ফাইল চিত্র।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জেলাশাসকদের সঙ্গে শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এ দিনের বৈঠকে এ রাজ্যের কোনও জেলাশাসক (ডিএম) ছিলেন না বলেই প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। তার পরেও এ রাজ্যে সেই বৈঠক নিয়ে দিনভর চর্চা হয়েছে। সম্প্রতি আইএএস-দের ক্যাডার বিধি সংশোধন করতে চেয়েছে কেন্দ্র। এ দিন জেলাশাসকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি বৈঠকের পরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, এই অফিসারদের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার বার্তাই কি দিল কেন্দ্র? কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলাশাসকদের বৈঠক সাম্প্রতিক অতীতে অন্তত দেখা যায়নি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আইএএস এবং আইপিএস ক্যাডার বিধি সংশোধন করতে চেয়ে রাজ্যগুলিকে বার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এমনকি, কেন্দ্র চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেপুটেশন অথবা নির্ধারিত পদে যোগ দিতে অফিসারদের ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য রাজি না হলে বিধির কড়া প্রয়োগের বার্তাও দিয়েছে কেন্দ্র। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বক্তব্য, প্রস্তাবিত সংশোধিত বিধি কার্যকর হলে অফিসার-নিয়ন্ত্রণের কার্যত পুরো রাশই চলে যাবে কেন্দ্রের হাতে। তাই অফিসারদের দায়বদ্ধতাও অনেকাংশে কেন্দ্রের প্রতি থাকবে। ঘটনাচক্রে, প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের বৈঠকের ‘মনোভাব’-এর সঙ্গে এই তত্ত্বের একটা মিল রয়েছে বলে
মনে হচ্ছে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রের এমন আচরণে রাজ্য প্রশাসন যারপরনাই রুষ্ট। তাঁদের মতে, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। রাজ্য প্রশাসনের অনেকেরই প্রশ্ন, কেন তাঁদের এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলবেন? জেলাশাসকেরা কেন যোগ দিলেন না সে প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে জানা গিয়েছে, রাজ্য বা কেন্দ্র-কারও তরফে এমন কোনও বৈঠকে যোগ দেওয়ার বার্তা জেলা
প্রশাসনগুলির কাছে পৌঁছয়নি। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যের কাছেও এমন কোনও বৈঠকের প্রস্তাবই আসেনি।
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ১৪২টি জেলাকে তালিকাভুক্ত করেছে, যেগুলিতে কয়েকটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। ওই জেলাগুলির মানোন্নয়নে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ ভাবে কাজ করবে বলে এ দিনের বৈঠকে বার্তাও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, উন্নয়নের প্রশ্নে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের সরাসরি যোগাযোগ রাখা জরুরি বলে প্রধানমন্ত্রী জেলাশাসকদের পরামর্শ দিয়েছেন। গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষের আয়ুষ্মান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ, সরকারি বিমা-পেনশন, বাড়ি তৈরির কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আরও পরামর্শ, প্রত্যেক জেলাকে ১০টি করে কাজ বেছে নিতে হবে, যা পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। জেলাশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা তৈরিতে নীতি আয়োগকে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। জেলাগুলির সমস্যা নথিবদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোদী জানিয়েছেন, কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলা প্রশাসনগুলিকে একত্রিত হয়ে সামনের চ্যালেঞ্জগুলি মেটাতে হবে।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে জেলাশাসকদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পদক্ষেপ করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় তাঁদের পড়তে হচ্ছে, তা-ও ছিল মোদীর জিজ্ঞাসার তালিকায়। কোনও কাজের পরিদর্শন করতে গিয়ে দরকারে রাত্রিবাসের পরামর্শও জেলাশাসকদের দিয়েছেন তিনি। তাঁর আরও বক্তব্য, আগামী দু’বছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা দরকার। জেলাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি দিতেও পদক্ষেপ করতে হবে। যে সব জেলার অগ্রগতি প্রত্যাশার থেকে কম রয়েছে, আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy