Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বাঙালি নিধন ঘিরে অসমে রাজনৈতিক চাপান-উতোর 

স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনসুকিয়ার বাসিন্দা শ্যামলাল বিশ্বাস, সুবল দাসদের পরিবার। এমনকি, অসমের বিভিন্ন অংশের বাঙালিরা যখন এনআরসির খসড়াছুট হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন, খেরবাড়ির বাঙালিরা তখন নিশ্চিন্তে, নির্ভয়েই ছিলেন।

বিক্ষোভ: গণহত্যার প্রতিবাদে আলফার কুশপুতল পুড়ল অসমের তিনসুকিয়ার রাস্তায়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভ: গণহত্যার প্রতিবাদে আলফার কুশপুতল পুড়ল অসমের তিনসুকিয়ার রাস্তায়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৭
Share: Save:

স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনসুকিয়ার বাসিন্দা শ্যামলাল বিশ্বাস, সুবল দাসদের পরিবার। এমনকি, অসমের বিভিন্ন অংশের বাঙালিরা যখন এনআরসির খসড়াছুট হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন, খেরবাড়ির বাঙালিরা তখন নিশ্চিন্তে, নির্ভয়েই ছিলেন। খসড়ায় নাম তাঁদের উঠে গিয়েছে। কিন্তু হামলা হল সেখানেই। যে হামলার পিছনে রাজনীতির ‘অঙ্ক’ দেখছে কংগ্রেস, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, এমনকি শাসক বিজেপিও।

বিজেপির হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের নেতৃত্বে ২৬টি বাঙালি সংগঠনের জোট বাঁধা ও তাদের প্রস্তাবিত গণসমাবেশের বিরুদ্ধে অসমের বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন ঘিরে গত এক মাস ধরেই চাপে রয়েছেন বাঙালিরা। পুজোর মুখে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালি সংগঠনগুলিকে সতর্ক করেছিল আলফা। আলোচনাপন্থী আলফা নেতা মৃণাল হাজরিকা, জিতেন দত্তরা ‘ঘরে ঘরে ঢুকে’ বাঙালিদের মারার হুমকি দেন। পাল্টা মারের হুমকি দেন বাঙালি নেতারাও। একাধিক নেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও রাজ্য সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। আজ ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিজিৎ চৌধুরির অভিযোগ, সাধারণ দরিদ্র বাঙালিদের ‘বোড়ে’ বানিয়ে বিজেপি ভোটে ফায়দা লুঠতে চাইছে। কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের মতে, রাজ্যে অশান্তি ছড়ানো হয়েছে সুকৌশলে। বাঙালি প্রীতির নামে শিলাদিত্য দেব নাগাড়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে অশান্তির আগুন ছড়িয়েছেন। বিজেপি বাঙালি প্রীতির আড়ালে চায়, বাঙালিরা যেন ভয়ে ভয়ে বাঁচে। তবেই বাঙালি ভোট ব্যবহার করতে পারবে।

আরও পড়ুন: রাফালে ‘ঘুষ’! ফাঁস রাহুলের

উস্কানি দমনে অক্ষমতা ও গত কালের ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরকেই দায়ী করেছেন বিজেপি বিধায়ক মৃণাল শইকিয়া। তবে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সব দল-সংগঠনকে সংযত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দোষীরা কোনও ভাবেই পালাতে পারবে না। তবে তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন দল, সংগঠন, সংবাদমাধ্যমের একাংশ ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের উস্কানিমূলক মন্তব্যও ঘটনার জন্য দায়ী। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রঞ্জিৎ দাস বলেন, ‘‘দলের কেউ উস্কানিমূলক মন্তব্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: ৪৫২২ দিন পরে আর্জি কেন বফর্সে

তার পরেও বিজেপির বাঙালি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব এই ঘটনায় নিজের সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি চিরকাল আলফা ও হিংসার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। জঙ্গল থেকে পালিয়ে এসে সরকারি খরচে বিলাসী জীবন কাটানো আলফা নেতারা যখন অসম রক্তাক্ত করার হুমকি দিচ্ছিল, তখনই সরকারের কড়া হাতে তাদের দমন করা উচিত ছিল।’’

উত্তপ্ত বরাক, আজ বন্‌ধ: বাঙালি-নিধনের ঘটনায় কার্যত রাজনীতি নির্বিশেষেই সকাল থেকে প্রতিবাদে মুখর দক্ষিণ অসমের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা। দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ, জমায়েত, মিছিল। বন্‌ধ ডেকেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। কেউ যৌথ ভাবে, কেউ পৃথক ভাবে। বিভিন্ন গৈরিক সংগঠনও জোট বেঁধে এ দিন তৈরি করেছে ‘রাষ্ট্রবাদী যৌথ মঞ্চ’। বিজেপি সরাসরি বন্‌ধের ডাক না দিলেও, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ এই মঞ্চ শনিবার অসম বন্‌ধ পালনের ডাক দিয়েছে। কংগ্রেসও ১২ ঘণ্টার বরাক বন্‌ধ ডেকেছে। নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি-ও শনিবার বরাকে বন্‌ধ পালনের ডাক দিয়েছে।

শুক্রবার সকালেই বৈঠকে বসে ‘নর্থ ইস্ট লিঙ্গুইস্টিক অ্যান্ড এথনিক কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ (নেলেক)। তারাই বন্‌ধ ডাকার প্রস্তুতি শুরু করে। অন্য গৈরিক সংগঠন তাদের আহ্বানে শামিল হয়। সেখানেই তৈরি হয় রাষ্ট্রবাদী যৌথ মঞ্চ। বেলা বাড়তেই প্রতিবাদী জমায়েতে মিলিত হয় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদও। বিকেলে শহরে বেরোয় প্রতিবাদ মিছিল। কোনও সংগঠন এর আহ্বায়ক না হলেও শিলচরে আন্দোলনের পরিচিত মুখদের অনেকেই তাতে শামিল হন। সন্ধ্যায় পথসভা করে সিপিএম।

অন্য বিষয়গুলি:

Tinsukia Killing Amnesty International BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE