মণিপুর হিংসার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরের অশান্তি এবং হিংসায় লাগাম পরাতে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছিল বেশ কিছু বিরোধী দল। কিন্তু এখনই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবার মণিপুর সংক্রান্ত সর্বদল বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি আলোচনার জন্য না-ও উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে যে, তারা এই বিষয়টি নিয়ে এখনই এগোতে রাজি নয়। বরং, মণিপুরের বর্তমান বিজেপি সরকারের উপর আস্থা রাখতেই আগ্রহী।
বিজেপি সূত্রে খবর, মণিপুরের বাসিন্দাদের অনেকেই রাজ্য প্রশাসনের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না— এমন খবর তাদের কাছে এসেছিল। বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ হওয়ায়। উপত্যকা নিবাসী মেইতেইদের সঙ্গে মূলত পাহাড় নিবাসী কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরেই গত মে মাসে প্রথম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। তার পর প্রায় ৪০ দিন কেটে গেলেও এখনও শান্ত হয়নি মণিপুর। এই পরিস্থিতিতে বীরেনকে সরিয়ে অন্য কাউকে সরকারের মুখ করা হবে কি না, তা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বৈঠকের পর।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন নয়াদিল্লিতে শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন হিমন্ত। উল্লেখ্য যে, বিজেপি নেতা হিমন্ত শুধু অসমের মুখ্যমন্ত্রীই নন, উত্তর-পূর্বের ছোটবড় রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বিজেপি যে জোট গঠন করেছে, সেই নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়কও বটে। এমনকি বিজেপির কেউ কেউ তাঁকে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের যাবতীয় রাজনৈতিক সঙ্কটের ‘মুশকিল আসান’ও বলে থাকেন। শাহের সঙ্গে বৈঠকের আগে গত ১০ জুন মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের সঙ্গে বৈঠক করেন হেমন্ত। তার পরের দিন তিনি গুয়াহাটিতে কুকি বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেখা করেন। ওই দুই বৈঠকের আলোচনার নির্যাস শাহকে জানাতেই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন হিমন্ত। সেখানেই তিনি নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘পরামর্শ’ দেন যে, এখনই মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার প্রয়োজন নেই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিজেপির এক নেতা সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে এই প্রসঙ্গে বলেন, “এখন যদি মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়, তবে রাজ্যবাসীর মধ্যে দিল্লির প্রতি আস্থার অভাব দেখা যাবে। কোনও সরকার কি সেটা চাইতে পারে?” বুধবার মণিপুর নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার কথা ঘোষণা করেছে শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী শনিবার, দিল্লির সংসদ ভবনের লাইব্রেরি কক্ষে সব ক’টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বৈঠকে রাজ্যে শান্তি এবং স্থিতাবস্থা ফেরানোর উপরেই বেশি জোর দেওয়া হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। কিন্তু তাতে কোনও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ। হিংসার কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মণিপুরের অনেক বাসিন্দা ঘরছাড়া। কেউ সরকারি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তবে মণিপুরের পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে আরও জটিল হয়ে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy