পেয়ে সাংসদ পদ খারিজ হওয়া এবং তার পরে আদালতের নির্দেশেই সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল। তার পরে তাঁর প্রথম বক্তৃতা ছিল বুধবার। সেই বক্তৃতায় রাহুল যথেষ্ট পরিণতিবোধ দেখিয়েছেন। বলেছেন, ওই যাত্রা শুধু বাইরে নয়, ভিতর থেকেও তাঁকে বদলে দিয়েছে।

রাহুল বক্তৃতা শুরু করেছিলেন উর্দু কবি রুমিকে উদ্ধৃত করে। তিনি বলেন, ‘‘রুমি বলেছিলেন, মন থেকে বলা কথাই মনে পৌঁছয়। আমিও আজ মস্তিষ্ক দিয়ে কথা বলব না। যা বলব মন থেকে বলব।’’ রাহুলের সেই ‘মন কি বাত’-এ কখনও উঠে এসেছে ভারত জোড়ো যাত্রায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, কখনও মণিপুর নিয়ে সরাসরি নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। অগ্নিগর্ভ মণিপুরে মোদীর না-যা‌ওয়া ও হিংসাদীর্ণ রাজ্যটির বিপন্ন মানুষের কাছে তাঁর পৌঁছে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেন রাহুল। মোদীকে তুলনা করেন রাবণের সঙ্গে। বলেন, ‘‘রাম রাবণকে মারেননি। মেরেছিল রাবণের নিজস্ব অহঙ্কার। প্রধানমন্ত্রীও অহঙ্কারী।’’ পাশাপাশিই রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘রাবণ শুধু মেঘনাদ আর কুম্ভকর্ণের কথা শুনতেন। প্রধানমন্ত্রী শোনেন শুধু আদানি আর অমিত শাহের কথা।’’

তবে রাহুলের যে বক্তব্য নিয়ে লোকসভা সরগরম হয়ে উঠেছিল, তা হল ‘ভারতমাতাকে হত্যা’। রাহুল মোদীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘‘আপনি দেশভক্ত নন। আপনি দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমী নন। তাই আপনি মণিপুরে যেতে পারেন না! কারণ, আপনি মণিপুরে ভারতমাতাকে হত্যা করেছেন।’’ শুনেই সরকার পক্ষ তুমুল হট্টগোল শুরু করে। রাহুলের উদ্দেশে স্পিকার বলেন, এমন কথা এক জন দায়িত্বশীল সাংসদ সংসদে বলতে পারেন না। শুনে কংগ্রেসের সাংসদ বলেন, ‘‘আমি তো আদর করেই বলছি! অশ্রদ্ধা করে তো বলছি না!’’ সামনের আসনে বসা মা সনিয়া গান্ধীকে দেখিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আমার দু’জন মা। এক মা এখানে বসে আছেন। আর এক মা ভারতমাতা।’’ শুনে কংগ্রেস সাংসদেরা টেবিল বাজিয়ে রাহুলকে সমর্থন জানান।

রাহুলের পরে বলতে উঠে স্মৃতি ওই বিষয়টি নিয়েই প্রথমে আক্রমণ করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই সংসদে ভারতমাতাকে হত্যার কথা বলেছেন এক জন কংগ্রেস সাংসদ। আর সেটা শুনে কংগ্রেসের অন্য সাংসদেরা টেবিল বাজিয়েছেন! এই ঘটনা নজিরবিহীন!’’

তার আগে রাহুল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘ভারত জোড়ো যাত্রা খুব বেশি ভেবেচিন্তে শুরু করিনি। ভেবেছিলাম, দেশের জন্য আমি সব করতে পারি। মোদিজীর জেলেও যেতে পারি। রোজ শারীরিক কসরত করি, যোগব্যায়াম করি। ছোটবেলা থেকে রোজ ৮-১০ কিলোমিটার দৌড়ই। রোজ ২৫ কিলোমিটার হাঁটা আর এমন কী ব্যাপার! কিন্তু সেই অহঙ্কার দু’দিনে ভেঙে গেল। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠতাম হাঁটুর ব্যথা নিয়ে। ভাবতাম, আজ হাঁটতে পারব তো!’’

এর পরেই মণিপুর প্রসঙ্গে ঢুকে যান কেরলের ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ। সরাসরি মোদীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘মণিপুরকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অশান্ত মণিপুরে তিনি এক বারের জন্যও যাননি। অথচ তিনি দেশের অন্যত্র গিয়েছেন। সফর করেছেন। কেন মণিপুরে যাননি? কেন তাঁর মণিপুর যাওয়ার সময় হয়নি? কারণ, উনি মণিপুরকে ভারতের অংশ বলেই মনে করেন না!’’

আধ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের বক্তৃতায় রাহুল যথেষ্ট ধারালো ছিলেন। পরিণতও। সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণে মনোযোগী এবং একমুখী। উড়ন্ত চুম্বন বিতর্ক কি তাঁর সেই ভাষণের অভিঘাত খানিকটা কমিয়ে দিয়ে গেল?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।