Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Ayodhya

রামমন্দির: করোনা আক্রান্ত পুরোহিতই

প্রশ্ন উঠেছে, এত ঝুঁকি নিয়ে কেন অযোধ্যার অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে?

ভক্তি: রামের ছবির সামনে এক ভক্ত। বৃহস্পতিবার অযোধ্যায়। পিটিআই

ভক্তি: রামের ছবির সামনে এক ভক্ত। বৃহস্পতিবার অযোধ্যায়। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

অযোধ্যার রামমন্দিরের ভূমিপুজোর আগেই মন্দিরের পুরোহিত কোভিড আক্রান্ত। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরও অন্তত ১৫ জন পুলিশকর্মীর শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।

আগামী ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো ও শিলান্যাস করতে যাবেন। তার ঠিক আগে রামলালার মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাসের সহকারী প্রদীপ দাসের শরীরে করোনা ধরা পড়ায় অযোধ্যা প্রশাসনের রক্তচাপ বেড়েছে। কারণ, গত শনিবারই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে রামলালার অস্থায়ী মন্দিরে পুজোও দেন। যোগীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রদীপ।

প্রশ্ন উঠেছে, এত ঝুঁকি নিয়ে কেন অযোধ্যার অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সচিব রাজেশ ভূষণের যুক্তি, ‘‘আনলক-২–এর গতিবিধিতে মন্দিরের মতো উপাসনাস্থল খোলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।’’ জুন মাসে দ্বিতীয় দফার আনলক-এ মন্দির খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নিয়মাবলি জারি করে, তাতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। মন্দির পরিচালক ধর্মীয় সংস্থাকেও সেই মতো পরামর্শ দেওয়া হয়।

তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজের সরকারের নিয়ম ভেঙেই অযোধ্যার ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন? অযোধ্যার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়াও সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণদেরও থাকার কথা। মোদীর বয়স ৬৯ বছর। ভাগবতেরও তাই। জোশীর বয়স ৮৬ বছর। আডবাণী ৯২-এ পা দিয়েছেন। সরকারি পরামর্শ মানলে তাঁদের কারও অযোধ্যায় যাওয়া উচিত নয়।

বুধবারই ১ অগস্ট থেকে আনলক-৩-এর নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানেও এই পরামর্শ বহাল রয়েছে। তাতে ধর্মীয় সমাবেশেরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। অযোধ্যার অনুষ্ঠান কি ধর্মীয় সমাবেশের মধ্যে পড়ে না? স্বাস্থ্যসচিব সেই প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গিয়েছেন। পুরোহিত, পুলিশকর্মীদের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আজ তড়িঘড়ি মন্দিরের সকলের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। করোনায় আক্রান্ত প্রদীপ দাস যাঁর সহকারী, সেই প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাসই ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ভূমিপুজোর দায়িত্বে থাকবেন। প্রশাসনের দাবি, সত্যেন্দ্র-সহ মন্দিরের বাকি চার পুরোহিতের শরীরে সংক্রমণ মেলেনি। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আরও ১২ জনের শরীরেও করোনা মেলেনি।

অতিমারির মধ্যে কেন মন্দিরের শিলান্যাস করা হচ্ছে, তা নিয়ে শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরের মতো নেতারা প্রশ্ন তুললেও উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক নেতারা নীরব। তা সে কংগ্রেসই হোক বা এসপি, বিএসপি। পওয়ার, ঠাকরে দু’জনেই বলেছিলেন, বড় জমায়েত এড়িয়ে যাওয়া উচিত। মন্দির তৈরি করে করোনা মারা যাবে না বলেও কটাক্ষ করেছিলেন পওয়ার। এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানের মূল কাঠামোই হল ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রধানমন্ত্রী ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিলে তা সাংবিধানিক পদে শপথের লঙ্ঘন হবে।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস, এসপি, বিএসপি নেতারা নীরব। তাঁদের আশঙ্কা, রামমন্দিরের ভূমিপুজোর ফলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেই বিজেপি তা নিয়ে পাল্টা রাজনীতি শুরু করবে। তাতে বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাবে। তারা তখন হিন্দু ভাবাবেগ উসকে দিয়ে মেরুকরণের চেষ্টা করবে। বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী আগেই পওয়ারের মন্তব্যকে ‘রাম-বিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই কারণে স্থানীয় নেতাদের কোনও প্রতিবাদ করতে বারণ করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Temple Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE