ইউজিসি আয়োজিত উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কনক্লেভে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
বাবাসাহেব অম্বেডকরের পরে এ বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এ পি জে আব্দুল কালাম। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে শুক্রবার তাঁদের দু’জনের মন্তব্যকে হাতিয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউজিসি আয়োজিত ‘কনক্লেভ অন ট্রান্সফরমেশনাল রিফর্মস ইন হায়ার এডুকেশন আন্ডার ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষা শুধু আমাদের জ্ঞান দান করে না, নিজেদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। আমাদের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বৃহত্তর দর্শন সেটাই।’’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে তাঁর আদর্শের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আজ প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখ করেছেন প্রয়াত বিজ্ঞানী-রাষ্ট্রপতির কথা। তিনি বলেন, ‘‘কালাম বলতেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হল উৎকর্ষ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভাল মানুষ গড়ে তোলা। শিক্ষকেরা পারেন এমন মানুষ গড়তে। শিক্ষানীতি বদলের উদ্দেশ্য হল, উন্নত শিক্ষার্থী ও দক্ষ পেশাদারের পাশাপাশি জাতীকে আরও ভাল মানুষ দেওয়া।’’
বিরোধীদের তরফে তাড়াহুড়ো করে, সংসদে আলোচনা এড়িয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি বদলের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তামিলনাড়ু-সহ কয়েকটি রাজ্য ‘হিন্দি আধিপত্যবাদ’ নিয়েও সরব হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আজ সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘তিন-বছর ধরে সমীক্ষা, আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতেই জাতীয় শিক্ষানীতি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। কোনও অঞ্চলের প্রতি পক্ষপাতও করা হয়নি।’’ তাঁর দাবি, একুশ শতকের ভারতের চাহিদার কথা ভেবে উন্নয়নের নয়া শিখর ছোঁয়ার লক্ষ্যেই নয়া শিক্ষানীতির রূপরেখা তৈরি করেছে কেন্দ্র। তাঁর কথায়। ‘‘এই শিক্ষানীতি নতুন ভারতের ভিত্তি তৈরি করবে। বিষয়টি নিয়ে এখন দেশজুডে় আলোচনা চলছে। এমন বিতর্ক স্বাস্থ্যকর।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়াল নিশঙ্ক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোতরে, প্রাক্তন ইসরো অধিকর্তা তথা নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) বিষয়ক পরমার্শদাতা কমিটির প্রধান কে কস্তূরীরঙ্গন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালকেরা এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভিডিয়ো কনফারেন্সে হাজির ছিলেন। গত সপ্তাহে ‘স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথন ২০২০’ গ্র্যান্ড ফিনালের সূচনাপর্বের বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, নয়া শিক্ষানীতিতে লোকাল ও গ্লোবালের মেলবন্ধন ঘটবে এবং বাবাসহেব অম্বেডকরের আকাঙ্খা পূরণ করে শিক্ষা সুলভ হবে। আজ তাঁর মন্তব্য, ‘‘গ্লোবাল সিটিজেন হলেও যাতে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না হয়, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: কী ভাবে ভাবতে হয়, তাতেই গুরুত্ব জাতীয় শিক্ষানীতিতে: মোদী
মোদীর দাবি, প্রত্যেক দেশই তাদের শিক্ষানীতিকে জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলে। সেই মতো শিক্ষানীতির সংস্কার করে। কিন্তু এ দেশের পুরনো শিক্ষানীতিতে তা অনুসরণ করা হয়নি। নজর দেওয়া হয়নি ঔৎসুক্য, উৎকর্ষ ও চাহিদার ভারসাম্য রাখার বিষয়টিতে। ফলে কখনও চিকিৎসক, কখনও ইঞ্জিনিয়ার, কখনও আইনজীবী হওয়ার প্রতিযোগিতা চলেছে। নয়া শিক্ষানীতি এমন ইঁদুর দৌড় থেকে মুক্তি দেবে পড়ুয়াদের। তাঁদের মৌলিক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটবে। তাঁর কথায়, ‘‘দুই শিক্ষানীতির বড় পার্থক্য হল আগে শুধু ‘কী ভাবতে হবে’ সে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। নয়া শিক্ষানীতি গুরুত্ব দিয়েছে, ‘কী ভাবে ভাবতে হবে’ তার উপরেও।’’
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতির সাফাই দিতে অম্বেডকর শরণে মোদী
শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা ভেবেই নয়া শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পড়াশোনা, ১০+২-এর বদলে ৫+৩+৩+৪ শিক্ষা-কাঠামো এবং মাঝপথে পাঠক্রম বদলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মোদীর দাবি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘নতুন শিক্ষানীতিতে প্রযুক্তি ও প্রতিভার মেলবন্ধন ঘটবে। যুব সমাজের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। একই কর্মক্ষেত্রে জীবনভর আটকে থাকতে হবে না।’’ এম ফিল বাতিলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি মোদী কিছু বলেননি আজ। তবে ‘অনুসন্ধান, আলোচনা এবং বিশ্লেষণ নির্ভর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি’ গ্রহণ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি জরুরি বলে জানান তিনি। মোদীর মতে, ‘‘শুধু সরকারি নির্দেশিকা জারি করে নয়া শিক্ষানীতি কার্যকর করা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy