রাহুল অবশ্য মনে করছেন, সাংসদ পদ খারিজ করে মোদী নিজেই তাঁর হাতে সবথেকে বড় উপহার তুলে দিয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
রাহুল গান্ধী বলছেন, সাংসদ পদ খারিজ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসলে তাঁর এবং বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এই অস্ত্রের কতখানি রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যাবে, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের কারণ, কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং প্রচারের ধারে-ভারে বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে থাকা।
সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে রাহুল আজ বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী ভয় পেয়ে এই কাজ করেছেন। এবং এই ‘প্যানিক রিঅ্যাকশন’-এর সবথেকে বড় ফায়দা বিরোধীরা পাবেন। রাহুলের কথায়, ‘‘উনি আমাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। ওঁর ভয় হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদী ও আদানির সম্পর্ক নিয়ে এরপরে আরও প্রশ্ন উঠবে।’’ রাহুলের যুক্তি, এর ফলে জনতার মনেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, গৌতম আদানির মতো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিজেপির সবাই কেন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন?
কংগ্রেসের অন্দরের ভাবনা হল, গোটা দেশে জনতার মধ্যে এর প্রচার, সর্বোপরি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন জিইয়ে রাখা যাবে তো?
কংগ্রেসের ইতিহাস বলছে, জরুরি অবস্থার পরে ইন্দিরা গান্ধীকে জেলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতিকেই কাজে লাগিয়ে, মানুষের মধ্যে চলে গিয়ে ইন্দিরা ফের জনসমর্থনের হাওয়া নিজের পালে টেনে এনেছিলেন। নতুন শক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফিরেছিলেন। সংসদ থেকে অপসারিত রাহুল কি তা পারবেন? রাহুল আজ জবাব দিয়েছেন, ‘‘ভারত জোড়ো যাত্রার সাড়ে চার মাস আমি জনতার মধ্যেই ছিলাম। সেটা আমার কাজ, সেটাই করতে থাকব। আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সংবাদমাধ্যম, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাহায্য পেত। আজকের ভারতে তা মেলে না। তাই বিরোধী দলগুলির কাছে জনতার মাঝে যাওয়াটাই একমাত্র রাস্তা।’’ কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হলে তাঁদের দলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে যে হাঙ্গামা করবেন, কংগ্রেস কর্মীরা তা পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে কংগ্রেস সোমবার থেকে দেশ জুড়ে প্রচারে নামবে বলে আগেই ঘোষণা করেছে। আগামিকাল, রবিবার দিল্লির রাজঘাটে কংগ্রেস সারাদিন সত্যাগ্রহ করবে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা তাতে অংশ নেবেন। প্রদেশ কমিটিগুলিকেও বলা হয়েছে রাজ্যের রাজধানী ও জেলা সদরে গান্ধী মূর্তির সামনে সত্যাগ্রহ করতে। তবে এর পরেও কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে মানুষকে কতটা বোঝানো যাবে, সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ। কংগ্রেস নেতাদের মতে, আদানিকে মোদী যে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন, সেটা মানুষকে জানানো অনেক বেশি জরুরি।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য, ২০১৯-এর আগে রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, রাফাল চুক্তিতে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন মোদী। তবে বিষয়টিকে নিচুতলায় প্রচারে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কংগ্রেস নেতাদের মতে, এর পিছনে কারণ হল, সাংগঠনিক দুর্বলতা। এবার বিজেপিও রাহুলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নামবে। তাকে টেক্কা দিয়ে প্রচারটাই আসল চ্যালেঞ্জ।
প্রতারণায় অভিযুক্ত নীরব মোদী, ললিত মোদীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর পদবির মিল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে রাহুল ওবিসি-দের অপমান করেছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। জবাবে রাহুল আজ কংগ্রেসের দুই ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী, রাজস্থানের অশোক গহলৌত ও ছত্তীসগঢ়ের ভূপেশ বঘেলকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। কিন্তু এই দুই রাজ্যেই আদানির বিনিয়োগ রয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্নে রাহুল যুক্তি দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীরা আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেননি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দুই মুখ্যমন্ত্রীর কেউই আদানি নিয়ে রাহুলের মতো সরব হননি।
রাহুল অবশ্য মনে করছেন, সাংসদ পদ খারিজ করে মোদী নিজেই তাঁর হাতে সবথেকে বড় উপহার তুলে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, গতকাল সাংসদ পদ খারিজের পরে সন্ধ্যায় রাহুল পিৎজ়া খেতে বেরিয়েছিলেন। আজ রাহুল বলেন, ‘‘আমাকে কি চিন্তিত দেখাচ্ছে? আমি উত্তেজিত। ওরা আমার হাতে সেরা উপহার তুলে দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy