Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জেএনইউ: পুলিশের সামনেই তেড়ে গেল ওরা

স্লোগানযুদ্ধের মধ্যেই গেরুয়া বাহিনীর গলায় ‘দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ’ শুনে পাল্টা উড়ে এল পড়ুয়াদের গলায় ‘দিল্লি পুলিশ মুর্দাবাদ’।

পুলিশের সামনেই জেএনএউ-র পড়ুয়াদের হুমকির অভিযোগ গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে। ছবি: পিটিআই।

পুলিশের সামনেই জেএনএউ-র পড়ুয়াদের হুমকির অভিযোগ গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে। ছবি: পিটিআই।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৭
Share: Save:

‘হাল্লাবোল হাল্লাবোল’। ‘হাম ছিন কে লেঙ্গে আজাদি’।

কয়েকশো কণ্ঠের তুমুল গর্জনের স্লোগানের জবাবে উল্টো দিক থেকে উড়ে আসছে মুষ্টিমেয় কয়েক জনের গলায় ‘দেশ কে গদ্দার কো, গোলি মারো শালে কো’।

রাত সাড়ে এগারোটা। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর গেটের সামনে রাস্তাটা প্রায় অন্ধকার। ইতস্তত দাঁড়ানো অসংখ্য টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যানের জোরালো আলো আর কিছু মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটে যেটুকু দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যেই চলছে দু’দলের স্লোগান যুদ্ধ। এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। উল্টো দিকে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি কর্মী-সমর্থক ও
তাঁদের সঙ্গী স্থানীয় কিছু বিজেপি নেতা-কর্মী। তাঁদের আবার অনেকের মুখে রুমাল বাঁধা!

স্লোগানযুদ্ধের মধ্যেই গেরুয়া বাহিনীর গলায় ‘দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ’ শুনে পাল্টা উড়ে এল পড়ুয়াদের গলায় ‘দিল্লি পুলিশ মুর্দাবাদ’। সে সবে অবশ্য ভ্রুক্ষেপ নেই পুলিশের। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে মাথায় হেলমেট চাপানো উর্দিধারী বাহিনী তখন উদাস চোখে তাকিয়ে বন্ধ উত্তর গেটের দিকে। পুলিশের রকম সকম দেখে পড়ুয়াদের দিকে মাঝেমধ্যেই তেড়ে যাচ্ছে গেরুয়া বাহিনী। পাল্টা তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসছে পুলিশের কাছে।

বন্ধ উত্তর গেটের ভিতরে ক্যাম্পাসের ছবিটা অন্য রকম। থমথমে। ইতস্তত ছড়ানো কাচের টুকরো, ভাঙা লাঠি।

একাধিক হস্টেলের ঘর লন্ডভন্ড। বাইরের চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাও। সেই দলে ছাত্রনেতা এন সাঁই বালাজি, ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকেত মুন, জেএনইউটিএ-র প্রেসিডেন্ট সুরজিৎ মজুমদারও আছেন। প্রত্যেকের এক অভিযোগ— পুলিশের সামনেই চলেছে তাণ্ডব চালিয়েছে মুখে কাপড় বাঁধা গেরুয়া বাহিনী। হামলা হয়েছে একাধিক ছাত্রীর ঘরেও। আতঙ্কিত কয়েক জন পড়ুয়া বললেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি তো কোনও শক্তিই নয়। আজ যারা হামলা করেছে, তারা বাইরের লোক। মুখ ঢেকে এসে পুলিশের সামনেই হামলা চালিয়েছে। এক ছাত্রের কথায়, ‘‘ওদের বড় কোনও কিছু ঘটানোর লক্ষ্য ছিল। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর যে ভাবে মাথা ফেটেছে, তাতে সেটাই মনে হচ্ছে।’’

গেটের বাইরে এবিভিপি নেতাদের আবার উল্টো কথা। তাঁদের বক্তব্য, বাম ছাত্রছাত্রীরাই আগে হামলা চালিয়েছে। তাঁদেরও অনেকে আহত। কিন্তু বাম ছাত্রছাত্রীরা কেন হামলা চালালেন? উত্তর নেই। ঐশী ঘোষ-সহ একাধিক মহিলা আহত হলেন, অথচ আপনাদের কারও আঘাত লাগেনি? প্রশ্ন শুনে ভিড়ের মধ্যেই গা ঢাকা দিলেন নেতারা।

ইতিমধ্যেই খবর এল ক্যাম্পাসের ভিতরে-বাইরে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। উত্তর গেটের কাছে পৌঁছে যান বিশ্ববিদ্যালয়-প্রাক্তনী এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব-সহ অনেকে। অভিযোগ, পুলিশ যোগেন্দ্রকে হেনস্থা করে। এক সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখালেও পুলিশের লাঠির হাত থেকে রেহাই পাননি। আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীদের থেকে জানা গেল, আহত পড়ুয়াদের চিকিৎসার জন্য আসা একটি মেডিক্যাল টিমের উপরেও হামলা করেছে গেরুয়া বাহিনী। এবং পুলিশ নির্বাক দর্শক হয়েই ছিল।

রাত ১০টা নাগাদ সবরমতী ধাবার সামনে পড়ুয়াদের জড়ো হতে বলা হয়। প্রাক্তনীরা পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢোকেন। প্রাক্তনীরা বলছেন, উত্তর গেটের কাছে বজরং দল এবং এবিভিপি সমর্থকেরা জটলা পাকাচ্ছে। অভিযোগ, তাদের অনেকেই পুলিশের সামনে মুখে রুমাল বেঁধে সশস্ত্র অবস্থায় ঘুরছে।

রাত বাড়ছে। বহু ছাত্রছাত্রী আইটিও ঘেরাওয়ের ডাক দিয়ে রওনা দিয়েছেন মিছিল করে। কয়েক জন তবু দাঁড়িয়ে উত্তর গেটের সামনে। বলা তো যায় না, আবার হামলা হলে?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy