প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
মুখে তিনি বরাবরই কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’-র কথাও বলেছিলেন। কিন্তু আদতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক পরেই নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ে রাজ্যের ভাগ কাটছাঁট করার জন্য দরবার করেছিলেন। প্রথা ভেঙে অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে নিজে বৈঠক করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় মোদীকে পিছু হটতে হয়। সংসদে অবশ্য মোদী উল্টে রাজ্যের হাতে বেশি অর্থ তুলে দেওয়ার কৃতিত্ব নিয়েছিলেন।
সে সময় প্রধানমন্ত্রী দফতরের যুগ্ম-সচিব, বর্তমানে নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম নিজেই সম্প্রতি একটি আলোচনা সভায় এ কথা জানিয়েছেন। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে আজ কংগ্রেস মোদীকে কাঠগড়ায় তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘‘সাংবিধানিক সংস্থার অসম্মান, অতিরিক্ত কেন্দ্রীয়করণ, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফেলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মানসিকতা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।’’
কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে করের ভাগ কী হবে, তা অর্থ কমিশন ঠিক করে থাকে। অর্থাৎ কর বাবদ কেন্দ্রের ১০০ টাকা আয় হলে তার মধ্যে কত টাকা রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে, তা এই কমিশন ঠিক করে দেয়। সম্প্রতি যেমন ষষ্ঠদশ অর্থ কমিশন গঠন করা হয়েছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশন তৈরি হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে সময় কেন্দ্রীয় করের ৩২ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদী কমিশনের কাছে দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক। ২০১৪-য় মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় করের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী চাইছিলেন, রাজ্যগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় করের মাত্র ৩৩ শতাংশ ভাগ করে দেওয়া হোক।
সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী মোদী সরকার অর্থ কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করতে পারে বা খারিজ করে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে পারে। তা নিয়ে দর কষাকষি করতে পারে না। সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, মোদী সেই প্রথা ভেঙে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ওয়াই ভি রেড্ডির সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন। তাঁর সুপারিশ বদলে রাজ্যের ভাগ কমিয়ে দেওয়ার জন্য দরবারও করেন।
সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, মোদী ও রেড্ডি ছাড়া প্রধানমন্ত্রী দফতরের যুগ্ম-সচিব হিসেবে একমাত্র তিনি ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন। সেখানে অর্থ মন্ত্রকের কোনও ব্যক্তি ছিলেন না। অনড় রেড্ডি সুব্রহ্মণ্যমকে জানিয়ে দেন, তিনি যেন তাঁর বসকে বলে দেন, কমিশনের সুপারিশ মানা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কেন্দ্রের কর বাবদ আয় কমে যাওয়ায় ২০১৫-র বাজেটের দু’দিন আগে সমস্ত বাজেটের হিসেবনিকেশ বদলাতে হয়। অর্থ কমিশনের সুপারিশ এত দেরিতে মেনে নেওয়া হয় যে, দু’দিনে বাজেট লেখা হয়। সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে চার জন অফিসার মিলে নীতি আয়োগে বসে দু’দিনে গোটা বাজেট নতুন করে লেখেন। সামাজিক কল্যাণ থেকে রাজ্যের বিষয়ে আর্থিক বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় দাঁড়িয়ে বড়াই করে বলেছিলেন, রাজ্যের হাত শক্ত করতে তিনি কেন্দ্রীয় করের ৪২ শতাংশ রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থ কমিশনের অন্দরে এ নিয়ে বিবাদ থাকলেও কেন্দ্র তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেনি। এখন রাজ্যকে এত টাকা দেওয়া হচ্ছে যে অনেক রাজ্যের এত বড় সিন্দুকই নেই!
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই নীতি আয়োগের সিইও-র ওই বক্তৃতা ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাজেটের অস্বচ্ছতা নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা নীতি আয়োগের সিইও-র খবর অসত্য বলে দাবি করা হয়নি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ অর্থ কেটে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, রাজ্যগুলিকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন, সাধারণ মানুষের উপরে তার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। কারণ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা থেকে স্কুল শিক্ষা, সব ক্ষেত্রেই রাজ্যকে খরচ সামলাতে হয়। জিএসটি চালুর পরে রাজ্যের নিজস্ব আয়ের উৎস কমেছে। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় করের ভাগ থেকেও রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy