Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝাঁপ ফেলছে হাওড়া-সহ রেলের সব ছাপাখানা

রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ওই পাঁচটি ছাপাখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেখানকার কর্মীদের রেলে নিরাপত্তার বিভিন্ন বিভাগে বদলি করা হবে। ছাপাখানার বহু কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

মোদী সরকারের আমলে ধাপে ধাপে নিজেদের সব ছাপাখানা গুটিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রেল। সারা দেশে রেলের ১৪টি ছাপাখানার মধ্যে গত বছর ন’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে বাকি পাঁচটি বড় ছাপাখানা (মুম্বই, হাওড়া, দিল্লি, চেন্নাই ও সেকেন্দরাবাদ)-ও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।

রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ওই পাঁচটি ছাপাখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেখানকার কর্মীদের রেলে নিরাপত্তার বিভিন্ন বিভাগে বদলি করা হবে। ছাপাখানার বহু কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রেলের খবর, পাঁচটি ছাপাখানায় প্রায় দু’হাজার কর্মী আছেন। পূর্ব রেলে হাওড়ার ছাপাখানায় আছেন ৫১১ জন কর্মী। ওই ছাপাখানায় পূর্ব রেলের ৫০ কোটির বেশি অসংরক্ষিত টিকিট ছাপা হয়। এ ছাড়াও কয়েকশো ছোট মাপের স্টেশনের পিসিটি বা পেপার কার্ড টিকিট ছাপা হয়। টিকিট ছাড়াও রেলের ছাপাখানায় রিজার্ভেশন ফর্ম, রেলের বিভিন্ন বিভাগীয় কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম, খাতা এবং ‘মানি-ভ্যালু’ (টাকার মূল্য বহন করে, এমন ছাপানো কাগজ) ছাপা হয়। ক্রেডিট নোট ওই তালিকার মধ্যে পড়ে। রেলের কাউন্টার থেকে যে-সব সংরক্ষিত টিকিট বিক্রি হয়, ছাপা হয় তা-ও। মানি-ভ্যালু, সংরক্ষিত শ্রেণির টিকিট ছাপার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ সুরক্ষাযুক্ত যন্ত্র।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে ছাপাখানা বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও প্রথম সারির ওই পাঁচটি কেন্দ্রকে যে এত দ্রুত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই তা ভাবতে পারেননি। প্রায় সব ক’টি ছাপাখানাতেই বছর কয়েক আগে বিপুল ব্যয় করে আধুনিকীকরণ হয়েছে। হাওড়ার ছাপাখানায় বছর চারেক আগে প্রায় ২১ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক যন্ত্র বসানো হয়।

রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ছাপাখানায় প্রচুর কর্মী উদ্বৃত্ত। সেখানে ছাপার কাজে যা খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক কম খরচে বাইরের কোনও সংস্থায় ওই কাজ করা সম্ভব। রেলে অনলাইনেই সব রকম আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই দ্রুত প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে ছাপাখানার। সেখানকার কর্মীদের অন্যত্র কাজে লাগানোই সমীচীন। তা ছাড়া বহু বছর ধরে ওই সব ছাপাখানা চললেও সেখানে নতুন কাজ করে নিজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়নি।

যদিও রেলের কর্মী ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের তরফেই সংস্থার দক্ষতা বাড়ানোর কোনও চেষ্টা করা হয়নি। হাওড়ায় রেলের ছাপাখানায় বহু বছর সংরক্ষিত টিকিটে বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন নেওয়ার অনুমতি মেলেনি। অনুমতি পাওয়ার পরে তাঁরা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন জোগাড় করেছেন।

গত বছর খড়্গপুর ও গার্ডেনরিচের ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দু’টি জায়গায় ২০-২৫ বছর ধরে কাজ করার পরে বহু কর্মীকে কাজ দেওয়া হয় সাঁতরাগাছি ইয়ার্ডে, বিভিন্ন সাইডিংয়ে বা ওয়ার্কশপে। সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না-পেরে অনেকেই স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সূর্যেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেলে খরচ কমানোর নামে যথেচ্ছ বিলগ্নিকরণের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে। সংস্থা পরিচালনার ব্যর্থতার ভার কর্মীদের ঘাড়ে চাপানোটা আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rail Railway Print
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy