স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
এক বছরের ব্যবধানে কতটা ফারাক হয়ে গিয়েছে! গত বছর পনেরো অগস্ট যখন তিনি লালকেল্লায় এসে দাঁড়ান, আগে থেকে তৈরি করা কোনও বক্তৃতা হাতে ছিল না। তবে আশাবাদের আবহ তৈরি করে গিয়েছিলেন। এ বছরও প্রধানমন্ত্রী একই রকম চমক দেবেন, এমনটা তাঁর ঘনিষ্ঠমহলও মনে করেনি। শনিবার সকালে দেখা গেল, লালকেল্লার মঞ্চে তিনি অনেক বেশি রক্ষণাত্মক। আর সেই রক্ষণ করতে গিয়ে দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দেওয়ার পথটাই বেছে নিলেন।
চার সপ্তাহ ধরে বিজেপির মন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের দুর্নীতি নিয়ে হইচই বাধিয়ে সংসদ স্তব্ধ করে দিল কংগ্রেস। বারবার দাবি তুলল, মুখ খুলুন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মোদী সংসদমুখোই হননি। এ দিন যেন তারই জবাব শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে। বললেন, দেশবাসী যে সরকারকে দিল্লিতে বসিয়েছে, পনেরো মাসে এক পয়সার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি তাদের বিরুদ্ধে! যা শুনে রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, ইউপিএ জমানায় তো এ ভাবেই নিজেকে দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন মনমোহন সিংহ!
ঘোষণাও যে ছিল না, তা নয়। তবে প্রথম বছরের তুলনায় অনেক কম। বরং রিপোর্ট কার্ড দেওয়ার তাগিদ ছিল অনেক বেশি। কারণ, বিরোধীদের অভিযোগ যে তাঁকে বিব্রত করেছে, তার ছাপ স্পষ্ট। সে দুর্নীতির বিষয়েই হোক বা স্যুট-বুট, কর্পোরেট সরকারের অভিযোগ।
আর সে জন্যই সেই ভাবমূর্তি শোধরানোর অনেক বেশি চেষ্টা ধরা পড়ল প্রধানমন্ত্রীর গলায়। যা দেখে বিজেপির কেউ কেউ বলছেন, এখন রক্ষণাত্মক খেলার সময়। আর প্রধানমন্ত্রী সেটাই করেছেন।
‘রক্ষণাত্মক’ খেলতে গিয়ে কী কী করেছেন মোদী?
এক দিকে কর্পোরেট সরকারের অভিযোগ সামলাতে বক্তৃতার পরতে পরতে উল্লেখ করেছেন গরিব, কৃষক, দলিত, শ্রমিক, আদিবাসী ও মহিলাদের উন্নয়নের কথা। যা শুনে বিরোধীদের কারও কারও বক্তব্য, ঘাড়ের উপরে বিহার বিধানসভা ভোট এসে পড়েছে যে! অন্য দিকে মোদী দাবি করেছেন মূল্যবৃদ্ধি কমানোর। নতুন ঘোষণার মধ্যে কৃষি মন্ত্রকের নাম বদলে কৃষিকল্যাণ মন্ত্রক রাখার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, বোঝাতে চেয়েছেন, এই মন্ত্রকের মূল কাজ হবে কৃষকদের কল্যাণ। আর হাজার দিনে সাড়ে আঠারো হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়েছেন। তাঁর বক্তৃতায় আরও উঠে এসেছে জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা বন্ধের কথা। গোটা বক্তৃতায় বাইশ বার উল্লেখ করেছেন ‘টিম ইন্ডিয়া’র প্রসঙ্গ। ১২৫ কোটি মানুষের সমীহ আদায়ের জন্য। রোজগার বাড়াতে নতুন নীতি ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ আর সরকারি নিচু পদে বিনা ইন্টারভিউতে নিয়োগের কথাও শুনিয়েছেন।
কিন্তু গোটা বক্তৃতায় মোদী সব থেকে জোর দিয়েছেন ১৫ মাসে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন দেওয়ার দাবিতে। আর সেটি বোঝাতেই তিনি ঠারেঠোরে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসকে। তিনি কোনও রাজনীতি করছেন না— এই দাবি করেও কিন্তু ইউপিএ জমানায় কয়লা, স্পেকট্রামের প্রসঙ্গ সুকৌশলে উত্থাপন করেছেন মোদী। জানিয়েছেন নিলাম করে দুর্নীতি বন্ধের কথা। কিন্তু তার পরেও যে দুর্নীতি রোধ হয়নি, তা-ও কবুল করেছেন।
রাহুল গাঁধীরা এখনও স্মরণ করিয়ে দেন, ভোটের সময় বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। আজ প্রধানমন্ত্রী জানান, ৬৫০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে। বিদেশে কালো টাকা রুখতে যে কড়া আইন হয়েছে, তা লঘু করার জন্যও অনেক জায়গা থেকে চাপ আসছে। কিন্তু সরকার পিছু হঠবে না। গত বছরের রিপোর্ট কার্ড দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, জনধন প্রকল্পে ১৭ কোটি গরিব লোক ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছেড়েছেন ২০ লক্ষ মানুষ। তা ছাড়া, ভর্তুকি সরাসরি ব্যাঙ্কে দিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা কোষাগারের সাশ্রয় হয়েছে।
কিন্তু যাঁরা মোদীকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন, এ দিনের বক্তৃতায় তাঁদের খুশি করার মতো কিছু দেখতে পাচ্ছেন না রাজনীতিকরা। যেমন, এক ব্যক্তি এক পেনশন নিয়ে কোনও ঘোষণা না থাকায় ক্ষুব্ধ অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের বড় অংশ। তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। শিল্পমহলের জন্য তৈরি হয়নি লগ্নির উপযুক্ত পরিবেশ। পাশ হয়নি পণ্য পরিবেষা কর বা জমি অধিগ্রহণ বিল। কৃষকদের কল্যাণে মন্ত্রকের নাম বদলালেও তাঁরা সন্তুষ্ট নন। কারণ, গত এক বছরে তাঁদের জন্যও নতুন কোনও দিশা দেখাতে পারেনি সরকার।
একই ভাবে প্রশ্ন রয়েছে স্বচ্ছ ভারত অভিযান নিয়ে। অনেকেই বলছেন, সরকারি দফতরগুলিই এখনও যথেষ্ট নোংরা! এমনকী, যে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়ার কথা বলেছেন মোদী, তা কী ভাবে শুরু হবে, সেই রূপরেখাও জানে না কেউ। উল্টে দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি অভিযোগ আগামী বছরের জন্যও কাঁটা বিছিয়ে রেখে গিয়েছে মোদীর পথে। বিশেষ করে কংগ্রেস যখন বুঝিয়েই দিয়েছে, এই তাস কাজে লাগিয়ে তারা সরকারের সব কাজ বন্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকর।
এ দিন দুর্নীতি নিয়ে পরোক্ষে কংগ্রেসকেই বিদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাহুল বা সনিয়া গাঁধীর দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন সনিয়া। আর রাহুল বলেছেন, ‘‘আজকের দিন রাজনীতির নয়। আগামিকাল বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy