বিস্ফোরক রাহুল গাঁধী। বুধবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
ক’দিন আগে বলেছিলেন, লোকসভায় তিনি মুখ খোলার সুযোগ পেলে ভূমিকম্প হবে। আজ সংসদ চত্বরে একজোট বিরোধীদের পাশে নিয়ে কার্যত ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটালেন রাহুল গাঁধী। বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। কারণ, তাঁর ব্যক্তিগত দুর্নীতির কথা আমি জানি। সেই কারণেই ভয় পেয়ে আমাকে লোকসভায় বলতে দিচ্ছেন না। আমার কাছে যা তথ্য আছে, বললে প্রধানমন্ত্রীর বেলুন ফুটো হয়ে যাবে!’’
দেশের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতার মুখ থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন অভিযোগের পরে নড়ে ওঠে রাজধানীর অলিন্দ। গত আড়াই বছরে মোদী আর কোনও সাফল্য দেখাতে পারুন বা না পারুন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেওয়ার কথা বলেন নিরন্তর। তবে রাহুলও খোলসা করেননি, ঠিক কোন দুর্নীতির কথা তিনি বলছেন। এমনকী সেই সময়ে পাশে বসা তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এনসিপির তারিক আনোয়ারেরা ‘রাহুলকে লোকসভায় বলতে দেওয়া হচ্ছে না’ বলে অনুযোগ করলেও কংগ্রেস সহ-সভাপতির অভিযোগ নিয়ে তাঁদের কাছেও কোনও উত্তর নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন, রাহুলের ভাঁড়ারে সত্যিই কি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে? নাকি গত কয়েক দিনে তিনি যে ভাবে বিরোধী জোটের মধ্যমণি হয়ে উঠতে চাইছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে সে পথেই আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চাইলেন? আর অভিযোগ যদি থাকে, তা হলে রাহুল তা স্পষ্ট করলেন না কেন?
এমন হাজারো প্রশ্নের মধ্যে একটির জবাব দিয়েছেন রাহুল। বলেছেন, তিনি নির্বাচিত সাংসদ। অমেঠীর মানুষ তাঁকে লোকসভায় পাঠিয়েছেন। তাই লোকসভাতেই যা বলার বলবেন। যা শুনে অনেকের মত, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও স্পর্শকাতর অভিযোগ করলে তা নিয়ে মানহানির মামলা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু সংসদের অধিবেশনে কিছু বললে তা নিয়ে মামলা ঠোকার সুযোগ নেই। রাহুল এই রক্ষাকবচের সুবিধাটাই নিতে চাইছেন।
একাধিক কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, মোদীর বিরুদ্ধে হাতেগরম অভিযোগ তো রয়েইছে। ২০১৩ সালে সিবিআই কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীতে হানা দিয়ে তাদের সিইও-র কম্পিউটার থেকে একটি নথি উদ্ধার করে। তাতে লেখা ছিল, ‘গুজরাত সিএম’কে ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য জেরার মুখে উল্লিখিত ‘গুজরাত সিএম’ যে নরেন্দ্র মোদী, তা অস্বীকার করে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী। তবে এখনও এ নিয়ে এফআইআর দায়ের হয়নি।
ছিল যে অভিযোগ
• আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর থেকে ২৫ কোটি ঘুষ
• সহারা গোষ্ঠীর থেকে ৪০ কোটি টাকা পাওয়া
• গুজরাতে ২০ হাজার কোটির গ্যাস দুর্নীতি
• আদানি গোষ্ঠীর ২০০ কোটি টাকা জরিমানা মাফ
• ই-ওয়ালেট সংস্থাকে সুবিধে করে দেওয়া
আরও একটি জোরালো অভিযোগ মোদীরই প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলের— বিরোধীদের দাবি, ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর নয়ডায় সহারা গোষ্ঠীর কর্পোরেট দফতরে হানা দিয়ে পাওয়া একটি নথিতে ‘আমদাবাদে মোদীজি’কে ৪০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা লেখা ছিল।
এ ছাড়া, মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০ হাজার কোটি টাকার গ্যাস কেলেঙ্কারি বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আদানি গোষ্ঠীর ২০০ কোটি টাকা জরিমানা মাফ করার মতো অভিযোগ নিয়ে আগেই সরব হয়েছে কংগ্রেস। আর নোট বাতিলের পরে রাহুল নিজেই বলেছেন, ‘‘পেটিএম আসলে পে টু মোদী’’। অর্থাৎ মোদী পুঁজিপতি এবং ই-ওয়ালেট সংস্থাগুলির সুবিধে করে দিচ্ছেন, ইঙ্গিতটা তেমনই।
• আমার ঠোঁটের ভাষা পড়ুন। প্রধানমন্ত্রী ভীত। কারণ, তাঁর ব্যক্তিগত দুর্নীতির কথা আমি জানি। সেই কারণেই ভয় পেয়ে তিনি আমাকে লোকসভায় বলতে দিচ্ছেন না। আমার কাছে যা তথ্য আছে, বললে প্রধানমন্ত্রীর বেলুন ফুটো হয়ে যাবে।
রাহুল গাঁধী, কংগ্রেস সহ-সভাপতি
রাহুলের বিস্ফোরণের পরে অবস্থা সামাল দিতে তৎপর হয়ে ওঠে বিজেপি-ও। তড়িঘড়ি এক ঝাঁক নেতাকে আসরে নামিয়ে দেওয়া হয়। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার পাল্টা বলেন, ‘‘স্টিং অপারেশনে দেখা যাচ্ছে, এআইসিসি দফতরে কালো টাকাকে সাদা করার কল চলছে।’’ কংগ্রেসই ষড়যন্ত্র করে সংসদ চলতে দিচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর কাছে কোনও তথ্য থাকলে গোড়াতেই সংসদে বলতে পারতেন। শেষ বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন কেন?’’ প্রকাশ জাভড়েকরের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো চাই রাহুল বলুন। তিনি যত বলবেন, ততই মুখোশ খুলবে।’’ বস্তুত, সরকারের আর এক শীর্ষ নেতা বলেই দিয়েছেন, ‘‘বিড়লা বা সহারা নথি নিয়ে রাহুল যদি তোপ দাগতে চান, তা হলে মা-বেটার নাম নিয়ে যা যা তথ্য আছে, সরকার সেগুলিও প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারে। রাহুল কি সেটাই চাইছেন!’’
• রাহুল গাঁধীর কাছে কোনও তথ্য থাকলে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই বলতে পারতেন। শেষ বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন কেন? ভিত্তিহীন অভিযোগের জন্য তিনি বরং ক্ষমা চান দেশের কাছে।
অনন্ত কুমার | সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী
আর এই দর কষাকষি নিয়েই মুখ খুলেছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি বলছে, তাদের কাছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কপ্টার-দুর্নীতি আছে। আর কংগ্রেস বলছে, বিজেপির বিরুদ্ধে সহারা-বিড়লা আছে। কিন্তু কেউই পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। এটা গড়াপেটা নয় তো? রাহুল গাঁধীর কাছে মোদীজির দুর্নীতির নথি থাকলে তিনি সংসদের বাইরে তা ফাঁস করছেন না কেন?’’ তৃণমূল মনে করাচ্ছে দু’দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট— ‘‘সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্তরাই দুর্নীতি দূর করার কথা বলছেন!’’
মোদী শিবির বলছে, সম্ভাব্য সব অভিযোগই জনসমক্ষে রয়েছে। তদন্তও হচ্ছে। ফলে আশঙ্কা করার মতো কোনও তথ্য রাহুলের কাছে থাকতে পারে না। কংগ্রেসের বক্তব্য, মোদী কুর্সিতে থাকলে তদন্তের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় আছে। কিন্তু আদালতও আছে। আগে রাহুল অভিযোগ নথিবদ্ধ করুন। তার পর দেখা যাবে জল কোথায় গড়ায়।
কংগ্রেসের হুমকি
• সংসদে রাহুল বলতে পারলে দুর্নীতির ইস্যুতে কফিনে শেষ পেরেক
বিজেপির হুমকি
• রাহুল কি চাইছেন, মা-বেটার বিরুদ্ধেও সরকার নথি প্রকাশ করুক?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy