Advertisement
E-Paper

শতাব্দীপ্রাচীন সৌধে নেতাজি স্মরণ পর্বে মোদী-মমতা আর মধ্যে ‘দো গজ কি দূরি’

একে অপরকে নমস্কার প্রতি নমস্কারও জানান। তখন মুখোমুখি হলেও তা ক্ষণিকের।

শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের নানা মুহূর্ত।

শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের নানা মুহূর্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৩
Share
Save

পাশাপাশি গেলেন। কিন্তু কাছাকাছি হলেন না। শতাব্দীপ্রাচীন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আগাগোড়া দূরত্ব বজায় রেখে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শনিবার প্রথম সাক্ষাতে নমস্কার বিনিময় হয়েছিল। মমতা উত্তরীয়ও পরিয়ে দিয়েছিলেন মোদীকে। কিন্তু বরাবর দু’জনের মধ্যে দূরত্বটুকু চোখে পড়েছে। ভিক্টোরিয়ায় বিভিন্ন প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময়েও কাছাকাছি তো নয়ই, খুব কম সময়ই পাশাপাশি দেখা গেল কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই প্রধানকে। অনেক সময় দূরত্ব এতটাই বাড়ল যে ক্যামেরায় মোদীর ফ্রেমেরও বাইরেই রয়ে গেলেন মমতা। বারবার সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছিলেন বটে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু তা-ও তেমনকিছু ঘটল না। তখনও অবশ্য মমতা বক্তৃতা দেওয়ার আগে জনতার একাংশ থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠেনি। মমতাও প্রতিবাদে বক্তৃতা না দিয়ে পোডিয়াম ছাড়েননি। কিন্তু কোথাও একটা অন্তর্লীন টেনশনের স্রোত বইছিল উভয় তরফেই। দু’জনকেই খানিকটা আড়ষ্ট দেখাচ্ছিল। যে আড়ষ্টতা থেকে গেল আগাগোড়া। থেকে গেল অন্তত দু’গজের দূরত্ব।

কোভিড বিধি মেনে মঞ্চে এবং মঞ্চের সামনে দু’জনের আসন পাশাপাশি থাকলেও দূরত্ব ছিল। সাধারণত পাশাপাশি আসন থাকলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা পরস্পরের সঙ্গে ঝুঁকে পড়ে কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে তার অবকাশ ছিল না। কিন্তু জনতার এটাও নজর এড়ায়নি যে, মোদী একবারও তাকালেন না মমতার দিকে। মমতাও কখনও ব্যস্ত রইলেন মোবাইলে। কখনও তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে। অনুষ্ঠান শেষের পর দু’জনে সামান্য কুশল বিনিময় হল বটে। কিন্তু তাতেও ‘উষ্ণতা’ চোখে পড়েনি। বোলপুরের অনুষ্ঠানে যে মমতা মোদীকে স্বাগত জানাতে হেলিপ্যাডে হলুদ গোলাপের তোড়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, সেই মমতাকে শনিবার চোখে পড়েনি। তেমনই শনিবার চোখে পড়েনি সেই মোদীকেও, যিনি হাস্যমুখে সেই পুস্পস্তবক গ্রহণ করেছিলেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালনের ‘নামকরণ’ থেকেই দু’জনের দূরত্বের সূচনা। মোদীর ‘পরাক্রম দিবস’ বনাম মমতার ‘দেশনায়ক দিবস’ বিবাদ শুরু হয়েছিল আগেই। এর পর শনিবার সকালে এলগিন রোডে নেতাজিভবনে গিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করে দিনের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা। মোদীও গিয়েছিলেন নেতাজি ভবনে। এর পর জাতীয় গ্রন্থাগারের অনুষ্ঠান সেরে তিনি আসেন ভিক্টোরিয়ায়। সেখানে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের সূচনা অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের আগে দু’জনে ঘুরে দেখেন নেতাজিকে নিয়ে প্রদর্শনী। সাক্ষাতেই মোদীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা। কিন্তু তা-ও খানিক দূর থেকে। সম্ভবত কোভিড বিধি মেনেই। একে অপরকে নমস্কার প্রতি নমস্কারও জানান। তখন মুখোমুখি হলেও তা ক্ষণিকের।

প্রথম সাক্ষাতে মোদীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা। তার পর মুখোমুখি হলেন অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে।

প্রথম সাক্ষাতে মোদীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা। তার পর মুখোমুখি হলেন অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে।

সৌজন্য বিনিময়ের পরেই শুরু হয় এক সঙ্গে হাঁটা। মিনিট পনেরো দু’জনে একসঙ্গেই ঘুরলেন সৌধের অন্দরে। সারাক্ষণ সঙ্গে ছিলেন ধনখড়। বলা ভাল, দু’জনের মাঝখানে ছিলেন ধনখড়। একটা সময়ে দেখা গেল, তিনি বারবার মমতাকে মোদীর পাশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে মমতা খুব আগ্রহ দেখাননি বলেই মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এক নিরাপত্তারক্ষীও একবার মমতাকে মোদীর পাশে এগিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু দূরত্ব কমাননি মমতা। বরং আরও খানিকটা দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছেন। দেখা গিয়েছে, কোলের কাছে দু’হাত আড়াআড়ি গুটিয়ে রেখেছেন। মোদীও বিভোর হয়ে প্রদর্শনীর দিকে মন দিয়েছেন। দেশের যে অঙ্গরাজ্যে তিনি এসেছেন, তার প্রশাসনিক প্রধান যে পিছিয়ে পড়েছেন, সেই বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অবগত বলেই মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, তিনিও ‘দো গজ কি দূরি’ রাখতে আগ্রহী। কোভিড সংক্রমণের সময় থেকেই মোদী বারবার বলেন, ‘‘দো গজ কি দূরি, মাস্ক হ্যায় জরুরি।’’ ঘটনাচক্রে, শনিবার দেখা গেল, নিজের বক্তব্যের প্রথমাংশে অটল রইলেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয়াংশটি মানলেন না। দূরত্বটি বজায় রাখলেও প্রদর্শনীতে ঢুকেই মুখ থেকে মাস্ক খুলে হাতে নিয়ে নিলেন মোদী। মমতা অবশ্য কোভিড বিধি মেনে সারাক্ষণই শারীরিক দূরত্ব এবং মুখে মাস্ক রেখেছিলেন।

এর আগে কলকাতায় মোদী-মমতাকে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল প্রায় এক বছর আগে মিলেনিয়াম পার্কে। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে। তখন সিএএ নিয়ে প্রবল বিরোধিতা চালাচ্ছিল তৃণমূল। তারও মধ্যে সে দিন রাজভবনে বৈঠক করেছিলেন মোদী-মমতা। শনিবার তেমনকিছু চোখে পড়েনি। শনিবারের ছবি বরং মনে করিয়ে দিয়েছে ২০১৮ সালের ২৫ মে-র কথা। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ছিলেন মোদী-মমতা। ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। মোদী ও মমতার মাঝখানে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মঞ্চের প্রোটোকল মেনে দুই প্রধানমন্ত্রীর বসার ব্যবস্থা পাশাপাশি ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ছবি তোলার সময়ে কিছুক্ষণ মোদীর পাশে থাকার পর মমতা দ্রুত হেঁটে চলে যান হাসিনার পাশে। শনিবার ধীরে হেঁটেই দূরত্ব বাড়ালেন তিনি। সেই দূরত্ব কমানোর কোনও চেষ্টা দেখা গেল না মোদীর তরফেও।

Mamata Banerjee Narendra Modi Netaji Subhash Chandra Bose

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।