ছুটির দিনেও ক্ষোভে তেতে রইল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। সেই উত্তাপ ছড়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েও। এখন প্রশ্ন, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনটিতে কি তা আরও বড় আকার নেবে?
প্রশ্নটা এই কারণেই যে গত শুক্রবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতার করা নিয়ে গত তিন দিন ধরে উত্তপ্ত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) চত্বর। যার আঁচ পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। জনপ্রিয় ছাত্রনেতা কানহাইয়ার পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হবে সোমবার। কাল তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে বলে আশা অনেকের। তা না হলে হাওয়া আরও গরম হওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই।
কানহাইয়া-প্রশ্নে রবিবার ছুটির দিনেও জেএনইউ চত্বর ছিল সরগরম। পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং কেন্দ্রের অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় একটি মিছিল বার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। প্রায় হাজার দুয়েক বিক্ষোভকারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যেই জেএনইউ-এর প্রতিবাদী শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছে ৪০টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন। সব মিলিয়ে ক্রমশ জোর বাড়ছে প্রতিবাদীদের। তার মধ্যেই এ দিন দিল্লিতে সিপিএমের সদর দফতর এ কে গোপালন ভবনে এক দল দুষ্কৃতী হামলা চালিয়ে দলীয় সাইনবোর্ডে কালি লাগায় এবং ঢিল ও পাথর ছোড়ে। তাদের সকলকেই ধরে ফেলা হয়েছে। মাথায় অরবিন্দ কেজরীবালের দল ‘আম আদমি পার্টি’-র টুপি থাকলেও পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা সকলেই সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য! পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, জেএনইউ-এর ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর ‘শাস্তি’ হিসেবেই এই হামলা। ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘টুইটের জবাব পাথরে! আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। আজ আমরা। কাল কারা?’’
সিপিএমের সদর দফতরের সাইনবোর্ডে কালি বিক্ষোভকারীদের। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
সব মিলিয়ে জেএনইউ-এর ঘটনায় সঙ্ঘ পরিবার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অস্বস্তি বাড়ছে।
পরিস্থিতি জটিল করে আজ খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, জেএনইউ-এর ঘটনায় সমর্থন রয়েছে লস্কর জঙ্গি হাফিজ সইদের। যা নিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়েছে সরকার। বাম-আপ-কংগ্রেস-সহ একাধিক দলের বক্তব্য, হাফিজ সইদের নাম করা একটি ভুয়ো টুইটার অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে রাজনাথ ওই মন্তব্য করেছেন। ঘটনা হল, সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এ দিনই দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, হাফিজের ওই টুইটার অ্যাকাউন্টটি ডিলিট হয়ে গিয়েছে! এ নিয়ে তারা তদন্তও করবে। আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রাজনাথ যা বলেছেন, তা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন। যদিও তা মানতে নারাজ অনেকেই।
পুণের এফটিআই থেকে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়— গত দু’বছরে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে। তালিকায় নয়া সংযোজন জেএনইউ। যেখানে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে গ্রেফতার করা হয়েছে ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাধিক সূত্রের দাবি, কানহাইয়াকে ফাঁসিয়েছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। অভিযোগ, এবিভিপিরই চার সমর্থক সে দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গোলমালের সময় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছিলেন! এ নিয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও পড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই জেএনইউ-বিতর্ক অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।
নানা মহলের সমালোচনাতেও পিছু হটতে নারাজ বিজেপি। দলের মুখপাত্র শ্রীকান্ত শর্মা জানিয়েছেন, দেশ বিরোধিতার প্রশ্নে কাউকে রেয়াত করা হবে না। মুখে এ কথা বললেও বিরোধীরা যে ভাবে জোট বাঁধছেন, তাতে চিন্তায় সঙ্ঘ নেতৃত্ব। সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপির একাংশ মনে করেছে, বিষয়টি থেকে ফায়দা নিতে গিয়ে হিতে বিপরীত না হয়ে যায়। এমনিতেই গোটা ঘটনায় জেএনইউ-এর অন্দরে একঘরে হয়ে পড়েছে এবিভিপি। বিষয়টি আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে গেলে জেএনইউ-তে তাদের যেটুকু প্রভাব রয়েছে, তা-ও মুছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজেপির অন্দরে।
আজই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে সওয়াল করে ফের মুখ খুলেছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন। গত ক’দিন ধরে সরকার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন মহল থেকে যে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনের বক্তব্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন দেশবিরোধী আখ্যা না দেওয়া হয়। সংগঠনের প্রতিনিধি অজয় পট্টনায়কের মতে, পুলিশি বাড়াবাড়ির কোনও প্রয়োজন ছিল না। পুলিশের অতি-সক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক ও ছাত্রদের যৌথ প্রতিবাদের মুখে আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পাহারা সরিয়ে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy