লোকসভার ধাঁচেই রাজ্যসভাতেও রাতের অন্ধকারে পাশ করিয়ে নেওয়া হল মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব। বিরোধীদের মতে, সরকার মণিপুর প্রশ্নে গোড়া থেকেই ব্যাকফুটে। তাই প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার সাহস করেননি। সংঘর্ষ থামাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিজেদের সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই কখনও মাঝ রাতে, কখন ভোর রাতে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করিয়ে প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়া হল সংসদে।
রাজ্যসভাতেও ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ার পরে রাত ৩টে নাগাদ মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। শেষ হয় তিনটে পঞ্চাশে। কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারির কথায়, ‘‘যেখানে তিন ঘণ্টা আলোচনার কথা ছিল, সেখানে তা পঞ্চাশ মিনিটে শেষ করা হল। রাতের অন্ধকারে সংসদের কালো অধ্যায় লেখা হল।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, মল্লিকার্জুন খড়্গে মণিপুরের হিংসা, ধর্ষণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতা, প্রধানমন্ত্রীর না যাওয়ার মতো বিষয়গুলি তুলেছিলেন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী একবারও মণিপুরে যাননি। সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রসঙ্গে যখন সংসদে প্রস্তাব পাশ হল, তখনও তিনি তাইল্যান্ডে। প্রমোদের কটাক্ষ, ‘‘তাইল্যান্ড খুবই সুন্দর জায়গা। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’’ কংগ্রেসের গৌরব গগৈর কথায়, ‘‘মণিপুরের মানুষ ক্ষমা করবে না।’’
বিরোধীদের মতে, এ ভাবে বিল পাশ করা বুঝিয়ে দিল, এই সরকার প্রয়োজনে কতটা অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নিতে পারে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, ‘‘গত দু’বছর ধরে মণিপুরে সংঘর্ষ চলছে। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩.৮ লক্ষ কিলোমিটার সফর করেছেন। যা পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব। কিন্তু তিনি আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের মণিপুরে যেতে পারেননি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে রাতের অন্ধকারে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করছে সরকার।’’ কেন মাঝরাতে মণিপুর নিয়ে আলোচনা, তা নিয়ে কিছু বলেননি শাহ। তবে সদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘‘সময় কম ছিল বলে মণিপুর নিয়ে রাতে আলোচনা করতে হয়েছে।’’
আজ লোকসভার অধিবেশন বেলা ১২টা ও রাজ্যসভার অধিবেশন বেলা একটায় কার্যত জোর করেই মুলতুবি করিয়ে দিয়ে বাজেট অধিবেশন ইতি টানে শাসকপক্ষ। প্রশ্ন ওঠে, আজ সারা দিন কি দু’টি কক্ষে ওই আলোচনা হতে পারত না? জবাব দেননি রিজিজু।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)