(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথম দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আগামী ৮ জুলাই মস্কোয় যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। কূটনৈতিক শিবির বলছে, সেই সঙ্গে ভারতের অতীতের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনও নতুন চেহারায় যেন ফিরে আসছে।
পাঁচ বছর পরে রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। মস্কো ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে এই প্রথম। সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি তাঁর দেখা হয়েছিল ২০২২ সালে উজ়বেকিস্তানে, এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে পার্শ্ববৈঠকে। সেখানে মোদী পুতিনকে জানিয়েছিলেন, ‘‘এই সময় যুদ্ধের নয়। জ্বালানি, খাদ্য এবং সারের নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।’’ গঙ্গা এবং ভলগা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে যাওয়ার পরে ফের মুখোমুখি মোদী-পুতিন।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, গোটা বিশ্ব সার্বিক ভাবে দুই মেরুতে বিভক্ত, সেই কথা মাথায় রেখেই মোদীর আসন্ন সফরকে দেখা প্রয়োজন। এক মেরুতে রয়েছে উদার গণতন্ত্র তথা পশ্চিমি বিশ্ব। অন্য দিকে, রাশিয়া এবং চিনের যৌথ অক্ষ, যারা ২০২২ সালে বুক বাজিয়ে ঘোষণা করেছিল, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার ‘কোনও সীমাপরিসীমা থাকবে না’। দুই সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলা ভারত তাই স্বাধীনতার পরের জোটনিরপেক্ষতাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তির কথায়, “এই দুই পক্ষই পরস্পরকে বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে গণ্য করে। পরস্পরের প্রভাব দুর্বল করার চেষ্টায় ব্যস্ত। তাতে আন্তর্জাতিক শান্তি অথবা আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এই দৃশ্য ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনছে।”
আমেরিকার সঙ্গে রণকৌশলগত অংশীদারি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই মস্কো থেকে অশোধিত তেল আমদানি দ্বিগুণ করেছে নয়াদিল্লি। সেইসঙ্গে প্রতিরক্ষায় অংশীদারিও বাড়ানো হয়েছে। আসন্ন মস্কো বৈঠকে পুতিন মোদীর সম্মানে নৈশভোজ দেবেন। গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া নৈশভোজকে তা ছাপিয়ে যেতে পারে কি না, তার দিকে লক্ষ্য থাকবে কূটনীতিকদের।
সূত্রের খবর, মোদী-পুতিন বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার পেতে চলেছে। এক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকা নয়াদিল্লির রফতানি বাড়ানো। দুই, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়ে আটকে পড়া ভারতীয়দের দ্রুত ফেরত পাঠানো। তিন, প্রতিরক্ষা সমঝোতাকে আরও শক্তিশালী করা।
বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রার কথায়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে পাল্লা অত্যন্ত বেশি রকম রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ তেল সে দেশ থেকে আমদানি করার ফলে ভারসাম্য আরও কমছে। সেই পাল্লা কী ভাবে সোজা করা যায়, সে দিকে জোর দেবেন মোদী। চিনকে নিয়ে ভারতের সীমান্ত সমস্যা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, বণ্টন ব্যবস্থায় ধাক্কা, খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা, গরিব দেশগুলির গুনাগার দেওয়ার কথা মোদী তুলবেন কি না, তা স্পষ্ট করে এখনই জানাতে চাননি বিদেশসচিব। তিনি শুধু বলেছেন, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সংলাপ এবং কূটনৈতিক পন্থার সওয়াল করবেন মোদী। এ ব্যাপারে সহায়তা করতে যে ভারত সদা প্রস্তুত, জানাবেন সে কথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy