প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। ফাইল চিত্র।
সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার পরে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু নরেন্দ্র মোদীকে ‘পরামর্শ’ দিলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত সব রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে দেখা করা। তা হলে প্রধানমন্ত্রী কাজের পদ্ধতি নিয়ে বিরোধী দলগুলির মধ্যে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ রয়েছে, তা কিছুটা দূর হতে পারে বলে নায়ডুর মত।
২০১৯-এ দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর সঙ্গে ‘সবকা বিশ্বাস’-এর স্লোগান তুলেছিলেন। আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ নামে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা সঙ্কলনের প্রকাশ অনুষ্ঠানেই নায়ডু এই মন্তব্য করেছেন। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, সরসঙ্ঘচালক যে ভাবে ‘সামাজিক সেতুবন্ধন’-এর চেষ্টা করছেন, ঠিক একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক সেতুবন্ধন’-এর পরামর্শ দিয়েছেন নায়ডু। বিরোধী শিবিরের অবশ্য অভিযোগ, মোহন ভাগবত বা নরেন্দ্র মোদী কেউই সেতুবন্ধনে বিশ্বাসী নন। তাঁরা বিভাজন ও ভেদাভেদেই বিশ্বাসী। মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভাগবতের বৈঠক পুরোটাই ‘দেখনদারি’। ভাগবত যখন মুসলিমদের সঙ্গে দেখা করছেন, তখন তাঁর গেরুয়া শিবিরই কাশী-মথুরায় মসজিদের জায়গায় মন্দিরের দাবি তুলছে।
কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি-আরএসএসের এই বিভাজন নীতিকে নিশানা করেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরু হয়েছে। তার চাপেই মোহন ভাগবত প্রথমে মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে মসজিদ-মাদ্রাসায় গিয়ে ইমামদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘এখন তো মোহন ভাগবত জীবনে প্রথম বার মসজিদ ও মাদ্রাসায় গিয়েছেন। ভারত জোড়ো যাত্রা আরও এগোলে নরেন্দ্র মোদী হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই বলে স্লোগান দেবেন।’’
ভাগবত বৃহস্পতিবার সর্বভারতীয় ইমাম সংগঠনের প্রধান ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসির সঙ্গে বৈঠক করেন। সংগঠনের দফতরের লাগোয়া মসজিদ ঘুরে পুরনো দিল্লির একটি মাদ্রাসাতেও যান। গত মাসে তিনি মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ভাগবত উলেমাদের সঙ্গে দেখা করে, তাঁদের দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপিতা, রাষ্ট্রঋষি বলানোর পরে কি বিজেপি ও তার সরকারের মুসলিম সমাজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবে বদল হবে? মুসলিমদের মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতি মনোভাব বদলাবে?’’ মায়াবতীর অভিযোগ, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সরকার খোলা জায়গায় কয়েক মিনিটের জন্য একান্তে নমাজ পাঠও সহ্য করতে পারছে না। সরকারি মাদ্রাসাগুলোকে উপেক্ষা করে বেসরকারি মাদ্রাসায় হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু আরএসএস প্রধানের এ বিষয়ে নীরবতার কী অর্থ হয়, তা-ও ভাবুন।’’
কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী ২০১৯-এ সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অর্জনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সিএএ থেকে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকারের কাজে তার উল্টো ছবিই দেখা গিয়েছে। এখন মুসলিম সমাজের নিজেদের বাছাই করা লোকেদের কাছে গিয়ে সেতুবন্ধনের প্রচার করছেন। বাস্তবে ইমাম সংগঠন প্রধান ইলিয়াসি ও তাঁর পরিবার অনেক দিন ধরেই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ।
বিরোধীদের অভিযোগের মুখে আজ কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান মোদীর বক্তৃতার সঙ্কলন প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুসলিম সমাজের জন্য কাজের প্রশংসা করেছেন। তিন তালাককে আইনত নিষেধাজ্ঞা জারির তারিফ করেছেন, তাঁর যুক্তি, জওহরলাল নেহরুরও আফশোস ছিল যে তিনি মুসলিম মহিলাদের সমস্যা সমাধানে কিছু করতে পারেননি। আরিফ বলেন, ‘‘নেহরু মুসলিম মহিলাদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। মোদী সেই সাহস দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে আমরা এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy