ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত। পুণের ঘটনায় সেই অভিযুক্তকে খুঁজতেই তাঁর বাড়ির কাছের আখখেতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আনা হয়েছে স্নিফার ডগও। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গেও বছর দেড়েক আগে একই পদ্ধতিতে ধান খেত থেকে ড্রোনের মাধ্যমে ডাকতদের ধরা হয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ সেই সময় জানিয়েছিল, অপরাধী ধরতে এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। দেশের মধ্যে তারাই সেটা প্রথম হাতেকলমে করে দেখায়। এ বার সেই পথেই হাঁটল পুণে।
মঙ্গলবার ভোরে পুণের স্বর্গেট বাসস্ট্যান্ডে একটি ফাঁকা বাসে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় পর থেকেই অভিযুক্তের খোঁজে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে ধরতে অপরাধদমন শাখার ৮টি দল-সহ মোট ১৩টি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ঘটনার পর পুণে থেকে পালানোর জন্য একটি সব্জিবোঝাই ট্রাকে উঠেছিলেন অভিযুক্ত। সেখান থেকে পালিয়ে নিজের গ্রামে চলে আসেন। তার পর প্রমাণ লোপাট করার জন্য জামা, জুতো বদলে ফেলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম দাবি করেন, অভিযুক্তের সম্ভাব্য অবস্থান জানা গিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, গোপন সূত্রে তারা খবর পেয়েছে, গ্রামের বাড়ির কাছের একটি আখখেতে লুকিয়ে রয়েছেন অভিযুক্ত। তার পর পুলিশের কয়েকটি দল সেখানে হাজির হয়। অভিযুক্তের তল্লাশিতে স্নিফার ডগ আনা হয়েছে। ড্রোন দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, আখগাছগুলি ১০ ফুটের মতো উঁচু। ফলে ভিতরে ঢুকে খুঁজতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ড্রোনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ধর্ষণের ঘটনা মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টা থেকে ৬টার মধ্যে হয়েছে। নির্যাতিতা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে আসেন। তাঁকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করেন। কোন বাসের অপেক্ষা করছেন জানতে চান। সব কিছু জানার পর তাঁকে বাসডিপোয় একটি বাসের সামনে নিয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘এই বাস ছাড়বে। আপনি ভিতরে গিয়ে বসুন।’’ কিন্তু বাসে অন্য কোনও যাত্রী না দেখতে পেয়ে একটু খটকা লাগে। বাসে উঠে বসেন মহিলা। অভিযোগ, তিনি বাসে উঠতেই ওই ব্যক্তি দরজা আটকে দেন। তার পর তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ।
ওই বাসডিপোয় প্রতি দিন ৫৫ হাজার যাত্রীর যাতায়াত। তা ছাড়াও দিনে ৫০০টি বাস ওই ডিপো থেকে যাতায়াত করে। বাসডিপোর ১০০ মিটার দূরেই রয়েছে থানা। তার পরেও কী ভাবে এই ঘটনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের একটি গয়নার দোকানে ডাকাতির চেষ্টা হয়। তার পর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। গুলিবিদ্ধ হন দোকানমালিক আশিসকুমার দত্ত।
ওই ডাকাত দলটি খড়্গপুর শহর থেকে কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলির দিকে রওনা দিয়েছিল। তাদের ধাওয়া করে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। অন্য দিকে, পুলিশ পিছু নিয়েছে দেখে ফেকো মোড়ের কাছে জাতীয় সড়ক থেকে বাঁদিকে ঢুকে পড়ে ডাকাত দলের গাড়ি। তার পর গোপীবল্লভপুর হয়ে ওড়িশার দিকে রওনা দেয় তারা। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক-সহ বেলিয়াবেড়া থানার রান্টুয়া এলাকায় একটি পুলিশ বাহিনী পৌঁছে যায়। তারা সেখানে ব্যারিকেড তৈরি করে। একটি সাদা রঙের গাড়িকে সন্দেহ হয় তাদের। এত পুলিশ দেখে গাড়ি থেকে নেমে পাঁচ জন দৌড় শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। বেলিয়াবেড়া থানা, গোপীবল্লভপুর থানা-সহ ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন থানা থেকে বিশাল সংখ্যক পুলিশ দিয়ে এই তল্লাশি অভিযান চলে। বেলিয়াবেড়া থানার বালিয়া এলাকায় ড্রোন ওড়ানো হয়। তার পরেই ধান জমি থেকে ডাকাতদলের ৫ সদস্যকে পাকড়াও করে পুলিশ।
খড়্গপুরের সেই অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘ড্রোন উড়িয়ে ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আমরা গ্রেফতার করেছিলাম। উদ্ধার করেছিলাম আগ্নেয়াস্ত্রও। অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে এই কৌশল আমাদের খুব কাজে লাগে। তার পরেও আমরা এই ভাবে বেশ কয়েক বার অপরাধী ধরেছি। অন্য রাজ্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে জেনে ভাল লাগছে।’’ রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ধৃতিমানদের ড্রোন-উদ্যোগকে পুরস্কৃত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।