গত জুলাইয়ে শেষ বার মন্ত্রিসভায় বড় মাপের পরিবর্তন করেছিলেন মোদী-শাহেরা। —ফাইল চিত্র।
আগামী সোমবার গুরু পূর্ণিমা। সব ঠিকঠাক থাকলে ওই দিনই মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ঘটনাচক্রে, সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই দেখা যাবে মন্ত্রিসভার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের। মন্ত্রিসভার পরিবর্তনের পাশাপাশি, পাঁচ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপির সাংগঠনিক স্তরেও বেশ কিছু বদলের সম্ভাবনা রয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল দীর্ঘ দিন ধরেই প্রত্যাশিত ছিল। গত জুলাইয়ে শেষ বার মন্ত্রিসভায় বড় মাপের পরিবর্তন করেছিলেন মোদী-শাহেরা। বাদ পড়েছিলেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, হর্ষ বর্ধন, প্রকাশ জাভড়েকরের মতো ১২ জন মন্ত্রী। অন্তর্ভুক্ত হন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, অশ্বিনী বৈষ্ণব-সহ ১৭ জন। তার পরে আইন মন্ত্রক থেকে কিরেন রিজিজুকে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে মুক্তার আব্বাস নকভিকে সরানোর মতো ছোটখাটো রদবদল হয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে যে বড় মাপের পরিবর্তন হতে পারে, তার ইঙ্গিত কিছু দিন ধরেই দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা। সাম্প্রতিক সময়ে শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা কার্যত ধারাবাহিক ভাবে বৈঠক করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনের আগেই মন্ত্রিসভার রদবদল সেরে ফেলতে চায় সরকার। গত কাল রাতেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠকে করেন শাহ, নড্ডা ও দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। আজ সরকারের তরফে জানানো হয়, আগামী সোমবার প্রগতি ময়দানের কনভেনশন কেন্দ্রে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিথি-নক্ষত্রে বিশ্বাসী বিজেপি নেতারা গুরু পূর্ণিমার দিনটিকে তাই মন্ত্রিসভার রদবদল, নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বেছে নিয়েছেন বলে জল্পনা ছড়ায়। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দল বা সরকারের তরফে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।
সূত্রের মতে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা এবং দলীয় স্তরে কার্যত শেষ বার বড় মাপের রদবদল করার কথা ভাবছেন মোদী-শাহেরা। সূত্রের খবর, বর্তমানে বিজেপির সংগঠনে দুই শক্তিশালী নেতা হলেন ভূপেন্দ্র যাদব ও ধর্মেন্দ্র প্রধান। ওই দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে একাধিক মন্ত্রক রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর রেখে তাঁদের সংগঠনে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বিকল্প রাস্তা হিসাবে মন্ত্রকের ভার কমানোর কথা ভাবা হয়েছে। যাতে তাঁরা সংগঠনের কাজে আরও বেশি করে মন দিতে পারেন। তৃতীয় বার মোদী সরকার গঠনে সব চেয়ে বড় তাস উত্তরপ্রদেশ। তাই গো-বলয়ের বৃহত্তম রাজ্য থেকে ক্যাবিনেট ও প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে আরও ৪ নেতা মন্ত্রিপরিষদে যোগ দিতে পারেন বলে চর্চা। মন্ত্রিসভা ও সংগঠনে রদবদলের গুঞ্জনের আবহে আজ দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরের চিত্রটা ছিল মোটের উপর স্বাভাবিক। দুষ্মন্ত গৌতমের মতো সাধারণ সম্পাদকেরা দফতরে হাজির ছিলেন। তবে ইদ থাকায় অন্য দিনের তুলনায় বিজেপি দফতরে ভিড় কম ছিল।
এ ছাড়া ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান থেকে অন্তত এক-দু’জন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। জলশক্তি মন্ত্রী তথা রাজস্থানের নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে রাজ্যে ফেরানো হতে পারে। তাঁকে সংগঠনের কাজে ব্যবহার করা হবে। ওই রাজ্যে জাঠ-গুজ্জরের দ্বন্দ্ব এড়াতে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নাম উঠে এসেছে অশ্বিনী বৈষ্ণবের। রাজস্থানের রাজনীতিতে বসুন্ধরা রাজে ও শেখায়ত শিবিরের লড়াই এড়াতে ব্রাহ্মণ নেতা হিসাবে অশ্বিনীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে ভেবে রাখা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে যেমন একনাথ শিন্দের দল তেমনই বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি থেকে এক জন করে শরিক নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে মোদীর। মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন কেরলের বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা সুরেশ গোপী। জল্পনা, এ যাত্রায় মন্ত্রক হারাতে পারেন পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ পুরী-সহ বেশ কিছু মন্ত্রী। সূত্রের মতে, যে মন্ত্রীদের রিপোর্ট কার্ড দুর্বল তাঁদের সংগঠনের দায়িত্বে পাঠানোর কথা ভেবে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার মতোই সাংগঠনিক স্তরেও কিছু পরিবর্তনের কথা ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যে সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন নেই, সেখানের নেতাদের ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে আরও বেশি দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর পক্ষপাতী শীর্ষ নেতৃত্ব। সদ্য কর্নাটকে ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। ওই রাজ্যে দলের হারের জন্য কোপ পড়তে পারে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি নলিন কাটিলের উপরে। তাঁর মেয়াদ ভোটের আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। যদিও বিধানসভার কথা মাথায় রেখেই তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
এ ছাড়া গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের পুরস্কার হিসাবে সে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সি আর পাটিলের স্থান হতে পারে দলের কেন্দ্রীয় স্তরে। এ ছাড়া ভোটমুখী মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তেলেঙ্গনায় সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু পরিবর্তনের জল্পনা রয়েছে। বিধানসভায় হারের কারণে হিমাচল প্রদেশেও সাংগঠনিক স্তরে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। রদবদলের জল্পনার মধ্যেই আজ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। হিমন্ত উত্তর-পূর্বের রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। তবে লোকসভার আগে তাঁকে অসমের দায়িত্ব থেকে সরানো আদৌও ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। ছত্তীসগঢ়ে দলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের পাশাপাশি, প্রাক্তন আমলা ও পি চৌধুরীর উপরে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy