Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিরক্ষা নিয়ে তোপ রাহুল-অ্যান্টনির

আগামী মঙ্গলবার দু’বছরে পা রাখবে মোদী সরকার। তার আগে সরকারের প্রথম বছরের সাফল্য তুলে ধরতে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখন কেন্দ্রের ব্যর্থতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়গুলি খুঁজে খুঁজে তুলে আনা শুরু করে দিল কংগ্রেস। যেমন রাহুল গাঁধী আজ তুলে আনলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর অবিচারের প্রসঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

আগামী মঙ্গলবার দু’বছরে পা রাখবে মোদী সরকার। তার আগে সরকারের প্রথম বছরের সাফল্য তুলে ধরতে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখন কেন্দ্রের ব্যর্থতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়গুলি খুঁজে খুঁজে তুলে আনা শুরু করে দিল কংগ্রেস। যেমন রাহুল গাঁধী আজ তুলে আনলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর অবিচারের প্রসঙ্গ। আবার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি অভিযোগ করলেন, ‘‘দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারেও আপস করছে মোদী সরকার। মোদী জমানায় প্রতিরক্ষা খাতেও বিপুল বরাদ্দ ছাঁটা হচ্ছে। প্রকারান্তরে ঠুঁটো করে দেওয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীকে।’’ তাঁর এও অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে সেনাবাহিনীর যে মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল ইউপিএ সরকার, তার শক্তিও রাতারাতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।’’

সরকারের প্রথম বছরের মেয়াদ শেষের পর আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার কেন্দ্রের সাফল্য তুলে ধরে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করতে চলেছে মোদী সরকার। তারই পাল্টা হিসাবে সরকারের ব্যর্থতা ও উলটপুরাণ নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করবে কংগ্রেস। এমনকী তা প্রকাশ করে সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সরকারের সেই সমালোচনার আগে রাহুল এখন বিষয় ধরে ধরে আক্রমণের পথ নিয়েছেন। তারই অঙ্গ হিসাবে আজ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ও অফিসারদের এক প্রতিনিধি দলকে কংগ্রেস সদর দফতরে ডেকে বৈঠক করেন তিনি।

লোকসভা ভোটের প্রচার শুরুর সময় হরিয়ানার রেওয়াড়িতে এক সভায় নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলেই সেনাবাহিনীর জন্য ‘এক র‌্যাঙ্ক এক পেনশন ব্যবস্থা’ চালু করবেন তিনি। মোদীর সেই সভাতেই যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা অধুনা বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। আবার মোদীর সেই সভার পর ইউপিএ সরকারের শেষ বাজেটে ‘এক র‌্যাঙ্ক এক পেনশন’ ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ও অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকের পর আজ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাহুল বলেন,‘‘আমরা এ ব্যাপারে শুধু সিদ্ধান্ত নিইনি। অর্থও বরাদ্দ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু চোদ্দো মাস পরেও তা শুরু করতে পারেনি বর্তমান সরকার। সরকার যদি অবিলম্বে ওই প্রকল্প শুরু না করে তা হলে আন্দোলনে নামবে কংগ্রেস।’’

বিজেপি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, সেনাবাহিনীর জন্য ওই প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সরকার। তার আগে কংগ্রেসের কৃতিত্ব মনে করাতে রাহুল মাঠে নেমেছেন। যদিও প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলেন, ‘‘কৃতিত্ব নেওয়ার প্রশ্ন এটা নয়। কংগ্রেস সরকার যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা সেনাবাহিনীর বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সবাই জানেন। বর্তমান সরকার চোদ্দো মাস ধরে ঝুলিয়ে রেখে অপরাধ করছে।’’

এখানেই থেমে থাকেননি অ্যান্টনি। সনিয়া ঘনিষ্ঠ কেরল কংগ্রেসের এই নেতাটি এমনিতে কথা কম বলেন। কিন্তু আজ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে অ্যান্টনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম কোনও সরকার প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছাঁটাই করল। ইউপিএ জমানায় প্রতি বছর প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের ষোলো আনা খরচ হতো। এমনকী বহু বার অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। এই প্রথম প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের মধ্যে ১৩ শতাংশ অর্থ সরকার খরচ করেনি।’’ অ্যান্টনির মতে, এই প্রসঙ্গেই তিনি মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর কথায়, পর পর দুই সেনাপ্রধানের দাবিতে ইউপিএ জমানায় সেনাবাহিনীর এই কোর গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ সেনাপ্রধানদের বক্তব্য ছিল, আশি হাজার সেনা জওয়ান ও অফিসারকে নিয়ে এই কোর তৈরি করাটা সেনাবাহিনীর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন। নইলে চিনের সেনাবাহিনীর শক্তির তুলনায় বহু গুণে পিছিয়ে পড়ছিল ভারতীয় সেনা। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে সেই কোর গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার হঠাৎই ঠিক করেছে সেই কোরের শক্তি অর্ধেক করে দেবে। এনডিএ আমলেই র‌্যাফেল যুদ্ধ বিমান নিয়ে সরকারি তরফেই আপত্তি উঠেছিল। তার পরেও মোদী সরকার কেন এই বিমানগুলি কিনলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেবের কথায়, ‘‘বিমানগুলি কেনার ব্যাপারে ফরাসি সরকারের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে বা কত টাকায় সেগুলি কেনা হয়েছে, তা এখনও মোদী সরকার প্রকাশ করেনি।’’

অ্যান্টনির বক্তব্যের জবাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেছিলেন, ‘‘ইউপিএ সরকার মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জন্য অর্থের সংস্থান করে যাননি।’’ কিন্তু সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথি তুলে ধরে দাবি করেন অ্যান্টনি। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘সরকার পুরো প্যাকেজিং আর মার্কেটিংয়ে চলছে। আসলে ভিতরে সবটাই ফাঁপা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy