ফাইল চিত্র
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের আলিগড় থেকে আজ কার্যত আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতা সংগ্রামী ‘জাঠ রাজা’ নামে খ্যাত মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহের নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করলেন। সুকৌশলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এই জাঠ নেতাকে ঘিরে স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ভাষ্য তৈরি করলেন। সেই সঙ্গে দীর্ঘ বক্তৃতায় নাম না করে উত্তরপ্রদেশে বিরোধী দলের সরকার ও কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অকর্মণ্যতা, দুর্নীতি এবং অপশাসনের অভিযোগ এনে যোগী সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেও দেখা গেল তাঁকে।
ভোটের ঢাকে কাঠি ফেলতে কেন জাঠ বলয়কেই বেছে নিলেন মোদী?
রাজনৈতিক শিবির বলছে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কৃষক আন্দোলন এবং তার জেরে মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রতিক মহাপঞ্চায়েত কিছুটা হলেও চাপে রেখেছে যোগী সরকারকে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ তথা পশ্চিমাঞ্চলে জাঠ সম্প্রদায়ের ক্ষোভ অতি প্রকট। তাঁদের সঙ্গে মুসলমানদের সখ্যও দেখা যাচ্ছে নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে। সব মিলিয়ে এই চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাই আজ মোদী করেছেন আলিগড় থেকে। আলিগড়ে উত্তরপ্রদেশ প্রতিরক্ষা শিল্প করিডরের উদ্বোধন করে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতেও দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেছেন, ‘‘এত দিন আলিগড় দেশকে মজবুত তালা উপহার দিয়েছে। এ বার আলিগড় সীমান্তরক্ষার প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠবে।’’
কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কার পরে রাজ্য জুড়ে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয় যোগী আদিত্যনাথ এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ হন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। যোগীকে রাজধানীতে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী এবং অমিত শাহ। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, সেই সময়ে যোগীর গদি টলোমলো হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রী কয়েক মাসে যে অন্তত রাজনৈতিক ভাবে পরিস্থিতি সামলে নিতে পেরেছেন, তা আজ স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই যোগীর নামের আগে তিনটি বিশেষণ প্রয়োগ করেন—‘যশস্বী, তেজস্বী, কর্মঠ’। বিজেপি সূত্র ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, তিন মাস আগেও এই মন্তব্য ছিল অভাবনীয়।
মোদীর কথায়, “২০১৭-র আগে গরিব মানুষ কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির নাগালই পেতেন না। সেগুলি পাওয়ার জন্য একের পর এক চিঠি লিখতে হত। সেই সময়ে উত্তরপ্রদেশে যে দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারিগুলি ঘটেছে, তা মানুষ কোনও দিনই ভুলতে পারবেন না। মাফিয়া এবং গুন্ডারা রাজ্য চালাত। আজ তারা সবাই গারদের পিছনে।” রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কথা বলতে গিয়ে মোদী আরও বলেন, “আগে মানুষ নিজের বাড়ির ভিতরেও ভয়ে কাঁপতেন। মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে ভয় পেত। বাবা-মা আতঙ্কিত হয়ে থাকতেন তারা না ফেরা পর্যন্ত। আজ অপরাধীরা এমন কোনও কাজ করার আগে একশো বার ভাববে।” যদিও মোদীর এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব বলেছেন, ‘‘উনি বরং স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে তথ্য চেয়ে বা ১০০ ডায়াল করে জেনে নিন, কাদের আমলে অপরাধ বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন, রাজ্যের প্রথম দশ জন মাফিয়া কারা। সবাই জানে মুখ্যমন্ত্রী নিজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’’
ভারতের সার্বিক উন্নয়নে উত্তরপ্রদেশ প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে চলেছে বলে দাবি করে মোদী বলেন, “আগে দেশের বিকাশের প্রতিবন্ধক হিসাবে উত্তরপ্রদেশকে দেখা হত। আজ তারা দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।” তাঁর দাবি, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৮ কোটি মানুষকে কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশকে আগামী দিনে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা, বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কথা বলার পাশাপাশি এই রাজ্যে সরকারের বিভিন্ন যোজনার সর্বাধিক বাস্তবায়নের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাঠ রাজা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে নাম না করে কেন্দ্রের কংগ্রেস আমলকেও বিঁধেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘বহু মহান মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তাঁদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। অথচ তাঁরা আড়ালে রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের কথা বর্তমান প্রজন্ম জানেই না। একুশ শতকের ভারত সেই ভুল শুধরে নিচ্ছে।’’ রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আগামী কয়েক মাসে বিজেপির প্রচারের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা আজ আলিগড়ে দাঁড়িয়ে তৈরি করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী তথা রাজ্যের বিজেপি সাংসদ নরেন্দ্র মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy