প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
তিনি যে সংবিধান বিরোধী নন, তা প্রমাণ করতে নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়ে ‘গণউৎসব’ করে সংবিধানের ৭৫-তম বর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত আজ ঘোষণা করলেন।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র ছিল, মোদী সংবিধান বদলে দিতে চান। তাই তিনি লোকসভায় ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্য রেখেছেন। তার খেসারতও দিতে হয়েছে বিজেপিকে। বিজেপির লোকসভায় আসন সংখ্যা গত বারের ৩০৩টি থেকে কমে ২৪০-এ নেমে এসেছে।
সংবিধান নিয়ে বিরোধীদের এই দোষারোপের পালাবদলের চেষ্টায় আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন, দেশের মানুষ তাঁকেই ভোট দিয়ে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি আজ কংগ্রেসকেই ‘সংবিধান-বিরোধী’ ও ‘দলিত-বিরোধী’ বলে কাঠগড়ায় তুলেছেন। রাহুল গান্ধী দাবি করেছিলেন, এ বারের ভোট ছিল সংবিধান রক্ষার লড়াই। সংবিধান রক্ষা করতেই মানুষ বিরোধীদের বেশি আসনে জিতিয়ে পাঠিয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার পরে ১৯৭৭ সালের ভোট সংবিধান রক্ষার লড়াই ছিল।...আর এ বারের ভোট যদি সংবিধান রক্ষার ভোট হয়ে থাকে, তা হলে দেশের মানুষ সংবিধান রক্ষার জন্য আমাদের যোগ্য মনে করেছেন। ...সংবিধানের ৭৫-তম বছর দেশ জুড়ে ‘গণউৎসব’ হবে। ’’
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে কংগ্রেসের শরিক দলগুলিকে আজ প্রধানমন্ত্রী ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে দোষারোপ করেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বিরোধীরা একজোট হয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের জেলে পোরার বিরুদ্ধে সংসদে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত আইনের হাত থেকে ছাড় পাবে না। এটাই মোদীর গ্যারান্টি।’’
লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের শক্তি বাড়ায় রাহুল দাবি করেছিলেন, সংবিধানে রক্ষা করতেই মানুষ বিরোধীদের বেশি আসনে জিতিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। লোকসভায় মোদীর শপথগ্রহণের সময়ে সংবিধান তুলেও দেখিয়েছিলেন রাহুল। আজ মোদীর দাবি, তিনিই ২৯ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে কংগ্রেস এর বিরোধিতা করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সংবিধান তাঁর কাছে অনুচ্ছেদের সঙ্কলন নয়। পথ দেখানোর ‘লাইটহাউস’। কিন্তু কংগ্রেস জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানকেই আক্রমণ করেছে। সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, ইউপিএ জমানায় ‘রিমোট-কন্ট্রোল’-এ সরকার চালানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কপি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আপত্তি তুলে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বারবার বলার পরেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় সুযোগ না দেওয়ায় কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবির একসঙ্গে ‘ওয়াকআউট’ করেছে। তার আগে বিজু জনতা দলও ওয়াক-আউট করে। খড়্গে পরে অভিযোগ তোলেন, আরএসএস, জনসঙ্ঘ, বিজেপিই বরাবর সংবিধানের বিরোধিতা করে এসেছে। এখন ভোটে ধাক্কা খেয়ে মোদী সংবিধান-দরদী সাজছেন।
মোদী আজ কংগ্রেসকে, বিশেষ করে গান্ধী পরিবারকে দলিত বিরোধী হিসেবেও প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, পরপর তিন বার কংগ্রেস লোকসভা ভোটে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সেই ব্যর্থতার দায় কংগ্রেস সভাপতি দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘাড়ে চাপবে। যাঁর ব্যর্থতা, তাঁকে আড়াল করা হবে। মোদীর ইঙ্গিত ছিল রাহুলের দিকে। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি স্পিকার নির্বাচন, তার আগে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ২০১৭-র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনেও যথাক্রমে কে সুরেশ, সুশীল কুমার শিন্দে ও মীরা কুমারের মতো দলিত নেতানেত্রীদের গান্ধী পরিবার ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিল।
বিরোধী জোটে ফাটল ধরাতে মোদী লোকসভাতেই বলেছিলেন, কংগ্রেস পরজীবীর মতো, আঞ্চলিক দলের ভোটে ভর করে ৯৯টি আসনে পৌঁছেছে। জরুরি অবস্থার সময়ে কংগ্রেস আঞ্চলিক দলের নেতাদেরই জেলে পুরেছিল। এখন সবাই মিলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু ইউপিএ জমানায় মুলায়ম সিংহ যাদব, প্রকাশ কারাটরা অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেস সিবিআই, আয়কর দফতরকে কাজে লাগিয়ে শরিকদের চাপ দেয়। কংগ্রেসই আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেছিল। এখন আম আদমি পার্টির নেতা গ্রেফতার হলে কংগ্রেস মোদীকে দোষ দিচ্ছে। সংসদে বামেরা কংগ্রেসের শরিক হলেও ‘শাহজাদা’ কেরলের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। মোদীর দাবি, ‘‘তদন্তকারী সংস্থাদের দুর্নীতি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। সরকার নাক গলাবে না। আমার শুধু বলার, সংস্থাগুলি সততার সঙ্গে, সততার জন্য কাজ করুক।’’ নিজের জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিজেপিকে এ বার দুই শরিক দলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই জয়রাম রমেশের মতো কংগ্রেস নেতারা মোদী সরকারকে এক-তৃতীয়াংশ সরকার বলে কটাক্ষ করেছিলেন। আজ মোদী জবাবে বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতাদের মুখে ‘ঘি-চিনি’ পড়ুক। আরও বিশ বছর সরকার থাকবে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র দূরীকরণে দিশানির্দেশকারী সিদ্ধান্ত দেখা যাবে। গত দশ বছরে দেশের মানুষ ‘অ্যাপেটাইজ়ার’ চেখে দেখেছেন। ‘মেন কোর্স’ এ বার আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy