রাখির দিনে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার টুইট করা ছবি। ফাইল চিত্র।
তিনি নিজেও হবেন না। মা বা বোনকেও হতে দেবেন না।
কংগ্রেসের সভাপতি পদ নিয়ে রাহুল গান্ধী এমনই অনড় মনোভাব নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী নিজে ফের কংগ্রেস সভাপতির পদের দায়িত্ব নিতে নারাজ। মা সনিয়া গান্ধী শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে ওই পদে থেকে যান, তা তিনি চাইছেন না। বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা সেই দায়িত্ব নিন, তা-ও রাহুল চাইছেন না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল দলের নেতাদের জানিয়েছেন ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সনিয়ার নেতৃত্বে এবং ২০১৯-এ তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস হেরেছে। এ বার গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকেই কাউকে কংগ্রেসের সভাপতি করা হোক বলে জেদ ধরেছেন তিনি। তবে এখনও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সে সময়ে কংগ্রেস নেতাদের থেকে সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলে দলের বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, তাঁর জায়গায় যেন প্রিয়ঙ্কাকে সভানেত্রী না করা হয়। গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ দায়িত্ব নিন। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের চাপে সনিয়া ফের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিতে রাজি হন। এখন একান্তই রাহুল রাজি না হলে কংগ্রেস নেতারা চাইছেন, অন্তত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সনিয়া সভানেত্রী পদে থেকে যান। কিন্তু রাহুল তাতেও আপত্তি তুলছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের দাবি। সনিয়াও ইচ্ছুক নন। সনিয়া নিজেও উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের হারের পরে দলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, দলের স্বার্থে তিনি, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা— গান্ধী পরিবারের তিন জনই দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সামনে দু’টিই বিকল্প থাকছে। প্রথম বিকল্প, সীতারাম কেশরীর পরে সত্যিই গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে কাউকে কংগ্রেসের সভাপতি বেছে নেওয়া। কেশরীর পরে ১৯৯৮-এ সনিয়া কংগ্রেসের সভানেত্রী হন। এখনও তিনিই সভানেত্রী। মাঝে ২০১৭ থেকে ২০১৯, দু’বছর রাহুল সভাপতি ছিলেন। দ্বিতীয় বিকল্প হল, ফের কোনও অজুহাত খাড়া করে কংগ্রেস সভাপতির নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া। রাহুল সভাপতির পদে দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না বলে এর আগে দু’বার কংগ্রেস সভাপতির পদে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক বার বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে। অন্য বার কোভিডের সংক্রমণের যুক্তি দিয়ে। কংগ্রেসের একাংশ নেতা মনে করছেন, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে দলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু হচ্ছে। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত প্রায় ১৫০ দিন ধরে পদযাত্রা চলবে। রাহুল-সহ কংগ্রেসের সমস্ত নেতা তাতে অংশ নেবেন। সভাপতি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আদর্শ অজুহাত তৈরিই রয়েছে। বস্তুত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্যই ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ ২ অক্টোবরের বদলে এক মাস এগিয়ে আনা হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে।
কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রি আজ দাবি করেছেন, তাঁরা নির্ধারিত সূচি মেনেই ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সভাপতি নির্বাচন সেরে ফেলতে চান। সেই সূচি অনুযায়ী ২১ অগস্ট, অর্থাৎ রবিবার থেকেই সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাহুল রাজি না হওয়ায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। মিস্ত্রি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করাতে চাইলেও নির্বাচনের আসল সময় নির্ধারণ করার ক্ষমতা কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির হাতে। মিস্ত্রির বক্তব্য, তিনি ইতিমধ্যেই সনিয়া গান্ধীকে নির্বাচনের খসড়া সূচি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ বার তাঁকেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, এক দিকে রাহুলকে এখনও বোঝানোর কাজ চলছে। তিনি রাজি না হলে সনিয়াকে ২০২৪ পর্যন্ত সভানেত্রী পদে থেকে যাওয়ার জন্য বোঝাতে হবে। অন্য দিকে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি করতে হলে, সেই নামে ঐকমত্য দরকার। অশোক গহলৌত, কুমারী শৈলজা, অম্বিকা সোনি, মল্লিকার্জুন খড়্গে, মুকুল ওয়াসনিকের নাম নিয়েও জল্পনা চলছে। কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমারকে সহ-সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে বলে একটি সূত্রের দাবি। কিন্তু তিনি আগামী বছরের ভোটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদের দাবি ছেড়ে আসতে রাজি নন। রাহুল কে সি বেণুগোপালের মতো নিজের আস্থাভাজন কাউকে সভাপতির পদে বসাতে চাইতে পারেন বলে অনেকের ধারণা। তাতে আবার গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মার মতো বিক্ষুব্ধ নেতারা আপত্তি তুলতে পারেন। ফলে গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে কাউকে সভাপতি করতে হলে ঐকমত্য তৈরির প্রয়োজন। একটি সূত্রের দাবি, ঐকমত্য তৈরি হলে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সূচি ঘোষণা হতে পারে।
কংগ্রেসের হাল ফেরাতে বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর মূল দাবিই ছিল, সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচন। গুলাম নবিরা ইতিমধ্যেই নিজেদের রাজ্যে নির্বাচনের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে ফের বিদ্রোহের পতাকা তুলে ফেলেছেন। সেই নির্বাচন ঠিক মতো না হলে তাঁরা প্রশ্ন তুলবেন। মিস্ত্রির দাবি, ব্লক থেকে প্রদেশ কংগ্রেস, সব স্তরেই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, রাহুল কোনওভাবেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ মানতে চাইছেন না। তিনি আগেও বলেছেন, গত তিন দশক গান্ধী পরিবারের কেউ দেশের প্রধানমন্ত্রী হননি। এ বার গান্ধী পরিবারের বাইরে থেকে কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ারও সময় এসে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy